অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর ফার্মিল্যাবের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা সম্ভবত প্রকৃতির জানা চারটি বলের বাইরে নতুন আরেকটি বলের অস্তিত্ব আবিষ্কারের দিকে অনেকটা এগিয়ে গেছেন। অতি পারমাণবিক কণা মিউয়ন পদার্থবিজ্ঞানের বর্তমান তত্ত্বের দেখানো পথ অনুযায়ী প্রত্যাশিত আচরণ করছে না, এমন অনেক প্রমাণ পেয়েছেন তারা। মিউয়নের ওপর অজানা একটি বল কাজ করছে বলে বিশ্বাস এ বিজ্ঞানীদের।
তবে এ ফলাফলের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও তথ্য প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তারা। সেগুলো যদি নিশ্চিত হয় তাহলে এটি পদার্থবিজ্ঞানে একটি নতুন বিপ্লবের সূচনা ক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
প্রতিদিন আমরা যে বলগুলোর অভিজ্ঞতা লাভ করি সেগুলো মূলত প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের অংশ। এ বলগুলো হলো মহাকর্ষীয় বল, বিদ্যুৎচৌম্বকীয় বল, সবল নিউক্লীয় বল ও দুর্বল নিউক্লীয় বল। এই মহাবিশ্বের সব ধরনের বস্তু ও কণাগুলো কীভাবে পরস্পরের উপর ক্রিয়া করবে তা এই বলগুলোই নির্ধারণ করে। কণা ত্বরকযন্ত্র সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাগার ফার্মিল্যাবে মিউয়ন সংক্রান্ত গবেষণায় নতুন তথ্যগুলো পাওয়া গেছে। ২০২১ সালে ফার্মিল্যাবের গবেষক দল প্রথম প্রকৃতিতে পঞ্চম আরেকটি বল সক্রিয় থাকতে পারে বলে জানিয়েছিলেন, তাদের ঘোষিত ওই ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী গবেষণাগুলো করা হয়। তারপর থেকে গবেষক দল আরও তথ্য যোগাড় করেন। তারা তাদের পরিমাপের অনিশ্চয়তা হ্রাস করে ২–এর উৎপাদকে নামিয়ে আনতে সমর্থ হন বলে জানিয়েছেন ফার্মিল্যাবের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. ব্রেন্ডন কেসি। তিনি বলেন, আমরা সত্যিই নতুন অঞ্চলে অনুসন্ধান করছি। আমরা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নির্ভুলভাবে (পরিমাপ) নির্ধারণ করছি।
‘জি মাইনাস টু’ নামের একটি গবেষণায় গবেষকরা মিউয়ন নামের অতি পারমাণবিক কণাকে প্রায় ১৫ মিটার ব্যাসের একটি রিংয়ের মধ্যে ত্বরণায়িত করেছেন। এখানে কণাগুলোকে তারা প্রায় আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে হাজারবারের মতো ঘোরান।
তারা দেখতে পান, কণাগুলো সম্ভবত ‘অজানা একটি বলের’ কারণে এমন আচরণ করছে যা স্ট্যান্ডার্ড মডেল নামের বর্তমান তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। তাদের পাওয়া নজিরগুলো শক্তিশালী হলেও ফার্মিল্যাবের দলটি চূড়ান্ত প্রমাণ এখনও পায়নি, জানিয়েছে বিবিসি।
তবে তারা এরই মধ্যে চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়ার আশা করছেন। স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুযায়ী মিউয়নগুলোর কম্পনের ফলে অনিশ্চয়তা যা হওয়া উচিত তা না হয়ে বেড়ে যায়। কিন্তু পরীক্ষণের ফলাফল স্ট্যান্ডার্ড মডেলের তত্ত্ব অনুযায়ী হিসাবকৃত ফলাফলের সঙ্গে মিলছে না কেন?
আমাদের চারপাশে এই বিশ্বের সবকিছু পরমাণু দিয়ে তৈরি। এই পরমাণুগুলো আরও ছোট ছোট কণা দিয়ে তৈরি। এগুলো পরস্পরের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া করে প্রকৃতির চারটি বল, বিদ্যুৎ ও চৌম্বকীয় বল (বিদ্যুৎচৌম্বকীয় বল), দুই পারমাণবিক বল ও মহাকর্ষ সৃষ্টি করে।
এগুলোর আচরণ কী হবে তা স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মাধ্যমে পূর্বানুমান করা যায়। পঞ্চাশ বছর ধরে এই মডেল নির্ভুলভাবে এসব অনুমান করতে সক্ষম হয়েছে, কোথাও কোনো ভুল হয়নি। মিউয়নগুলো ইলেকট্রনের মতোই। এগুলো পরমাণুগুলোকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খায় এবং বৈদ্যুতিক চার্জ বহন করে, কিন্তু এগুলো ইলেকট্রন থেকে প্রায় ২০০ গুণ ভারী।
যে পরীক্ষায় এগুলোকে কাঁপানো হয় তাতে শক্তিশালী, অতিপরিবাহী চুম্বক ব্যবহার করা হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা যায়, মিউয়নগুলো যে হারে কাঁপবে বলে স্ট্যান্ডার্ড মডেল ভবিষ্যদ্বাণী করে তার চেয়ে সেগুলো আরও দ্রুতগতিতে কাঁপে।
স্ট্যান্ডার্ড মডেলের এই সীমাবদ্ধতার কারণ হতে পারে অজানা একটি নতুন বল, হয়তো এর কারণেই তাত্ত্বিক অনুমানের সঙ্গে পরীক্ষণের ফলাফল মিলছে না, বিবিসি নিউজকে বলেছেন এই প্রজেক্টের নেতৃস্থানীয় গবেষকদের একজন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রাজিয়ানো ভেনানজোনি। তিনি বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে, আরও একটা বল থাকতে পারে, যার বিষয়ে আমরা এখনও জানি না। এটি ভিন্ন কিছু যাকে আমরা ‘পঞ্চম বল’ বলছি। এটি ভিন্ন কিছু, যার বিষয়ে আমরা এখনও কিছু জানি না। কিন্তু এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ এটি মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন কিছু বলছে।
যদি কথিত এই ‘পঞ্চম বল’ এর অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়, তাহলে এটি আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সূত্রগুলোর পর শত বছরের অন্যতম সবচেয়ে যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হয়ে উঠতে পারে।খবর – বিডিনিউজ।
Discussion about this post