আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গোয়েন্দা সংস্থা ‘ফাইভ আইস’ এর ফাঁস হওয়া একটি গবেষণা নথিতে বলা হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে চীন করোনা ভাইরাস মহামারির তথ্য-প্রমাণ লুকিয়েছে বা নষ্ট করেছে। ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব নিয়ে এ নথির তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
শনিবার (০২ মে) মার্কিন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় ফক্স নিউজ।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের সমন্বয়ে গঠিত এ গোয়েন্দা সংস্থার ১৫ পৃষ্ঠার গবেষণা নথিতে বলা হয়, করোনা ভাইরাস মহামারি নিয়ে চীনের গোপনীয়তা আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতার ওপর আক্রমণ।
নথিতে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে চীন দাবি করে এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না; এ নিয়ে কথা বলা চিকিৎসকদের চুপ করিয়ে দেওয়া হয়, তথ্য-প্রমাণ ধ্বংস করা হয় এবং ভ্যাকসিন তৈরির জন্য বিজ্ঞানীদের কাছে ভাইরাসটির নমুনা দিতেও অস্বীকৃতি জানানো হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, এ নথি চীন সরকারের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
১৫ পৃষ্ঠার এ নথির বিষয়টি নিশ্চিত করেনি মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ। তবে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ নথির সঙ্গে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের দেওয়া তথ্যের সামঞ্জস্য রয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চীন আগে থেকেই জানতো ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে কিন্তু তারা অনেক দেরিতে বিষয়টি জানায়। প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তারা যে তথ্য দিয়েছিল, তার চেয়ে বেশি ছড়িয়ে গিয়েছিল করোনা ভাইরাস এবং তারা এ সম্পর্কে জানতো।
এদিকে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বাস করে, ভাইরাসটি উহানের বন্যপ্রাণীর বাজার থেকেই ছড়ায়, যা চীন দাবি করেছিল। তবে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ এখনো ভাইরাসটির উৎসস্থলের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়নি।
গত মাসে মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেন, চীনের উহানের ভাইরাস গবেষণাগার থেকে এটি ছড়িয়ে থাকতে পারে। তবে জীবাণু-অস্ত্র হিসেবে নয়, ভাইরাস প্রতিরোধে চীন যে যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ বা এর চেয়ে বেশি দক্ষ সেটি প্রমাণ করার জন্যই এ নিয়ে গবেষণা করছিল তারা।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেন, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর সপক্ষে প্রমাণ তার কাছে রয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি গোয়েন্দা সংস্থার ৭০-৭৫ শতাংশই মনে করে, একটি গবেষণাগার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।
সূত্রটি জানায়, করোনা ভাইরাসের উৎস ও ছড়ানো নিয়ে চীনের লুকোচুরি মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে। সবাই চীনের ওপর রেগে আছে।
তবে গবেষণাগার থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর কোনো প্রমাণ এখনো জনসমক্ষে দেওয়া হয়নি।
ফাইভ আইস প্রমাণ পায়, ৩১ ডিসেম্বর থেকে সার্চ ইঞ্জিন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাস বিষয়ক সংবাদ সেন্সর করছিল চীন। এসময় ‘সার্স ভ্যারিয়েশন’, ‘উহান সি-ফুড মার্কেট’, ‘উহান আননোন নিউমোনিয়া’,- এ শব্দগুলো ডিলিট করে দেয় তারা।
৩ জানুয়ারি চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন ভাইরাসটির নমুনা নির্দিষ্ট পরীক্ষাগারে সরিয়ে নিতে বা ধ্বংস করে দিতে বলে। এ রোগ সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ না করার নির্দেশও জারি করে তারা।
৫ জানুয়ারি উহানের মিউনিসিপাল হেলথ কমিশন দৈনিক শনাক্ত রোগীর তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ১০ জানুয়ারি পেকিং ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট হসপিটালের শ্বাসতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ওয়াং গুয়াঙ্গা দাবি করেন, ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি গুরুতর নয়। এর ১২ দিন পরে ওয়াং নিজেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন।
১২ জানুয়ারি সাংহাইয়ের এক অধ্যাপক ভাইরাসটির জেনেটিক সিকোয়েন্স প্রকাশ করায় তার গবেষণাগারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৪ জানুয়ারি উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে ভাইরাসের নমুনা দিতে নিষেধ করে চীন। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই সংক্রমণ শুরু হলেও ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত চীন স্বীকার করেনি যে, ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে মধ্যে ছড়াতে সক্ষম।
৩১ জানুয়ারি তাইওয়ান এবং ৪ জানুয়ারি হংকং এ আশঙ্কা প্রকাশ করলেও বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা চীনের তথ্যই প্রচার করে।
ফেব্রুয়ারি মাসেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ভ্রমণে বিধিনিষেধ জারি না করার আহ্বান জানায় চীন। যদিও সে সময় চীন নিজেই অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে গুরুতর বিধিনিষেধ জারি করে।
Discussion about this post