জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ বাস্তবায়ন ও বিস্তরণের লক্ষে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে সারাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে পাঠদান শুরু হয়েছে। সেই লক্ষে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকের জন্য মুক্তপাঠ হতে অনলাইন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার ।যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয় সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও এই প্রশিক্ষণ করতে আদেশ জারি হয়। কারণ এই প্রশিক্ষণ ছাড়া সরাসরি কোন প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া যাবে না বলে জানানো হয়।১৫ ডিসেম্বর২০২২ শেষ হয় এই প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ শেষে সনদ প্রদান করা হয় প্রত্যেককে। আর এরপর বিষয়ভিত্তিক বিস্তরণের জন্য শুরু হয় অপর একটি বিষয়ভিত্তিক ফেস টু ফেস ই লার্ণিং প্রশিক্ষণ।
ইতোমধ্যে নুতন এই শিক্ষাক্রম শিক্ষাসচেতন মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং অধিকাংশজনই এর সুফলের প্রতীক্ষায় রয়েছেন।কিন্তু এ ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেই এমন হাজারো বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই প্রশিক্ষণের আওতার বাহিরে থেকে গেছে! অথচ ব্যক্তি মালিকানাধীন এধরণের স্কুলগুলোতে লাখো শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। বাংলাদেশে শিক্ষার প্রসারে এই স্কুলগুলো বিশেষ অবদান রেখে চলেছে।
তাই সরকারের এই উন্নয়ন কার্যক্রমের সাথে সংহতি প্রকাশ করে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির উদ্যেগে গত ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ইং শুক্রবার থেকে ৪ দিনব্যাপী ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সেক্রেটারি মোঃ আলতাফ হোসেনের সঞ্চালনায় ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক হাবিব রহমত উল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম. ইকবাল বাহার চৌধুরী। এই উদ্যোগকে যুগান্তকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকশিক্ষিকাবৃন্দ।
চট্টগ্রাম বিভাগের সেক্রেটারি মোঃ আলতাফ হোসেন জানান, এতে প্রথম দিন গণিত বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের সিনিয়র গণিত শিক্ষক ও মাউশি’র গণিত বিষয়ের মাস্টার ট্রেইনার মোঃ মিজানুর রহমান এবং পূর্ব মাদারবাড়ী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী গণিত শিক্ষক ও মাউশি’র গণিত বিষয়ের মাস্টার ট্রেইনার মোহাম্মদ সরওয়ার আলম। সকাল ৯ টায় শুরু হয়ে বিকাল ৫.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় ৩০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণিত শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
দ্বিতীয় দিন ২৮ জানুয়ারি, শনিবার সকাল ৯ টায় শুরু হয়ে বিকাল ৫.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত ইংরেজী বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ডাঃ খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র ইংরেজি শিক্ষক ও মাউশি’র ইংরেজী বিষয়ের মাস্টার ট্রেইনার নুরুল কাদের সিকদার ও জামাল খান কুসুমকুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী ইংরেজি শিক্ষক ও মাউশি’র ইংরেজী বিষয়ের মাস্টার ট্রেইনার লুৎফুন্নিছা খানম।
৩ ফেব্রুয়ারি,বিজ্ঞান বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেন সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ চট্টগ্রাম’র পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও মাউশি’র বিজ্ঞান বিষয়ের মাস্টার ট্রেইনার মিসেস নাজমুন নাহার ও সরাইপড়া সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র বিজ্ঞান শিক্ষক ও মাউশি’র বিজ্ঞান বিষয়ের মাস্টার ট্রেইনার মোঃ আবদুর রহিম।
৪ ফেব্রুয়ারি, বাংলা বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেন সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ চট্টগ্রাম’র বাংলা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক ও মাউশি’র বাংলা বিষয়ের মাস্টার ট্রেইনার মোঃ রফিকুল ইসলাম মহসিন ও নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় চট্টগ্রাম’র বাংলা বিষয়ের সিনিয়র বাংলা শিক্ষক ও মাউশি’র বাংলা বিষয়ের মাস্টার ট্রেইনার মোঃ ইকবাল আজম চৌধুরী।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক হাবিব রহমত উল্লাহ বলেন, সর্ব প্রথম চট্টগ্রামে এই ঐতিহাসিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমরা । চার দিনের এই সফল প্রশিক্ষণে বিপুল সংখ্যক শিক্ষকশিক্ষিকার অংশগ্রহণ আমাদের এই উদ্যোগের অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছে। আপনারা অবগত আছেন শিক্ষাসচেতন অভিভাবকমহল নিবিড় পরিচর্যার কারণে সরকারী স্কুলে সুযোগ না পেলেই তাদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে ভর্তি করান। সারা দেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো প্রায় দেড় কোটি শিশুকে আধুনিক শিক্ষা প্রদান করছে।তাই জাতীয়পর্যায়ে শিক্ষায় অবদানকারী এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ কোনমতেই সরকারী প্রশিক্ষণের বাহিরে থাকতে পারেনা।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী এ প্রসংগে বলেন, সরকার সারা দেশে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ বাস্তবায়নে সকল সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত, এমপিও ভুক্ত ও পাঠদানের অনুমতি প্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের সকল শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় আনলেও বাংলাদেশের ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের শিক্ষকদের বিশাল একটি অংশকে প্রশিক্ষণের বাইরে রেখেছেন। সরকারের এ শিক্ষাক্রমকে বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে ও অর্থায়নে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদ সারা দেশব্যাপী বাদপড়া শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির পক্ষ থেকে পাইলটিং হিসেবে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হলো।
তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি দ্বিতীয় ধাপে সরকারী বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে সারাদেশের লাখ লাখ ছেলেমেয়ের শিক্ষাভার বহনকারী ব্যক্তি মালিকানাধীন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের শিক্ষকবৃন্দকেও যেন এই প্রশিক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
শিক্ষার এই বিশাল অংশকে প্রশিক্ষণের বাহিরে রেখে কখনো সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ শতভাগ সফল হবেনা বলেও মন্তব্য করেন এই শিক্ষক নেতা।
Discussion about this post