আর্নিয়া খানম আন্নি
বর্তমানে উচ্চশিক্ষা শেষে যে হারে গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে, সে হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে না। সে জন্য বেকারত্ব বাড়ছে। বিবিএসের ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিধারী উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার এখন ১২ শতাংশ। সংখ্যার বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেকার প্রায় আট লাখ নারী-পুরুষ। এমতাবস্থায় উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে অনেকেই উদ্বুদ্ধ করছেন। যিনি কর্মসংস্থানের জন্য নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তা শুধু নিজেই উপার্জন করেন না বরং আরও কয়েকজনকে উপার্জনক্ষম করে তোলেন। মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০০৪ সালে ফেসবুকের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ঝুঁকি কোনো ঝুঁকি না নেওয়া’। যারা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তারা ঝুঁকি নিয়েই এ পথে পা বাড়ান। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক সফল নারী-পুরুষ রয়েছেন।
লুনা সামসুদ্দোহা (জন্ম: ৪ অক্টোবর ১৯৫৩- মৃত্যু: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তা। তিনি নানাবিধ সামাজিক তৎপরতার জন্য বিশিষ্ট ছিলেন। বাংলাদেশ সরকার উদ্যোক্তাদের জন্য নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কম্পিউটার, সেলাই, ড্রাইভিং, রান্না, ইলেকট্রিক, পাটশিল্পসহ বিভিন্ন রকম কোর্সের ব্যবস্থা করেছে এবং কোর্স পরবর্তী সার্টিফিকেটসহ অর্থ প্রদান করে থাকে। এ ধরনের কোর্স একজন শিক্ষার্থীকে কাজে উদ্বুদ্ধ করতে অনুপ্রেরণা জোগায়।
সরকার উদ্যোক্তা হওয়ার পথে প্রেরণা জোগাচ্ছে। করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সরকার প্রণোদনা দিয়েছে। অনেক সময় সরকারি সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অনেকেই জানতে পারে না। সরকার যখন প্রণোদনা দেয় তখন যথোপযুক্ত ব্যক্তির কাছে যেন তা পৌঁছে, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পুঁজি কম থাকে, তাই প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ীর চেয়ে ব্যাংক ঋণ পাওয়া তাঁর পক্ষে অনেক বেশি কঠিন। গ্রাম পর্যায়ে নারী-পুরুষদের এসব উদ্যোগে তাদের সঠিক ধারণা দেওয়া এবং আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে হবে।
মনে রাখতে হবে, চাইলেই উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। এর পেছনে থাকে কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস। সফল উদ্যোক্তা হতে হলে তাঁর মাঝে থাকতে হবে সুনির্দিষ্ট কাজ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান ও দক্ষতা। কৌশল ও ঝুঁকি গ্রহণেও তাঁর আগ্রহ থাকতে হবে। নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি, অর্থ ব্যবস্থাপনা, হিসাবনিকাশে দক্ষ হওয়া, গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন, অভিযোগ গ্রহণ এবং নিজেকে অবশ্যই সাহসী হতে হবে। পাশাপাশি ব্যর্থতাকে গ্রহণের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের ক্ষমতা ও যাবতীয় গুণের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্বাস স্থাপন জরুরি– সব বাধা অতিক্রম করেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। সততার সঙ্গে নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।
উদ্যোক্তাদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সমাজ যদি শিক্ষিতদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করে এবং নতুন উদ্যোক্তারা যদি ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ সহায়তা পান তবে উদ্যোক্তার পথ সহজ হবে। চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হলে কণ্টকাকীর্ণ পথ এক সময় হবে মসৃণ।
আর্নিয়া খানম আন্নি: শিক্ষার্থী, সরকারি আনন্দমোহন কলেজ, ময়মনসিংহ
Discussion about this post