অনলাইন ডেস্ক
সরকার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ব্রডব্যান্ড লাইনের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। উচ্চগতির নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি বাড়াতে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো-সরকার তৃতীয় পর্যায়, তৃতীয় সংশোধিত) শীর্ষক একটি প্রকল্প নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে গ্রাম-শহরের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে বিদ্যমান বৈষম্য হ্রাস পাবে। এর ফলে দেশের ১০ কোটি প্রান্তিক মানূষ উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মূলত চারটি উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে-
ক. ৬৩ জেলার (মেহেরপুর জেলা বাদে) ৪৮৮টি উপজেলার ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে উচ্চগতির ক্ষমতাসম্পন্ন নেটওয়ার্ক অবকাঠামো স্থাপন করা।
খ. বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে এক হাজার অফিসের মধ্যে একটি ভারচুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ( ভিপিএন) সংযোগ স্থাপন করা।
গ. বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য ই-সেবা নিশ্চিতকরণ, আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ৬০ শতাংশ জনগণের ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
ঘ. তৃণমূল পর্যায়ের সরকারি অফিস এবং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংযোগ স্থাপনের জন্য ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) এর সক্ষমতা বাড়ানো, শহর এবং গ্রামের ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মোট ২ হাজার ১৪১ কোটি ৪২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে চলতি ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাওয়া ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি তৃতীয় সংশোধনী প্রকল্প। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৯১৪ কোটি টাকা। এর বাইরে প্রকল্প ঋণ বাবদ ১ হাজার ২২৭ কোটি ৪১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা দেবে চায়না এক্সিম ব্যাংক। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নেওয়া প্রথম সংশোধনী প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারতি ছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি ৪৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রথমবার ব্যয় না বাড়ানো ব্যতিরেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩০ জুন। কিন্তু বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের ৩০ জুন।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতায় কম্পিউটার যন্ত্রপাতি কেনা হবে। নেটওয়ার্ক এবং ডিজাইনসহ সার্ভে কার্য সম্পাদন হবে। পরামর্শকের ব্যয় নির্বাহ করা হবে। এ ছাড়াও প্রকল্পে কর্মরতদের বেতন ভাতাও এ বরাদ্দ থেকে ব্যয় করা হবে।
সূত্র জানিায়, দেশের ৬৩টি জেলার ৪৮৮টি উপজেলার ২৬০০টি ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ পুলিশের ১০০০টি অফিসব্যাপী প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পে নতুন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তকরণ, পূর্বানুমোদন গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধন এবং প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কারণে প্রকল্পটির তৃতীয়বারের মতো সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিবি) এক লাখ টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
জানা গেছে, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারিত আছে। এ লক্ষ্য অর্জনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের ১০ কোটি প্রান্তিক জনগণ উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাবে। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ই-সার্ভিস প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে। আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের সরকারি অফিস এবং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংযোগ স্থাপনের জন্য ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) এর সক্ষমতা বাড়বে এবং শহর এবং গ্রামের ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণ হবে।’ প্রকল্পটি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করবে বলেও মনে করেন তিনি।
Discussion about this post