হাফেজ মাওলানা আব্দুল গফুর
শুরু হয়েছে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এই মাসের প্রধান দুইটি আমল হলো সিয়াম ও কিয়াম। সিয়াম বা রোজা হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সব বিষয় থেকে বেঁচে থাকা।
কিয়াম হলো রাতের তারাবির নামাজ। তারাবিহ শব্দটি আরবি তারভিহাতুন থেকে এসেছে। এর অর্থ বিশ্রাম করা, প্রশান্তি লাভ করা।
তারাবি নামাজে যেহেতু প্রতি চার রাকাত পরপর একটু বিশ্রাম নিয়ে তাসবিহ ও দোয়া পাঠ করা হয়। তাই এই নামাজকে সালাতুত তারাবিহ বা তারাবি নামাজ বলা হয়। তারাবির নামাজ এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর এবং বিতিরের আগে আদায় করা হয়। তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। যেটা গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের কাছাকাছি।
তারাবির ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকীর আশায় কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবেন তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসুল (সা:) তারাবি কে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তারাবি যেন ফরজ না হয়ে যায় যেটা আদায়ে উম্মতের কষ্ট হতে পারে। সেটা রাসূল (সা:) এর একটি হাদিসে থেকেই বোঝা যায়।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) একবার রমজান মাসে রাত্রিবেলায় মসজিদে নববীতে নামাজ (তারাবি) আদায় করলেন। উপস্থিত লোকজনও তাঁর সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। একইভাবে তাঁরা দ্বিতীয় দিনেও নামাজ আদায় করলেন এবং লোকসংখ্যা অনেক বেশি হলো। অতঃপর তৃতীয় এবং চতুর্থ দিনেও মানুষ একত্রিত হলো কিন্তু রাসুলুল্লাহ (স.) হুজরা থেকে বেরিয়ে তাদের কাছে এলেন না। অতঃপর সকাল হলে তিনি এলেন এবং বললেন, তোমাদের অপেক্ষা করার বিষয়টি আমি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু শুধু এ ভয়ে আমি তোমাদের কাছে আসা থেকে বিরত থেকেছি যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিলো, না জানি তোমাদের ওপর উহা (তারাবি) ফরজ করে দেওয়া হয়। (বুখারী) তারাবি ২০ রাকাত সুন্নাত। এটা রাসুল (সা:), সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং মুজতাহিদ ইমামদের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা:) রমজান মাসে ২০ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা) সব সাহাবীদের আমল ও ২০ রাকাত ছিল। রাসূল (সা:) এর নাতি হজরত আলী ইবনে হাসান (রা:) থেকে বর্ণিত, হজরত ওমর (রা:) এর নির্দেশে লোকদের নিয়ে উবাই বিন কাব (রা:) ২০ রাকাত তারাবি পড়েছেন। (আবু দাউদ) এভাবে খলিফা ওমর, ওসমান, আলীসহ (রা:) সব সাহাবীদের ঐক্যমতে ২০ তারাবি পড়া হয়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ:) বলেন, মক্কা ও মদিনা শরীফে সাহাবায়ে কেরামের যুগ হতে আজ পর্যন্ত সবসময় ২০ রাকাত তারাবি খতমে কোরআনসহ জামাতের সঙ্গে পড়া হয়। তারাবি নামাজে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত বা শ্রবণ করা ও সুন্নত।
রাসূল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করবে সে একটি নেকী অর্জন করবে এবং একটি নেকীকে দশগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। (তিরমিজি) কোরআনে কারীম তেলাওয়াতের নেয় শ্রবণ করাও একই সওয়াব। এজন্য তারাবি নামাজে পরিপূর্ণ আদবের সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে হবে।
২০ রাকাত না পড়ে ইমামকে রেখে মসজিদ ত্যাগ করা উচিত নয়। রাসুল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত সিয়াম পালনের সওয়াব লাভ হবে। (তিরমিজি)
করোনায় সবকিছু থমকে গেছে। সংক্রমণ এড়াতে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়সহ অনেক কিছুতে বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তারাবির নামাজে সর্বোচ্চ ১২ জন অংশ নিতে পারবে বলে নির্দেশনা দেয় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর কারণে মুসল্লিরা নিজ নিজ ঘরে এশা ও তারাবির নামাজ আদায় করছেন। সবাই ব্যক্তিগতভাবে তেলাওয়াত, জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত ও বিপদ মুক্তির প্রার্থনা করছেন।
মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলত পূর্ণ আমল তারাবির নামাজে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। আসুন আমরা যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।
লেখক: ইমাম ওখতিব, মজিদিয়া খানজাহান নগর জামে মসজিদ, খুলনা
Discussion about this post