শিক্ষার আলো ডেস্ক
এই বছর ‘এশিয়ার নোবেল’ খ্যাত র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ৩৮ বছর বয়সী করভি রাখসান্দ। তিনি র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারজয়ী ৩৪৪ অসাধারণ ব্যক্তি ও সংস্থার বিশেষ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেন। করভী রাখসান্দ বাংলাদেশ থেকে সম্মানজনক এই পুরস্কার পাওয়া ত্রয়োদশ ব্যক্তি। তার আগে সর্বশেষ ২০২১ সালে এই পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ফেরদৌস কাদরী।
এবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন চারজন। তারা হলেন ভারতের রবি কানন আর, ফিলিপাইনের মিরিয়াম করোনেল-ফেরের, তিমুর-লেস্তের ইগুয়েনিও লেমোসও ও বাংলাদেশের করভি রাখসান্দ।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) মোট চারজনকে এ পুরস্কারে ভূষিত করার ঘোষণা দেয় র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন।
পুরস্কারজয়ের প্রতিক্রিয়ায় করভী রাখসান্দ বলেন, “কেবল আমার নয়, আমাদের এই যাত্রায় যে মানুষগুলো ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রত্যেকের কাজের স্বীকৃতি এই পুরস্কার। আমরা সবাই মিলে প্রমাণ করেছি যে তরুণরা কেবল জাতির ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতির বাহকই নয়, তারা লক্ষ্য পূরণেও সক্ষম”।
প্রত্যেক বছর জনসেবা থেকে শুরু করে সামাজিক উদ্ভাবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কারটি প্রদান করা হয়ে থাকে। সাবেক ফিলিপিনো প্রেসিডেন্ট র্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের স্মরণে ও তাঁর সম্মানে রকফেলার ব্রাদার্স ফান্ড ১৯৫৭ সালে এ পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে প্রতি বছর এশিয়া ভূখণ্ডে সততা, সাহস ও অলাভজনক সেবায় প্রভাবশালী এশীয় ব্যক্তিদের মাঝে এ পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে।
করভি রাখসান্দ সম্পর্কে র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‘২০২৩ সালের র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ডের জন্য করভি রাখসান্দকে নির্বাচিত করার সময় ট্রাস্টি বোর্ড তার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার কাজ করার সাহসিকতার স্বীকৃতি দেয়। তার শক্তিশালী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব শিক্ষার প্রসার এবং হাজার হাজার তরুণ-তরুণীকে সামাজিক পরিবর্তনের আহ্বানে সাড়া দিতে অনুপ্রাণিত করে। পুরস্কার প্রদান কমিটি করভি রাখসান্দকে অদম্য চেতনা, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সামাজিক রূপান্তরের প্রতি তাঁর অবিচল অঙ্গীকারের জন্য অভিনন্দন জানায়।’
করভি রাখসান্দ তার এই রূপান্তরমূলক যাত্রা শুরু করেছিলেন ছয় বন্ধুকে নিয়ে, যখন তিনি একদল শিশুকে ময়লা-আবর্জনায় ব্যবহারযোগ্য কিছু খুঁজতে দেখেছিলেন, যা তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল। এরপর তিনি ২০০৭ সালে ঢাকার রায়ের বাজার বস্তিতে একটি রুম ভাড়া নিয়ে মাত্র ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে জাগো ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে ফাউন্ডেশনটি দ্রুত বেড়ে উঠেছে এবং এখন সারা দেশে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে সরকার স্বীকৃত ইংরেজি ভাষা শিক্ষা প্রদান করছে।
সামাজিক উন্নয়নের এই প্রচেষ্টার জন্য করভি রাখসান্দ আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ২০১০ সালে এইচআরএইচ প্রিন্স অব ওয়েলস, প্রিন্স চার্লস থেকে আন্তর্জাতিক বিভাগে মোজাইক ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ২০১৩ সালে কমনওয়েলথ ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৭ সালে সোসাইটি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের অ্যান্ড্রু ই রাইস অনারেবল মেনশন অ্যাওয়ার্ড, ২০২১ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কমনওয়েলথ পয়েন্ট অব লাইট অ্যাওয়ার্ড ও ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড।
এর আগে বাংলাদেশ থেকে মোট ১২ জন এই পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁরা হলেন—সমাজসেবী তহরুন্নেসা আবদুল্লাহ (১৯৭৮), ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ (১৯৮০), গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (১৯৮৪), গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (১৯৮৫), ক্যাথলিক ধর্মযাজক রিচার্ড উইলিয়াম টিম (১৯৮৭), দিদার কমপ্রিহেন্সিভ ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইয়াসিন (১৯৮৮), বেসরকারি সংগঠন বাঁচতে শেখার প্রতিষ্ঠাতা অ্যাঞ্জেলা গোমেজ (১৯৯৯), বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (২০০৪), প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান (২০০৫), বেসরকারি সংগঠন সিডিডির নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান (২০১০), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (২০১২) ও বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী (২০২১)।
Discussion about this post