মুহতারিমা রহমান
বাংলাদেশস্থ সুইস দূতাবাসের সহযোগিতায় দেশের পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩-এ অংশ নিয়েছে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ। ‘ওয়াটার অ্যান্ড ওয়েস্ট: স্ট্রেন্থনিং লোকাল গভর্নেন্স ফর আরবান রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি’ শীর্ষক এই সেশনটি খাত বিশেষজ্ঞ ও মূল অংশীদারদের মধ্যে অর্থবহ আলোচনা ও সংলাপের জন্য সহায়ক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
রাজধানী ঢাকার শেরাটনে গত ০৮ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ এর অংশ হিসেবে এই সেশন আয়োজিত হয়। আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, এমপি। মন্ত্রী বাংলাদেশের পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন ও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট ইন্ডিয়ার সদস্য আগাথা সাংমা, এমপি; ক্লাইমেট পার্লামেন্ট নেপালের সদস্য মাধব সাপকোটা, এমপি; বাংলাদেশস্থ সুইস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব কোঅপারেশন কোরিন হেনচোজ পিগনানি এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান।
বিশেষজ্ঞদের জন্য এই সম্মেলন ছিল একটি সময়োপযোগী আয়োজন, যেখানে তারা জলবায়ু-সহিষ্ণু টেকসই উন্নয়ন অর্জনে স্থানীয় শাসনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। সেশনে আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল- স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন, কমিউনিটির সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার, সহযোগিতা ও অংশিদারিত্বমূলক কার্যক্রম, উন্নত নীতি ও বিধান প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন।
এ সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, এমপি বলেন, “স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ওয়েস্ট ইনসিনারেটর নির্মাণ করবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় আমরা এই প্ল্যান্ট তৈরি করবো এবং এই বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। সেখানে দিনে তিন-চার হাজার টন বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করা হবে এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে প্ল্যান্টের সক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় এনে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে পারলে ও সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমরা যেকোনো বাধা অতিক্রম করতে পারবো।”
একই রকম মতামত ব্যক্ত করে বাংলাদেশস্থ সুইস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব কোঅপারেশন কোরিন হেনচোজ পিগনানি বলেন, “সাধারণ মানুষের উদ্বেগের জায়গা বের করাই হচ্ছে সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আমরা স্থানীয় সরকার, নাগরিক, সুশীল সমাজ ও তৃণমূলের সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততাও গুরুত্বপূর্ণ। ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টিং ও কমিউনিটি সেনসিটাইজেশনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সমস্ত অংশীদারদের সাথে একযোগে কাজ করে যেতে হবে।”
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে, যা পানি ও স্যানিটেশনের (পয়োব্যবস্থা) ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমাদের জলবায়ু সহিষ্ণু অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ করতে হবে এবং সাধারণ মানুষের বিশেষ করে নারীদের মধ্যে সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি করতে কাজ করতে হবে। তাহলে নারীরা দুর্যোগের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম উপায় হল নারীদের পানি শোধনাগার ও অন্যান্য জলবায়ু-সহিষ্ণু অবকাঠামো পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা। এই পদক্ষেপ তাদের জীবিকা অর্জনে এবং পানি উদ্যোক্তা হয়ে স্বনির্ভর হতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।”
সম্প্রতি বাংলাদেশে অবস্থিত সুইস দূতাবাস ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ও সুইসকন্টাক্টকে ‘জিও৪আইএমপ্যাক্ট’ শীর্ষক একটি বহু-বছর মেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে গণতন্ত্রের উন্নয়ন এবং পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে ন্যায়সঙ্গত ও জলবায়ু-সহিষ্ণু সেবা নিশ্চিত করা এই প্রকল্পের লক্ষ্য। এ প্রকল্প প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী, দরিদ্র, তরুণ প্রজন্ম ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেয়। এছাড়া, সবার জন্য জবাবদিহিতামূলক ও ন্যায়সঙ্গত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং সেবা
প্রদানকারীদের সাথে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততাকে উত্সাহিত করে।
Discussion about this post