খেলাধূলা ডেস্ক
আজ ১৭ জুন শনিবার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
৮৯ বছরের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটেও এটি সবচেয়ে বড় জয়। ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে রানের হিসেবে এর চেয়ে বড় জয় আছে দুটি। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৭৫ রানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। ১৯৩৪ সালে অস্ট্রেলিয়াও ইংল্যান্ডকে ৫৬২ রানে হারিয়েছে। তার পর অবস্থান বাংলাদেশের। তাছাড়া ১৯৩৪ সালের পর রানের ব্যবধানে এখন পর্যন্ত এটিই টেস্টের সবচেয়ে বড় জয়।
বাংলাদেশের বোলাদের সামনে দুই ইনিংসেই অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে আফগানিস্তান ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তারা করতে পারে ১১৫ রান।
২০০০ সালে টেস্ট খেলার যোগ্যতা অর্জন করা বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১৩৮ টি ম্যাচ খেলেছে। তার মধ্যে কেবল ১৮টি ম্যাচ জিততে পেরেছে লাল-সবুজরা। হেরে যাওয়া ম্যাচগুলোর অধিকাংশই ছিল ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়। সেই বাংলাদেশ ৪ দিনে পাক্কা ১০টি সেশন আধিপত্য দেখিয়ে ক্রিকেট খেলেছে। তাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫৪৬ রানের বিশাল জয়কে কেবলমাত্র ‘জয়’ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটাকে টেস্ট ক্রিকেটের নতুন সূর্যোদয়ও বলা যেতে পারে।
যার মূল কৃতিত্ব তাসকিন, এবাদত, শরিফুলদের। আক্রমণের এই ত্রয়ী আফগানিস্তানের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন। বোলারদের পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যাটাররাও ত্রাস ছড়িয়েছেন রীতিমত। আফগান বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ছেড়েছেন শান্ত-মুমিনুলরা।
ব্যাটিং বিভাগে সবচেয়ে স্বস্তির বিষয়টি ছিল মুমিনুলের রানে ফেরা। গত ২৬ ইনিংসের মধ্যে এবারই তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পেরেছেন তিনি। মুমিনুলকে পাশে রেখে নাজমুল হোসেন শান্তও টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে মুমিনুলের কীর্তিতে ভাগ বসিয়েছেন। এক সময় যে শান্তকে নিয়ে সমালোচনা হতো, সেই শান্তই এখন রানের বন্যা বইয়ে নিয়মিত পারফর্মার।
তবে ব্যাটারদের ছাপিয়ে এই টেস্টে সবার নজর ছিল বোলারদের দিকে। বিশেষ করে সবুজ উইকেটে বাংলাদেশের পেসাররা কেমন করেন সেটাই ছিল দেখার। সেখানে একশতে একশ পেয়েছেন তিন পেসার। আফগানিস্তানের ১৯ উইকেটের মধ্যে ১৪টি শিকার করেছেন তাসকিন, শরিফুল, এবাদতরা। যা এক ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চও!
পেসারের পারফরম্যান্স নিয়ে টেস্ট অধিনায়ক লিটন দাস বলেন, ‘মিরপুরে আমরা কখনো তিন পেসার নিয়ে খেলি না। যেহেতু উইকেটের আচরণটাই এমন ছিল যে, তিন পেসার নিয়ে খেলার মতো। উইকেটে যথেষ্টই পেসারদের রসদ ছিল। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমি অধিনায়ক হিসেবে খুব খুশি। ’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ড ৫৪৬ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের অনুপুস্থিতিতে লিটন দাসের নেতৃত্বে প্রথম ম্যাচেই এমন কীর্তি গড়ে স্বাগতিকরা। লিটন এর বড় কৃতিত্ব দিতে চান ব্যাটারদেরও। এই ম্যাচের উইকেটে ব্যাটিং করা সহজ ছিল না বলে দাবি তার।
প্রথম ইনিংসে এবাদত চার উইকেট নেন, পরেরটিতে সমান শিকার তাসকিনেরও। দুই ইনিংস মিলিয়ে তিন পেসার নিয়েছেন মোট ১৪ উইকেট। এমন কন্ডিশনে বল করার অভিজ্ঞতা পেয়েছেন তাসকিন। মিরপুর টেস্টের পর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাসকিন বলছেন, এমন উইকেট ভবিষ্যতেও চান তারা।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে স্পোর্টিং কন্ডিশন ছিল, ব্যাটিং-বোলিং দুটোতেই সাহায্য ছিল। ভালো লাগছে যে একটা ভালো ব্যবধানে জয় পেয়েছি। দুই বিভাগে দারুণ ক্রিকেট খেলে বড় একটি জয় পেয়েছি আমরা। খুব ভালো লাগছে, এ জয়ে দলের সঙ্গে থাকতে পেরে। ’
পেছনে স্লিপে দাঁড়ানো তিন থেকে চারজন। মিরপুরে এমন দৃশ্যের দেখা পাওয়া বেশ দুরূহ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এমন উইকেটেই খেলেছে বাংলাদেশ। দারুণ করেছেন তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন ও শরিফুল ইসলামরা। তাতে এসেছে রেকর্ডগড়া জয়।
Discussion about this post