অনলাইন ডেস্ক
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. তোফায়েল আহমদ সনি গত ২৩ দিনে (১ মে পর্যন্ত) করোনা সন্দেহে ৫২ জনের নুমনা সংগ্রহ করেছেন। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে প্রথম দিকে সবার খুব বেশি ধারণা ছিল না। আবার ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব টেকনিশিয়ানদের অনেকেই বৃদ্ধ এবং ডায়াবেটিকস থাকায় তাদের নতুনা সংগ্রহ করতে যাওয়া ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে চীনের উহান ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডাক্তারদের অভিজ্ঞতা ও ভিডিও দেখে শিক্ষা নেন সনি। নেমে পড়েন সন্দেহভাজন ব্যক্তির নমুনা অর্থাৎ মুখের লালা ও নাকের সোয়াব সংগ্রহে।
ডা. তোফায়েল আহমদ সনি বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্নশিপ করার সময় নিজেকে এই পরিস্থিতিতে ঘরে বন্দি করতে চাইনি। ইন্টারনেট ও ইউটিউবে চীনের উহানের প্রশিক্ষিত প্যাথলজিস্টদের কাজ দেখেছি। কিভাবে তারা কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহ করে। পুরো ১০ দিন চীনের প্যাথলজিস্টদের নমুনা সংগ্রহের ভিডিও দেখে সঠিক ধারণা পেয়েছি। মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্নশিপ করার সময় পাওয়া জ্ঞান ও চীনা প্যাথলজিস্টের নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া সফলভাবে কাজে লাগিয়েছি। শুরুর দিকে ছাতক শহরের বাগবাড়ি আবাসিক এলাকার সন্দেহভাজন একজনের নমুনা সংগ্রহ করি। এই কাজে সহযোগিতা করেন স্বপন কুমার রায় এমটি ইপিআই।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন ডাক্তারের কখনো রোগকে ভয় পাওয়া উচিত নয়। সব কিছু জেনে বুঝে আমরা এই পেশায় এসেছি। দেশের ক্রান্তিকালে দেশবাসীকে সেবা দেওয়ার মানবিক মূল্যবোধ এবং পেশাগত দায়িত্ব।’
ডা. সনিকে নমুনা সংগ্রহে সহযোগিতা করা স্বাস্থ্যকর্মী স্বপন কুমার রায় ও কামরুল ইসলাম জানান, সন্দেহভাজনদের নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে চারটি বিষয় প্রধান্য দেই। প্রথমত করোনাভাইরাসের উপসর্গ সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট। দ্বিতীয়ত ১৪ দিনের মধ্যে করোনা পজিটিভ কারও সঙ্গে দেখা হয়েছে কিনা। তৃতীয়ত করোনার রেড জোন এলাকা থেকে কেউ আসলে। চতুর্থ হাসপাতালে কাজ করেন বা হাসপাতালে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। ঢাকা, নরসিংদী, ময়নসিংহ, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, সাভার এলাকা থেকে আসা সন্দেহভাজনদেরও নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
কালারুকা গ্রামের নবী নূর বলেন, ‘সবাই যখন করোনাভাইরাসকে ভয় পেয়ে পালাচ্ছে তখন ডাক্তার সনি ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজে এগিয়ে এসেছেন।’
ছাতকের বাগবাড়ি এলাকার তরুণ ফয়সল আহমদ বলেন, ‘সাধারণত সন্দেহ ভাজনদের নমুনা সংগ্রহ একজন টেকনিশিয়ান করে। কোনও ডাক্তার সরাসরি সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করেন না। অথচ ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ভয়ভীতি ছাড়া স্বেচ্ছায় নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন।’
ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজীব চক্রবর্তী বলেন, ‘ডাক্তাররা সরাসরি সন্দেহভাজনদের কাছ থেকে সাধারণত নমুনা সংগ্রহ করেন না। একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি নমুনা সংগ্রহের কাজে সার্বিক তত্ত্বাবধান করার কথা। সনি স্বপ্রণোদিত হয়ে সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করছেন। তিনি একজন নিবেদিত চিকিৎসক।’
এই ব্যাপারে ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম কবির বলেন, ‘সব ভয়ভীতি কাটিয়ে তিনি যেভাবে নমুনা সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছেন, তা প্রশংসনীয়। এ ছাড়াও অনেকেই আছেন যারা করোনা পরিস্থিতিতে অন্যান্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সংকট কাটানো সম্ভব।’
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘ডাক্তার তোফায়েল আহমদ সনি একজন নিবেদিত চিকিৎসক। ২ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি ৫২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব টেকনিশিয়ান হাসপাতালে আগত সন্দেহভাজন রোগীদেরও নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছেন। মহামারীর এই সময় তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যে অনন্য ভূমিকা রাখছেন তা প্রশংসনীয়।’
Discussion about this post