সাব্বির নেওয়াজ
চোখের সামনে শুধুই অন্ধকার দেখছেন সারাদেশের ৮৪১ কলেজ শিক্ষক। ডিগ্রি স্তরের শিক্ষক তারা। সব শর্ত পূরণ করেই বেসরকারি কলেজে নিয়োগ পেয়েছিলেন। বছরের পর পড়িয়েও যাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। তবে জনবল কাঠামোর নীতিমালায় একই বিষয়ে দু’জনের বেশি শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে না পারায় এতদিন তারা এমপিও পাননি। এখন সরকার ডিগ্রি স্তরে একই বিষয়ের তৃতীয় শিক্ষককেও এমপিওভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও আমলতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে পড়েছে এই শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কাজ। টানা দু’বছর ধরে ঝুলে আছে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম।
এদিকে করোনার কারণে পরিবার নিয়ে চরম দুর্দশায় পড়েছেন এই শিক্ষকরা। বেসরকারি কলেজে তারা তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। এতদিন তারা বিনাবেতনে অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া সামান্য অর্থের বিনিময়ে পাঠদান করছিলেন। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি আদায় না হওয়ায় তৃতীয় শিক্ষকদের সেই অর্থ দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে কলেজগুলো। আবার দেশের অধিকাংশ এলাকা লকডাউন থাকায় টিউশনিও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের। এ অবস্থায় দ্রুত এমপিওভুক্তি অথবা আর্থিক প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন এই শিক্ষকরা।
বাংলাদেশ ডিগ্রি (তৃতীয়) শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুমানা পারভীন বলেন, ২০১০ সালের পরে নিয়োগ পাওয়া ৮৪১ জন ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকের এমপিওভুক্তি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দফায় দফায় মিটিং করেছে। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। করোনা মহামারিতে এই শিক্ষকরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছেন। শিক্ষক হওয়ায় তারা ত্রাণের লাইনেও দাঁড়াতে পারেন না, কারও কাছে হাতও পাততে পারছেন না। এই দুর্দিনে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, দ্রুত আমাদের এমপিওভুক্তি দিন, নইলে অন্তত আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে এতগুলো পরিবারকে রক্ষা করুন।
জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি কলেজে কোনো বিষয়ে ডিগ্রি পড়াতে গেলে অন্তত তিনজন শিক্ষক থাকতে হবে। অনার্স পড়াতে গেলে চারজন শিক্ষক লাগে। অথচ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়ম অনুসারে, একটি বিষয়ে মাত্র দু’জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারেন। এই দু’জনের বেতন সরকার থেকে দেওয়া হয়। একই বিষয়ের তৃতীয় শিক্ষকের বেতন-ভাতা কলেজ তহবিল থেকে পরিশোধ করতে হয়। সরকারি এ নিয়মের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের সব ডিগ্রি কলেজে বিষয়ভিত্তিক তৃতীয় শিক্ষকরা এতদিন এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তবে বিদ্যমান জটিলতা কেটে গেলে তারাও পাবেন এই সুবিধা।
বাংলাদেশ ডিগ্রি (তৃতীয়) শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো মতামতে বলেন, এমপিওভুক্তি ডিগ্রি কলেজের জনবল কাঠামো-২০১০ নীতিমালা প্রকাশের পরে বিধি অনুযায়ী সারাদেশে ৮৪১ জন তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের এমপিওভুক্ত করা হলে বছরে সরকারের ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। মাউশি ইতিবাচক মতামত দিলেও এই শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কার্যক্রম মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আটকে থাকছে। কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে।
এ নিয়ে চলতি বছরও মন্ত্রণালয়ে দুটি সভা হয়েছে। ওই সভায় অংশ নেওয়া মাউশির উপপরিচালক এনামুল হক হাওলাদার বলেন, মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আরেকটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। ওই কমিটি তৃতীয় শিক্ষকদের বিষয়গুলো বিশ্নেষণ করে দেখবে। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে করোনোর বন্ধের কারণে আদেশ জারি করা যায়নি।
তৃতীয় শিক্ষকদের নেতা রুমানা পারভীন বলেন, একই কলেজে একই বিষয়ে তিনজন সহকর্মীর মধ্যে দু’জন সরকারি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন, অন্যজন বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি দুর্ভাগ্যজনক। সব শিক্ষকই একই শিক্ষাগত যোগ্যতায় নিয়োগ পেয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন। এক যাত্রায় দুই ফল কেন হবে? সৌজন্যে ::সমকাল
Discussion about this post