খেলাধূলা ডেস্ক
চোখের জলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন ড্যাশিং ক্রিকেটর খ্যাত তামিম ইকবাল। আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) নগরের হোটেল টাওয়ার ইনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন।
তামিম শুরুতেই বলেন, ‘নরমালি এমন সময়ে যেকোনো ক্রিকেটারই স্পিচ লিখে নিয়ে আসে, কিন্তু এমন কিছু আমি করিনি। খুব দ্রুতই শেষ করব আমি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই সঠিক সময় সরে দাঁড়ানোর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। সবাইকে ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন। ’
নিজের বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্যই ক্রিকেট খেলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ’ এরপরই কান্নায় ভেঙে পড়েন তামিম।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম এই ক্রিকেটার বলেছেন, ‘আমি সব সময় বলেছি ক্রিকেট খেলেই বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে গিয়ে অনেক পরিস্থিতির মুখে পড়েছি, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার ছোট চাচার হাত ধরেই ক্রিকেটে এসেছি। যারা আমাকে এই পর্যায়ে আনতে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের জন্য তামিম ধন্যবাদ দিয়েছেন সতীর্থ, কোচ, বিসিবি, পরিবার ও সমর্থকদের, ‘ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় আমার সব সতীর্থ, সব কোচ, বিসিবির কর্মকর্তাগণ, আমার পরিবার ও যাঁরা আমার পাশে ছিলেন, নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার অবদান ও ভালোবাসায় আমি চেষ্টা করেছি সব সময় দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে। ’
উল্লেখ্য গত পরশু সিরিজ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আনফিট হলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবেন বলে ঘোষণা দেন ওয়ানডে অধিনায়ক। শতভাগ ফিট না হয়েও তামিমের ম্যাচ খেলার ঘোষণায় বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এবং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন৷
মাথার ওপর বিশাল চাপ নিয়ে বুধবার আফগানদের মুখোমুখি হয়ে ব্যর্থ হন তিনি। বুধবার প্রথম ওয়ানডেতে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি ৷ দলও হেরেছে আফগানিস্তানের কাছে ৷
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় তামিমের। ১৮ ছুঁইছুঁই বয়সেই অভিষেক হওয়া এই ক্রিকেটার মাত্র চার ওয়ানডে খেলেই নাম লেখান বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। আর প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে স্মরণীয় এক জয়ে দাপুটে ফিফটি হাকিয়ে জানান দেন নিজের যোগ্যতার।
গত বছর ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী তামিম। এবার ওয়ানডে ও টেস্ট থেকেও অবসরের ঘোষণা দিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালের কেনিয়ার বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম ওয়ানডেতে এই সংস্করণেই শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
এছাড়া ৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে তার সংগ্রহ ৫ হাজার ১৩৪ রান। ৩১ হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছেন ১০টি সেঞ্চুরি। সবার আগে ছেড়ে দেওয়া টি-টোয়েন্টিতে ৭৮ ম্যাচে করেছেন ১ হাজার ৭৫৮ রান। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৭টি হাফ সেঞ্চুরিও।
বিদায় বলে দেওয়ার আগে ৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে রান ৫ হাজার ১৩৪ রান করে যান তামিম। যেখানে তার সেঞ্চুরি ১০টি ও ফিফটি রয়েছে ৩১টি। টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি দেশসেরা এই ওপেনারেরই।
ওয়ানডে ২৪১টি খেলে ৩৬.৬২ গড়ে রান ৮ হাজার ৩১৩। ১৪ সেঞ্চুরির পাশে ফিফটি ৫৬টি। এই সংস্করণে দেশের হয়ে রান, সেঞ্চুরি, ফিফটি, সবকিছুতেই তিনি রয়েছেন সবার ওপরেই। এর আগে গত জুলাইয়ে টি-টোয়েন্টিতে অবসর নেন। তার আগে নামের পাশে যোগ করে যান ৭৪ ম্যাচে ১ হাজার ৭০১ রান। এই সংস্করণে দেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তামিমই
তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজার রান করা দেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরি ২৫টি। বাংলাদেশের হয়ে ২০ সেঞ্চুরিও নেই আর কারও।
তামিমের ফিটনেস এবং খেলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। পিঠ, হ্যামস্ট্রিং এবং গ্রোয়েন ইনজুরি তাকে বারবার বাধা দিচ্ছিল বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে। প্রতিটি সিরিজ আসলেই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছিল তার।
Discussion about this post