অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকলে রোজকার জীবনে কিছু শব্দ নিত্যই শোনা যেতে লাগল। যেগুলোর একটি—ভেন্টিলেটর। ভেন্টিলেটর হচ্ছে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা। স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে না, তখন এই যন্ত্রের সাহায্যে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে অতিব জরুরি যন্ত্রটির প্রচলনের সুনর্দিষ্ট দিনক্ষণ না জানা গেলেও কিছু ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। একসময় কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার জন্য যাঁতার মতো যন্ত্রের ব্যবহার ছিল। অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগে রয়্যাল হিউম্যান সোসাইটি অব ইংল্যান্ড একে স্বীকৃতি দেয়। যদিও এই যাঁতা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল না, কিন্তু ভেন্টিলেটরের মূল কাজ অর্থাৎ শ্বাসতন্ত্রে বাতাস পৌঁছে দেওয়ার কাজটা এগুলো ভালোই করতে পারত।
১৮৩২ সালে স্কটিশ চিকিৎসক জন ডালজিয়েল শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা সমাধানে একধরনের নেগেটিভ-প্রেশার ভেন্টিলেটর তৈরি করেন। একটি বাক্সে রোগীর মাথা ছাড়া পুরো শরীর ঢুকিয়ে বাক্সের বায়ুর চাপ কমানো ছিল এই ভেন্টিলেটরের মূল কাজ।
আধুনিক ভেন্টিলেটরের প্রাথমিক রূপগুলোর একটি ছিল পালমোটর। ১৯০৭ সালে জার্মান উদ্ভাবক জোহান হেইনরিক ড্রাগার এবং তাঁর ছেলে বার্নহার্ডের তৈরি এই যন্ত্র একটি ফেসমাস্কের সাহায্যে শ্বাসতন্ত্রে নির্দিষ্ট চাপে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে পারত। রিদমিক ইনফ্লেশন অ্যাপারাটাস নামে এমন আরেকটি যন্ত্র কাছাকাছি সময়ে উদ্ভাবিত হয়েছিল।
শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কারণে ছেলের মৃত্যুর পর টেলিফোনের উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ‘ভ্যাক্যুয়াম জ্যাকেট’ নামে একধরনের কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রের নকশা করেছিলেন বলে জানা যায়।
১৯২০–এর দশকে আয়রন লাং নামে একধরনের নেগেটিভ প্রেশার ভেন্টিলেটরের খুব চল ছিল। বিশেষ করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এই যন্ত্রটি। যন্ত্রটি ফুসফুসের মধ্যে বায়ু প্রবাহিত করতে পারত।
মার্কিন সেনাবাহিনীর বৈমানিক ফরেস্ট বার্ড ১৯৫৮ সালে বার্ড মার্ক ৭ রেস্পিরেটর নামক একধরনের ভেন্টিলেটর আবিষ্কার করেন। অনেকে এটিকে প্রথম আধুনিক ভেন্টিলেটর হিসেবে দাবি করে থাকে। ১৯৭০–এর দশক থেকে চিকিৎসাক্ষেত্রের আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে ভেন্টিলেটরেরও আধুনিকায়ন ঘটে।
টাইম ম্যাগাজিন অবলম্বনে
আকিব মো. সাতিল
Discussion about this post