আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনের বাইরে ইউরোপ হয়ে উঠেছিল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের উপকেন্দ্র। শুরুর দিকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল ইতালিতে। প্রতিদিনই শত শত মানুষ যোগ হচ্ছিল মৃত্যুর মিছিলে। সেখানে মৃত্যু এখনো থেমে নেই। কিন্তু করোনায় মৃত্যুর মোট সংখ্যার হিসাবে গত মঙ্গলবার ইতালিকে টপকে গেছে যুক্তরাজ্য। ইউরোপ মহাদেশে এই দেশেই এখন করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বে দ্বিতীয়, যুক্তরাষ্ট্রের পর।
করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৩৭ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু ২ লাখ ৬০ হাজার ৭০৩। সুস্থ হয়ে উঠেছেন সাড়ে ১২ লাখ ৭৫ হাজার।
চীনের উহানে গত ৩১ ডিসেম্বর অজ্ঞাত কারণে মানুষের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরপর গত ১২৭ দিনে করোনা মহামারি বিস্তারের চিত্র এটি।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডোমিনিক রাব মঙ্গলবার করোনা মহামারি বিষয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘২৯ হাজার ৪২৭ জনের প্রাণ গেছে। দেশের জন্য এটি মর্মান্তিক বিষয়। জাতি এর আগে এই পরিসরে এমনভাবে এতটা প্রাণহানি দেখেনি।’ যুক্তরাজ্যে ওই দিন করোনায় মৃত্যু হয় ৬৯৩ জনের। আর গতকাল মারা গেছে ৬৪৯ জন। সবমিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা গতকাল পর্যন্ত ৩০ হাজার ৭৬ জন। দেশটিতে শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২ লাখ পেরিয়ে গেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবর অনুযায়ী, ইতালিতে গতকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৬৮৪ জনের। এর মধ্যে গতকাল মারা গেছেন ৩৬৯ জন। এ পর্যন্ত সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার। ইউরোপে করোনায় প্রাণহানিতে এত দিন শীর্ষে ছিল ইতালি। কিন্তু এখন যুক্তরাজ্য সেই জায়গা দখল করেছে। তবে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে নারাজ। তিনি বলেছেন, ‘এই মহামারি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না বলেই আমি মনে করি। বিশেষ করে, মৃত্যুর সার্বিক তথ্য আন্তর্জাতিকভাবে না পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছুই বলা যাবে না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্য ও ইতালি একই পদ্ধতিতে মৃত্যুর হিসাব করেছে। অন্যদিকে ইতালির চেয়ে যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা বেশি। তা ছাড়া বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যুর সার্বিক তথ্যও এখনো পাওয়া যায়নি। কাজেই করোনায় মৃত্যুহার কোন দেশের বেশি, তা হিসাব করার সময় এখনো আসেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা এ–ও বলছেন, যুক্তরাজ্যে করোনায় মৃত্যুর সরকারি হিসাবের চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। সম্প্রতি দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান বিভাগের এক প্রতিবেদনেও এমন দাবি করা হয়েছে।
ইউরোপের দেশ স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, স্পেনে গতকাল মৃত্যু হয়েছে আরও ২৪৪ জনের। টানা তিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা ২০০-এর নিচে থাকার পর গতকাল দেশটিতে এ সংখ্যা আবার বেড়েছে। দেশটিতে মৃত্যু ২৬ হাজার ছুঁই ছুঁই। এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি।
জার্মানিতে গত মঙ্গলবার করোনায় কারও মৃত্যুর তথ্য জানা যায়নি। এদিন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৮৫৫ জন। এ নিয়ে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬ হাজার ৯৯৩ জন। আর ফ্রান্সে মঙ্গলবার মারা গেছেন ৩৩০ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যু সাড়ে ১৫ হাজার ছাড়াল। ফ্রান্সে শনাক্ত হওয়ার রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।
এদিকে রাশিয়ায় গতকালও ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো দেশটিতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হলো। দেশটিতে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৫৩৭ জন। মৃত্যু বাড়ছে ব্রাজিলেও। দেশটিতে মঙ্গলবার করোনায় ৫৭৮ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে ব্রাজিলে মোট মৃত্যু ৮ হাজার ছুঁই ছুঁই।
ইউরোপে ছড়ানোর পর করোনাভাইরাস তাণ্ডব শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিকে এখনো এর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। দেশটিতে ১ মে থেকে টানা চার দিন মৃত্যু ২ হাজারের কম ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার আবার করোনায় মৃত্যু ২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এদিন মারা গেছেন ২ হাজার ৩৫০ জন। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ৭২ হাজার ছাড়িয়েছে। শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ ছুঁই ছুঁই।
সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে প্রতিবেশী ভারতেও। এনডিটিভি জানায়, দেশটিতে গতকালও ১২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভারতে করোনায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন মারা গেলেন। শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছুঁই ছুঁই। সংক্রমণ বাড়ছে পাকিস্তানেও। ডন-এর অনলাইনের তথ্যমতে, দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৩ হাজারের বেশি। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫৩৫ জন।
Discussion about this post