বিশেষ প্রতিবেদক
বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারির মহান ভাষা শহীদগণকে স্মরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নগরীর পূর্ণাংগ ডিজিটাল স্কুল খ্যাত সাউথ এশিয়ান স্কুল । সকালে প্রভাত ফেরীতে অংশগ্রহণ করেন স্কুলের শিক্ষকগণ ও ছাত্রছাত্রীরা। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী- অমর এই গানের তালে সারিবদ্ধ শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম কলেজের শহীদ মিনারে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন।
এরপর শুরু হয় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা । প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চারটি বিভাগে ছাত্রছাত্রীরা রংতুলিতে মেলে ধরে মহান একুশের গৌরব গাঁথা । চিত্রাংকন শেষে প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ লকিতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আবু বকর সিদ্দিক (এফসিএমএ), বিশেষ অতিথি ছিলেন কোতোয়ালী থানার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজর কমরুন্নিছা খানম এবং সাংবাদিক এস, এম, পারভেজ এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সালেহউদ্দিন ।
আলোচনার শুরুতে পবিত্র কোরআন পাঠের পর তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আফিফার পরিবেশনায় কবি আল মাহমুদের ‘একুশের কবিতা’ এবং শিক্ষিকা মৌসুমী করের কন্ঠে দেশাত্নবোধক গান সবাইকে মুগ্ধ করে।
স্বাগত ভাষণে সহকারী প্রধান শিক্ষক জনাব সালেহ উদ্দিন ১৯৫২ সালের ভাষা শহিদগণের ত্যাগের কথা ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা বাঙালী, তাই যে ভাষাতেই কথা বলিনা কেন আগে তা আমাদের মস্তিষ্কে বাংলাতে অনুবাদ হয়। তারপর আমরা তা বলি। কোন বিদেশী ভাষা বুঝতে হলেও তা মনে মনে বাংলা ভাষাতেই অনুভূত হয় এবং আমরা তা বুঝতে পারি। অতএব নিজের ভাষা মাতৃভাষা আমাদের অস্তিত্বের সাথে একাকার হয়ে আছে। এভাষাকে শুদ্ধভাবে বলতে হবে এবং শিখতে হবে।আগামী প্রজন্মের শিশুরাই বাংলার মর্যাদাকে বিশ্বের দরবারে আরও সম্মানিত করবে।
বিশেষ অতিথি সাংবাদিক এস, এম, পারভেজ উপস্থিত শিশুকিশোরদের সামনে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে শহীদ শিশু অহিউল্লার কাহিনী তুলে ধরেন। ২২ ফেব্রুয়ারী ভাষা শহীদদের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় যে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিলো, সেই মিছিলের অগ্রভাগে প্রতিবাদী অহিউল্লার মাথা শাসকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেয়া সেনাদের গুলিতে উড়ে যায়। একুশে ফেব্রুয়ারীর ইতিহাসে চতুর্থ শ্রেণির একজন ছাত্রের জীবন দানের ঘটনা শুনে এবং তার ছবি প্রথমবার দেখে উপস্থিত শিশুরা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে।
শিক্ষক কাজী ইউসুফ শিক্ষার্থীদের সামনে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, পাকিস্তানি সরকার মায়ের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নিয়ে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলো উর্দু। কিন্তু বীর বাঙালি তা মেনে না নেয়নি। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষায় রাজপথে নেমেছিলেন ছাত্রছাত্রী ও অজস্র তরুণ। তাঁরা প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনেন প্রাণের মাতৃভাষা বাংলা। প্রতিষ্ঠিত করে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। তাই দিনটি যেমন গৌরবের ও অহংকারের, তেমনি শোকেরও। তাই হিন্দি ও ইংরেজী সংস্কৃতির গান, নাচ ইত্যাদি পরিহার করে বাংলায় গান গাওয়ার আহ্বান জানান শিশুকিশোরদের।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ লকিতুল্লাহ বলেন, ’৫২, ’৬৯ এবং ’৭১ যুগে যুগে আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় আসীন। একুশের চেতনার পতাকা হাতে নিয়ে তাই আজকের শিশুদের এগিয়ে যেতে হবে। বাংলা ভাষাকে শুদ্ধভাবে চর্চা করার মাধ্যমেই কেবল মাতৃভাষাকে মর্যাদা দেয়া সম্ভব।প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে আমরা সকলে কাজ করে যাই, ‘অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি ও মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে’ এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক ইফরাত জাহান মুনা এবং মাওলানা শরীফুল ইসলাম ।
সভাশেষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানের সার্বিক সমন্বয়ে ছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সালেহউদ্দিন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন শিক্ষিকা শামীমা নাসরীন।
Discussion about this post