ডক্টর মোঃ মাহমুদুল হাছান
প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাবে দেশের সর্বত্রই চলছে লকডাউন অবস্থা। ইচ্ছেমতো বাসা বা বাড়ি থেকে বের হওয়া ও যত্রতত্র ঘুরাঘুরি করার ক্ষেত্রে রয়েছে কঠোর হুশিয়ারী। দেশে গত ২৫ তারিখ থেকে লকডাউন শুরু হলেও স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয় ১৬ মার্চ থেকে। সামাজিক দুরত্ব অবলম্বন বিধি বা সঙ্গনিরোধ আইনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কোচিং সেন্টারগুলোতেও পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়। এমতাবস্থায় শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে স্কুল-কলেজে না এসে বাড়িতে বসে ছাত্র-ছাত্রীরা কিভাবে শিক্ষালাভ করতে পারে এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোন একটি উপায় বের করার বিষয়ে তৎপর হয়ে ওঠে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও ডিস্ট্যান্স লার্নিং এর পদ্ধতি অবলম্বনের অংশ হিসেবে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেন। এমনকি সরকারি ভাবেই এ বিষয়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার তাগিদ দিতে থাকে। ‘আমার ঘরে আমার বিদ্যালয়’ এ প্রতিপাদ্যকে মাথায় নিয়ে শুরু হয়ে যায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম।
আমাদের জানা উচিত, অনলাইন শিক্ষা আসলে কি? এটি কোন পদ্ধতিতে নেয়া হয় বা এর কোন শিষ্টাচার বিধি আছে কিনা? অনলাইন শিক্ষা হলো এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যা সাধারণ শ্রেণি শিক্ষা থেকে ব্যতিক্রম এবং এটি একটি ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতি যা বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন হয় আধুনিক প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার বা মোবাইল কিংবা এ জাতীয় কোন ডিভাইস ও ইন্টারনেট সংযোগ তা হতে পারে নেট ডাটার মাধ্যমে বা ওয়াই-ফাই বা ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে সংযোগকৃত। এ অনলাইন শিক্ষার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু আচরণ বা শিষ্টাচার বিধি।
মোটকথা, ইন্টারনেট নির্ভর এ যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিশেষ শিষ্টাচার ও শৃংখলা বিধি মেনে কোন ক্লাশ পরিচালনা করাই হলো অনলাইন ক্লাশ যেখানে একজন শিক্ষক ক্লাশরুমের বাইরে সুবিধাজনক যে কোন স্থান থেকে পাঠদান করতে পারে এবং শিক্ষার্থীগণ নিজ নিজ বাড়ীতে থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লাইভ ক্লাশে অংশগ্রহন করতে ও পারস্পারিক মতবিনিময় করতে পারে। শুধুমাত্র স্বশরীরে উপস্থিতি ছাড়া একাডেমিক বাস্তব ক্লাশের সাথে অনলাইন ক্লাশের তেমন কোন পার্থক্য নেই। এখানে অনুমতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষার্থী একই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকেই ক্লাশে অংশগ্রহন করতে পারে। শিক্ষক সরাসরি ক্লাশ নেন আর শিক্ষার্থীর কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রীনই হবে তার ক্লাশ। শিক্ষার্থী বাস্তব ক্লাশের মতো এখানেও শিক্ষককে প্রশ্ন করে তাৎক্ষনিক সমাধান পেতে পারে। এ যেন ফেইচ টু ফেইচ বা সরাসরি ক্লাসের মতই।
করোনা কালীন এ মহাসংকটময় মুহুর্তে, লকডাউনে থাকা যেখানে আইনী আদেশ, সেখানে শিক্ষার্থীদেরকে ঘরে বসে পাঠ গ্রহনের ব্যবস্থা করা নিসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় কাজ এবং তা অতীব জরুরী। ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষার তাগিদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির এমন উদ্যোগ একদিকে যেমন শিক্ষা ধারাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রীরা করোনার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হবে।
কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আরবান এরিয়াতে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও, রুরাল এরিয়াতে এটি একটি দুরুহ ব্যাপার। তথাপিও অনলাইনে কিছু শিক্ষার মাধ্যম রয়েছে যা ব্যবহার করে মফস্বল শহরেও শিক্ষা ধারা অব্যাহত রাখা যায়। তবে এ কথাটি অতি বাস্তব যে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনায় আমরা অনেকেই অভ্যস্ত নই বা এর যথাযথ প্রশিক্ষণও নেই। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সবথেকে বড় সমস্যা হলো অনলাইনে পাঠদান বা গ্রহনের সঠিক ম্যানার না জানা এবং এর শিষ্টাচার বিধি সম্পর্কে অবহিত না থাকা। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য শিষ্টাচার ও শৃঙ্খলাবিধি রয়েছে যা পঠন ও পাঠনকালে সকলেরই মেনে চলা কর্তব্য। নিম্নে এ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদান করা হলো।
শিক্ষার্থীদের জন্য শিষ্টাচারিতাঃ
শিক্ষার্থী তথা ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল সৌন্দর্য। শ্রেণিতে তাদের অবস্থান সুন্দর, সুশৃংখল ও শিষ্টাচারপূর্ণ না হলে পাঠদান কার্যক্রম ফলপ্রসু হয় না। অনলাইন শিক্ষা ধারায় শিষ্টাচারের গুরুত্ব আরো বেশী, যা শিক্ষার্থীদের অবশ্যই মেনে চলতে হয়। নিম্নে এমন কিছু শিষ্টাচারের বিষয়ে আলোচনা করা হলো—
১) মার্জিত পোশাক পরিধান করাঃ পোশাক-পরিচ্ছদ শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব ও রুচীশীল আচরণের বহিঃপ্রকাশ। অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বদা মার্জিত ও শালীন পরিধান করা আবশ্যক। ক্লাসটি যদি শুধু অডিও মাধ্যমে হয় তাহলে এ বিষয়টি শিক্ষার্থীরা কিছুটা এড়িয়ে যেতে পারে।
২) সময়ানুবর্তি হওয়াঃ অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সময় মেপে দিনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়। সুতরাং শিক্ষার্থীকে অবশ্যই সময়ানুবর্তি হয়ে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে হবে। শিক্ষকের দেয়া নির্দিষ্ট সময়ের ব্যতিক্রম না করা শিক্ষার্থীর জন্য বড় শিষ্টাচারিতা।
৩) অনলাইন শিক্ষার টুলস সম্পর্কে জানাঃ শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের পূর্বে শিক্ষক কর্তৃক ব্যবহৃত অনলাইনের টুলস/ডিভাইস সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষকগন সাধারণত গুগল ক্লাসরুম, গুগল মিট, জুম, ফেইসবুক লাইভ, স্কাইপে ইত্যাদি টুলস ব্যবহার করে থাকেন। শিক্ষার্থীরা এসম্পর্কে পূর্ব থেকে অবহিত থাকলে অতি সহজে শ্রেণি পাঠে অংশগ্রহন করতে পারে।
৪) মাইক্রোফোনের সুইচ অফ রাখাঃ শিক্ষক যখন অনলাইন ক্লাসে পাঠদান কার্য সম্পাদন করবেন, তখন শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের ব্যবহৃত ডিভাইসের সাউন্ড বাটন বন্ধ রাখা। কারন, একসাথে সকল শিক্ষার্থীর মাইক অন থাকলে শব্দ দূষন হয় ও অন্যান্যদের শ্রবন কাজ ব্যাহত হয়। শিক্ষক যখন ইন্টারাকশন ক্লাসে অবতীর্ণ হবেন বা কাউকে কোন প্রশ্ন করবেন, তখন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সে শিক্ষার্থী তা অন করতে পারবে।
৫) আচরণবিধি মেনে চলাঃ অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহন করে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই শ্রেণিকক্ষের আচরণ বিধি মেনে চলতে হবে। এমন কোন আচরণ যা সহপাঠীদের মনযোগ নষ্ট করতে পারে তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। যেমন শিক্ষকের বক্তব্যে মন না দিয়ে পারস্পরিক কথা বলা বা বাহুল্য অংগ ভংগী করা।
৬) শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাঃ গতানুগতিক পাঠদান থেকে অনলাইনে পাঠদান স্বভাবতই ব্যতিক্রম ও জটিল। এ ক্ষেত্রে শিক্ষককে একদিকে যেমন শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত ডিভাইস গুলির মান নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, আবার অন্যদিকে উপস্থিত সকল ছাত্র ছাত্রীদের মনযোগ ঠিক রাখতে হয়। সুতরাং শিক্ষার্থী সর্বদা শিক্ষকের পাঠদানে সহিযোগিতা করবে এবং পাঠদান ব্যাহত হতে পারে এমন কোন আচরণ না করে তাদের প্রতি সর্বোতভাবেই শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
৭) পাঠগ্রহণে স্বতঃস্ফূর্তভাব পোষণ করাঃ শিক্ষককে তাঁর পাঠপ্রস্তুতির জন্য অনেক শ্রম ব্যয় করতে হয় এবং ক্লাসে প্রবেশের পূর্বে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। তাই শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই স্বতঃস্ফূর্তভাব পোষণ করতে হবে। শিক্ষকের বক্তব্য প্রদানকালে শিক্ষার্থীদের অনেক মনযোগী হতে হবে এবং তা থেকে প্রয়োজনীয় পাঠ উপাদান সংগ্রহ করে পড়া লেখা করতে হবে।
৮) সাইবার সিকিউরিটি মেনে চলাঃ সাইবার সিকিউরিটি বিধান মেনে চলা প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক। অনলাইন ক্লাস চলাকালে বাহুল্য কোন পোষ্টিং যেমন ইমোজী, কার্টুন, অর্থহীন লেখচিত্র, গ্রাফ, পিকচার ইত্যাদি থেকে ছাত্রছাত্রীদেরকে বিরত থাকতে হবে। কারো অনুমতি ছাড়া তার ইমেইল ব্যবহার করা বা অনর্থক কোন কিছু পাঠানো থেকে দুরে থাকতে হবে কারন এগুলি সব সাইবার সিকিউরিটি আইন বিরোধি।
৯) শিক্ষকদের অযথা বিরক্ত না করাঃ অনলাইনে ক্লাস করার জন্য নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট সময় থাকে এবং সে অনুযায়ী ক্লাসরুটিন করা হয়। শিক্ষার্থী যথাসম্ভব চেষ্টা করবে উক্ত সময়ের মধ্যে তার প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে নিবে। কারণ একজন শিক্ষকের একই দিবে আরো অন্যদের সাথে ক্লাস থাকতে পারে। সুতরাং যখন তখন ফোন করে বা ইমেইল করে শিক্ষকদের বিরক্ত না করা শিষ্টাচারসম্মত কাজ। তবে অতি প্রয়োজন হলে টেক্সট মেইলের মাধ্যমে পূর্ব থেকে অনুমতি নিয়ে কথা বলা যেতে পারে।
১০) অনলাইনে শিক্ষাগ্রহণে প্রস্তুত থাকাঃ শিক্ষক অনলাইন ক্লাসে প্রবেশের পুর্বে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকা, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখা, সময়মত নেট সংযুক্ত রাখা, শিখণ উপাদান গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি বিষয়াদি সম্পন্ন করা শিষ্টাচারিতা অবলম্বনের শামিল। শিক্ষার্থীরা দেশের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন অনলাইনে পাঠগ্রহণে তাদেরকে সক্ষম হতে হবে এবং শিক্ষাগ্রহণে সচেষ্ট থাকতে হবে।
শিক্ষকদের জন্য শিষ্টাচার ও শৃঙ্খলাঃ
সাধারণত যে কোন শ্রেণিতে সরাসরি পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের সাথে প্রকাশ্যে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন। তার বডি ল্যাংগুয়েজ, বাচনভংগীসহ সবকিছুই ছাত্র ছাত্রীদের কাছে দৃশ্যমান থাকে ফলে শিক্ষক নিজেকে যথার্থভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন। অনুরুপভাবে অনলাইনে পাঠদানের বেলাতেও শিক্ষকদেরকে কিছু শিষ্টাচারিতা ও শৃংখলা অবলম্বন করতে হয়। যেমন—
১) পেশাদারিত্বপূর্ণ পোষাক পরিধানঃ শিক্ষককে হতে হবে শ্রেণিকক্ষে সর্বদাই পেশাদারিত্বের চরিত্রে আদর্শবান, তা হোক সেটি অফলাইন বা অনলাইন শ্রেণি কক্ষ। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষককে পোষাক আশাকের ব্যাপারে আরো বেশি সজাগ ও সচেতন হতে হবে। কারণ, ছাত্র ছাত্রীরা এখানে শিক্ষকের সমদৃষ্টির আড়ালে থাকে বলে তারা তাঁকে বেশি ফলো করে। তাই শিক্ষককে পেশার সাথে যায় এমন পোষাক পরতে হবে।
২) সকলের প্রতি সমান দৃষ্টি প্রদানঃ অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহনকারী সকলের প্রতি সমান দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। ছাত্র ছাত্রীরা যেহেতু বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে পাঠগ্রহনে অংশ নিয়ে থাকে, সেহেতু তারা স্বভাবতই শিক্ষকের সুদৃষ্টি কামনা করে এবং পাঠগ্রহনে মনোনিবেশ করে।
৩) শিক্ষার্থীদের মতামতের গুরুত্ব দেয়াঃ অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী যেহেতু বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের হয়ে থাকে, সেহেতু তাদের মতামত বা ফিলিংস শিক্ষকের থেকে ভিন্ন হতে পারে। ফলে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া শিক্ষকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪) প্রত্যেকের গোপনীয়তা রক্ষা করাঃ অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহন করতে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী তার নিজের বা বাবা-মায়ের ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহার করে থাকে, যা অত্যন্ত গোপনীয় । সুতরাং কোন মতেই শিক্ষক উক্ত ইমেইলগুলো তাদের অনুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার বা শেয়ার করতে পারবেন না। এটি শিষ্টাচার পরিপন্থী।
৫) ব্যক্তব্যে শালীনতা বজায় রাখাঃ অনলাইনে গৃহিত ক্লাসের সকল কিছুই তথা বক্তব্য, ডকুমেন্ট, টিচিং উপাদানসহ আরো অন্যান্য ব্যবহৃত তথ্যাদি রেকর্ডেড হয়ে থাকে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে শিক্ষককে একটু বেশি সচেতন থাকতে হয় এবং বলনে-ব্যক্তব্যে অনেক শালীনতা বজায় রাখতে হয়।
৬) ফরমাল ওয়ার্ড ব্যবহার করাঃ ক্লাসে ব্যক্তব্য প্রদানকালে শিক্ষককে সর্বদা সাবলীল ভাষায় পরিমিত কথা বলা উচিত। কোন প্রকার সারকাজম বা বিদ্রুপাত্মক শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, প্রদত্ত সকল ব্যক্তব্যই রেকর্ড হয়ে থাকে, যা পরবর্তিতে বিপদের হেতু হয়ে দাঁড়াতে পারে। সুতরাং সর্বদা ফরমাল বা স্বাভাবিক কথা বলা শ্রেয়।
৭) ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিসম্পন্ন হওয়াঃ অনলাইনে ক্লাস পরিচালনাকালে শিক্ষক হবেন সব সময়ই ক্ষমাপরায়ন ও ধৈয্যশীল। কোন ছাত্র বা ছাত্রী অশোভনীয় কোন আচরণ করলে শিক্ষক তাকে তাৎক্ষণিক মোটিভেশন দিয়ে পরে কোন একটি সুবিধামত সময়ে সঠিক শিক্ষা প্রদান করতে পারেন।
৮) সেন্ড বাটন চাপতে সতর্ক থাকাঃ কোন ডকুমেন্ট পাঠানোর পূর্বে শিক্ষককে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারন ভুলে কোন কিছু গ্রুপ মেইলে চলে গেলে তা ফিরিয়ে আনা বা সংশোধন করা সম্ভব হয় না। ফলে তা পরবর্তীতে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করে। সুতরাং সেন্ড বাটন চাপার পূর্বে ভালো করে খেয়াল করতে হবে।
৯) আলোচনা সংক্ষিপ্ত রাখাঃ অনলাইন ক্লাসে দীর্ঘক্ষণ মনোনিবেশ রাখা একটু জটিল। তাই একজন শিক্ষকের উচিত তাঁর শ্রেণি পাঠদানে ব্যক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে মূলকথা শেয়ার করা। সর্বদা স্টিক পয়েন্টে কথা বলা শ্রেয়।
১০) অনর্থক বিষয়বস্তু মেইল না করাঃ শিক্ষক যত্রতত্র যা তা মেইল করতে পারেন না, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় Frivolous Mail। জোকস, চেইন লেটার বা অপ্রাসঙ্গিক কোন কিছু থেকে বিরত থাকা আবশ্যক, এতে অযথা সময়ের অপচয় হয় এবং ছাত্র ছাত্রীদের কোন কাজেও লাগে না।
এক কথায়, শিষ্টাচার ও শৃংখলা এমন একটি গুণ যা পাঠদানকালে শিক্ষকদের মেনে চলতে হয়। কারণ, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তাদের শিক্ষক হলেন একটি রোল মডেল, তাদের কথা-বার্তা, চাল-চলন, অঙ্গ-ভঙ্গিমা তথা সকল ক্ষেত্রে তাদের আচার আচরণ শিক্ষার্থীদের কাছে অনুকরণীয়। তাই অনলাইনে পাঠদানকালে শিক্ষকদেরকে আরো বেশী সচেতন থেকে কাজ করতে হয়।
অতএব, আমরা উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পারি যে, পঠন-পাঠন, শিখণ-শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই শিষ্টাচার ও শৃংখলাবিধি মেনে চলতে হয়। সেটি অফলাইনে হোক বা অনলাইনে। অন্যথায় শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয় এবং শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হয়। অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমে শিষ্টাচার ও শৃংখলাবিধি মেনে চললে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মাঝে সুসম্পর্ক দৃঢ় হয় এবং শিখণ-শিক্ষণের ফলাফল আশাব্যঞ্জক হয়। করোনাকালীন মহাসংকটে এ লকডাউন অবস্থায় যেহেতু অনলাইন মাধ্যম ছাড়া শিক্ষার কোন বিকল্প নেই, সেহেতু আমাদের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনলাইনে ব্যবহৃত ডিভাইস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখতে হবে এবং অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রমের শিষ্টাচার ও শৃংখলাবিধি সঠিকভাবে মেনে শিখন ও শিক্ষণ কর্ম সম্পাদন করতে হবে।
লেখক: প্রাবন্ধিক, শিক্ষা গবেষক ও প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা
Discussion about this post