মাছুম বিল্লাহ
বিশ্বব্যাপী সংক্রামক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এবং তার আরও বিস্তাররোধে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাবিষয়ক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সারা পৃথিবীর শিক্ষাব্যবস্থাই একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের জীবন বাঁচাতে এ ধরনের উদ্যোগ অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে সামনে চলে এসেছে। তাই গ্রহণ করা হয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ও অর্থনীতিবিষয়ক বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা। সে হিসেবে শিক্ষার তেমন কোনো পরিকল্পনার কথা আমরা শুনছি না। অর্থাৎ শিক্ষা এখনও অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে। শিক্ষাকে অবহেলা করে আমরা কি সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাব? আমরা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছি। মধ্যম কিংবা উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে আমাদের জাপান, কোরিয়া ও তাইওয়ানের মতো দক্ষ হতে হবে। আর সেই দক্ষতার চাবিকাঠিই হচ্ছে শিক্ষা যার ওপর জোর দিতেই হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে এখন লকডাইন চলছে। আমরা জানি আমাদের দেশসহ বহু বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। তাদের মধ্যে প্রায় সবাই এখন পরিবার-পরিজনবিহীন আটকে আছেন ঘরে। এদের মধ্যে যাদের পড়ার ফান্ডিং বা বৃত্তি নেই তারা খণ্ডকালীন কাজ করে পড়ার ও থাকার খরচ চলাতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের লকডাউনে সেই কাজ হারিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে আছেন। আর অস্ট্রেলিয়ার সরকার তো ইতোমধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী বিশেষ করে খরচ চালানোর সামর্থ্য যাদের নেই তাদের নিজ দেশে ফেরত চলে যেতে বলেছে। যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পরিকল্পনা করছিলেন, তারা এখন বেকার।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক বাজেটে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এর প্রভাব পড়বে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপরও। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা পিএইচডি বা স্নাতকোত্তর করছেন, গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ বা ফেলোশিপ করছেন, তারা হয়তো অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। সহজে বোঝা যাচ্ছে যে, আগামী দুই বছর কিংবা তারও অধিককাল শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ অনেকটাই কম হবে কারণ উন্নতবিশ্বও এবার দেখেছে যে, তাদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। আর তাই বড় বাজেট যাবে সেদিকে যাওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। ফলে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি করার জন্য যেসব বৃত্তি বা অনুদান দেয়া হতো তাতে অনেকটাই ভাটা পড়বে। শিক্ষার্থীরা পিএইচডি বা স্নাতকোত্তর শেষ করার পর চাকরির চিন্তা করতেন ওইসব দেশে সেটিও এখন আর আগের মতো সহজে হবে না।
আমরা জেনেছি যে, যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে ১০ শতাংশ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের নিজের দেশের লোক যখন বেকার তখন দেশের বাইর থেকে যারা আছেন বা যারা যাবেন তাদের জন্য কাজ দেয়ার প্রশ্ন বহুদূর। মার্কিন সরকার সাম্প্রতিককালে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের যে প্রণোদনা বিল পাস করেছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বরাদ্দ আছে ১৪ বিলিয়ন ডলার যা আর্থিক ক্ষতির তুলনায় নগণ্য।
বাংলাদেশে পাবলিক ও প্রাইভেট মিলে প্রায় আট থেকে ১০ লাখ ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ২০ বছর আগেও দৃশ্যপট এ রকম ছিল না। এই দুই মাসের লকডাউনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরেক ধাপ এগিয়ে থাকল। কারণ এদের মধ্যে অনেকগুলোই অনলাইনে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকগুলোই পিছিয়ে থাকল। কেন এ রকম হচ্ছে? এখনও ইনফ্রাস্ট্রাকচার চিন্তা করলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনেক এগিয়ে। রিসোর্সেও অনেক এগিয়ে। তাহলে পিছিয়ে পড়ার কারণ কী?
আমেরিকা থেকে বাংলাদেশি কিছু কিছু শিক্ষক বলেছেন, তাদের লেখাপড়ার এক ঘণ্টাও ব্যাঘাত হয়নি কারণ এদের এখানে অনলাইনের অবকাঠামো তৈরি ছিল। স্রেফ যথাযথ পরিকল্পনা করে ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই সব অনলাইনে। তারা লকডাউনে কিন্তু লেখাপড়ার কার্যক্রম বন্ধ নেই। অথচ আমাদের উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘আরও কতদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে, কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা আগে নিরূপণ করতে হবে। তবে সহসা বিশ্ববিদ্যালয় খুললে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্ষতি পোষানো যেতে পারে। কিন্তু ক্লাস না নিয়ে, সময় না দিয়ে পরীক্ষা নেয়া যাবে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট একেবারে কমে এসেছিল, এখন সেটা বেড়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল বসে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এখন বলব আগে জীবন বাঁচাতে হবে। এ জন্য সবাইকে ঘরে থাকতে হবে।’ তার মানে হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার উপযুক্ততা ও সামর্থ্য সেভাবে অর্জন করেনি।
পাঠদানের জন্য শিক্ষকরা জুম অ্যাপ্লিকেশন, ফেসবুক লাইভ, গুগল ক্লাসরুম- ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। এছাড়া বিনামূল্যে লেখাপড়া করা যায় এমন ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে। যাতে শিক্ষার্থীরা সহজেই বাসা থেকে এগুলো ব্যবহার করতে পারে। এদিকে কয়েকজন শিক্ষাউদ্যোক্তা ঘরবন্দি শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাসঙ্গিক কন্টেন্টও তৈরি করছেন। তবে প্রযুক্তিগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইন ক্লাস ও ডিজিটাল শিক্ষার ইতিবাচক প্রভাব থাকলেও শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার এই উদ্যোগ সবার ক্ষেত্রে এক রকম হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। তাই গণমাধ্যম ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পাঠদানের এ প্রক্রিয়াটি বৈষম্যপূর্ণও বটে। কেননা বাংলাদেশের মাত্র ৪০ শতাংশ তরুণ ইন্টারন্টে ব্যবহারের আওতায় রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের এখনই ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন ও বিনামূল্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারন্টে সুবিধা দরকার। এগুলো না হলে অনলাইন ক্লাসে যোগ দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের মোবাইল ডেটার ওপর নির্ভর করতে হবে। যা নিঃসন্দেহে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন হতে পারে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সহায়তার অভাবে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। তাদের প্রতিটি বিভাগে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি থাকায় বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।
ইউজিসির হিসাবে বর্তমানে ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে ৫৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাকি সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইনে ক্লাসে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। আর দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৫টি। এর কয়েকটি এখনও শিক্ষাকার্যক্রম অনলাইনে শুরু করতে পারেনি। অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা চালু নিয়ে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ এর বিরোধিতা করে ফেসবুকে গ্রুপ খুলেছে , কেউ কেউ রাস্তায় মানববন্ধনও করেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে যে, এ রকম উসকানিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর পেছনের ষড়যন্ত্র আছে বলে তারা মনে করেন।
আবার কেউ কেউ বলছেন, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এখন গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন যেখানে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা নেই, এমনকি বিদ্যুৎও নেই। তাদের মধ্যে যাদের ওয়াইফাই কানেকশন নেই, ব্রডব্যান্ড লাইন নেই তাদের নির্ভর করতে হবে মোবাইল ডাটার ওপর। মোবাইল ডাটার খরচ দুই ঘণ্টায় কমপক্ষে দুই থেকে তিনশ টাকা লাগবে যার খরচ বহন করা সবার জন্য সম্ভব কিনা সেটি একটি প্রশ্ন।
এগুলো সবই যুক্তির কথা। তবে, আমাদের মনে রাখতে হবে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকগুলো খুবই ভালো করছে যা অনেকের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীও পড়াশুনা করছে যা দেশের জন্য মঙ্গলজনক। কোনোভাবেই বা বাইরের কোনো উসকানিতে আমরা যেন গার্মেন্টস শিল্পের মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিণতি হতে না দেই।
একটি বিষয় জেনে খুব ভালো লেগেছে যে, বিশ্বের বড় বড় সিটি করপোরেশনের একটি শিক্ষাবিভাগ থাকে। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ আবার স্কুল শুরু করার জন্য পাঁচটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এর পূর্বে তিনি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরুর আগ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেন। মেয়র বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রাখার জন্য আগামী সেপ্টেম্বরে সকল স্কুল খোলার জন্য সিটি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সিটি করপোরেশনের যে একটি শিক্ষাবিভাগ থাকে এবং সিটি করপোরেশন যে, সিটির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা করে এটি থেকে আমাদের শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছু।
মেয়র শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে শিক্ষা প্রদান করা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের শিক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রদান করা এবং আগামী গ্রীষ্মের ছুটির পর যথাসময়ে আবার স্কুল কার্যক্রম শুরু করা, প্রত্যক শিক্ষার্থী যাতে বাসায় দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় স্টেশনারি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি এপ্রিল মাসের মধ্যে সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। বাসায় বসে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্য সহযোগিতার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করার কথা বলেছেন।
মেয়র বলেন, ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী এক স্কুল শেষ করে অন্য স্কুলে গিয়ে ভর্তি হবে আর তারা যাতে এই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারে তা নিশ্চিত করা। এখানে তিনি পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন এক গ্রেডিং পলিসি ব্যক্ত করেন। যেখানে অষ্টম ও টুয়েলভথে যে শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে ব্যর্থ হবে তারা গ্রীষ্মকালীন সেশনে তা শেষ করতে পারবে। ইলিমেন্টারি ও মিডেল স্কুল শিক্ষার্থীদের বেলায় ‘মিট স্ট্যান্ডার্ড ও ‘নিউ ইমপ্রুভমেন্ট’ এই ভিত্তিতে গ্রেড নির্ধারণ করা হবে। তবে, হাইস্কুল শিক্ষার্থীরা স্ট্যান্ডার্ড গ্রেডিং পাবে কিন্তু তাদের ক্লাস ‘পাস’ কিংবা ‘ফেল’ ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে। তার অর্থ হচ্ছে, এতে তাদের গ্রেড জিপিএর ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
দেখা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েই অনলাইনে শিক্ষার ব্যবস্থা আছে এসব দেশে এবং সেটির ব্যাঘাত হলে সিটি করপোরেশন থেকেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়। আর উচ্চশিক্ষায় তো অনলাইন সুবিধা ব্যাপকতর যা আমি নিজেই দেখে এসেছি।
বাংলাদেশের ইউজিসি এক খসড়া নির্দেশনায় বলেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলমান সেমিস্টারের ক্লাস-পরীক্ষা অনলাইনে নিতে পারলেও জুলাইয়ের আগে নতুন সেমিস্টারের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে না, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে জুনে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলমান সেমিস্টারের ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে নেয়া যাবে। তবে নতুন কোনো সেমিস্টারের কার্যক্রম আগামী জুলাইয়ের আগে শুরু করতে পারবে না যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মার্চ থেকেই অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। এর একটি কারণ তো আমরা বুঝতেই পারছি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি শিক্ষার্থী বেতনের ওপর চলে, তারা রাষ্ট্রীয় কোনো অনুদান পায় না। দীর্ঘদিনের এই বন্ধে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা তিনটি উপায়ের যেকোনো একটি অনুসরণ করতে বলেছে ইউজিসি। প্রথমটি হচ্ছে, অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস-পরীক্ষা দুটোই নেয়া যাবে। তবে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর ব্যবহারিক পরীক্ষা কোনোভাবেই অনলাইনে নেয়া যাবে না। পরীক্ষাগুলোতে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা অবলম্বনের কথাও বলা হয়।
দ্বিতীয়টি হচ্ছ, অনলাইনের মাধ্যেমে ক্লাস সম্পন্ন করে পরবর্তী সেমিস্টারের কোনো একসময় পরীক্ষা নিয়ে নেয়া। এক্ষেত্রে বড় পরিসরে পরীক্ষা নিতে প্রতিবন্ধকতা থাকলে এর আকার সীমিত করা যাবে।
আর তৃতীয়টি হচ্ছে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় করোনা পরিস্থিতির আগে ন্যূনতম ৭০ শতাংশ ক্লাস সম্পন্ন করেছে তাদের এখন যেকোনো ক্লাস-পরীক্ষা না নিলেও চলবে। পরবর্তী সেমিস্টারে বাকি কার্যক্রম সমন্বয় করতে পারবে।
এগুলো অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কথা। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের বিষয়গুলোতে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
লেখক : শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক
Discussion about this post