ক্রীড়া ডেস্ক
চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা খান পরিবারের বিলাসবহুল বাড়িটি নজর কাড়বে যে কারোরই। এই খান পরিবারে সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসও। সাবেক অধিনায়ক চাচা আকরাম খানের পর দুই ভাতিজা নাফিস ইকবাল ও আজকের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল এই খান পরিবারেরই সদস্য। ক্রিকেটের বাইরে প্রভাবশালী ব্যবসায়িক পরিবার হিসাবেও চট্টগ্রামে বেশ কদর এই খান পরিবারের।
কিন্তু সম্প্রতি তামিম ইকবালের সাথে লাইভ আড্ডায় এসে সদ্য বিদায়ী অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার দেওয়া এক তথ্যে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তামিমের ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে বড় ভাই নাফিস ইকবালের অবদান অনস্বীকার্য। বাবার মৃত্যুর পর বড় ভাই নাফিসই ছায়া হয়ে আগলে রাখেন আজকের দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে।
নাফিসের অবদানের কথা বলতে গিয়ে মাশরাফি জানান, ‘তোর এতদূর আসার পেছনে তোর ভাইয়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। যে যাই বলুক, তোর ভাইকে আমি কাছ থেকে দেখেছি। তোর জন্য অবিশ্বাস্য ত্যাগ স্বীকার করেছে। ওয়ান পেন্স বার্গার খেত সে। আমি ওকে একদিন বললাম- শরীরকে না দিলে তুই বাঁচবি কীভাবে, আর খেলবিই বা কীভাবে? পরে বুঝেছি তোর জন্যই এসব করত। চাইত তুই যেন একটা ভালো ব্যাট দিয়ে খেলতে পারিস।’
একটা স্বনামধন্য স্বচ্ছল পরিবারের আর্থিক কষ্টের বিষয়টা যে কাউকেই বিভ্রান্ত করতে পারে। মাশরাফির মন্তব্যকে অবশ্য ব্যাখ্যা করেছেন তার বন্ধু নাফিস ইকবাল নিজেই। তার মতে টাকা বাঁচানোর অভ্যাসটা পুরোপুরি ভুল নয়, তবে তাদের পরিবার কখনোই অস্বচ্ছলতার মধ্য দিয়ে যায়নি। বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ১০ বছর বয়সী ছোট ভাই তামিমের জন্য বাড়তি একটা দায়িত্বের জায়গা তৈরি হয়েছে নাফিসের।
জাতীয় দলের জার্সিতে ১১ টেস্ট ১৬ ওয়ানডে খেলা নাফিস বলেন, ‘তামিমের প্রতি আমার যে আত্মত্যাগ, একটা ভাইয়ের একটা ভাইয়ের প্রতি যে আত্মত্যাগ থাকে আমার সেটা ছিল। আমার ভূমিকাটা একটু বেশিই ছিল। কারণ আমার বাবা আমাদের খুব ছোট বয়সে ছেড়ে চলে যান। তখন আমার বয়স ছিল ১৫ বছর, তামিমের দশ বছরের মত। তখন আমার আলাদা একটা দায়িত্ব ছিল।’
এক পেন্স বার্গার খাওয়ার বিষয়ে মাশরাফির করা মন্তব্যকে নিছকই মজা হিসেবে নিচ্ছেন নাফিস, ‘গতকাল আড্ডায় যেটা হয়েছে। অনেকসময় অনেক মজা হয়, এক পেন্স বার্গারের যে কথাটা বলেছে, এটা আসলে তেমন কিছু না। এটা মনেহয় মাশরাফি মজা করে বলতে পারে, বা কথার ছলে বলতে পারে। এক পাউন্ডও হতে পারে (হাসি)।’
স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে হলেও বাবার মৃত্যুর পর বড় ছেলে হিসেবে বাড়তি দায়িত্বের জায়গা থেকে টাকা বাঁচানোর অভ্যাস নাফিসের ছিল সেটাও অস্বীকার করেননি, ‘তবে টাকা বাঁচানোর যে কথাটা বলেছে, সেই সময় টাকা পয়সা বাঁচানোর চিন্তাভাবনা ছিল আমার। আমাদের পরিবার ঐতিহ্যবাহী খান পরিবার। আমি বলবো না আমাদের পরিবার অসচ্ছল ছিল। তবে বাবা না থাকায় পরিবারের নিয়ন্ত্রণ চাচার হাতে ছিল। কিছু ক্ষেত্রে তো আপনি সবসময় গিয়ে চাইতে পারবেন না, আমাক এটা দেন, আমাকে ওটা দেন।’
‘বাবার পর যদি কারো কাছে অবদার থাকে তাহলে সেটা বড় ভাইয়ের কাছে। তো সেই জায়গায় একটা দায়িত্ববোধ থাকে। খান পরিবার কখনোই অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যায়নি, তবে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের ব্যক্তিগত কিছু জিনিস আমাদেরকেই দেখতে হতো। বাবা যখন ছিল তখন কিন্তু আমার এসব চিন্তা করতে হতো না
Discussion about this post