নিউজ ডেস্ক
দেশবরেণ্য পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ১১ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের ৯মে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।
বিশিষ্ট এই পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালনে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ, এম এ ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হলেও এবার করোনাভাইরাসের কারণে তা হচ্ছে না।
প্রাণঘাতী ভাইরাসটির কারণে পরিস্থিতি বিবেচনায় সব আনুষ্ঠানিকতা স্থগিত করা হয়েছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রদ্ধাঞ্জলিসহ ফাতেহা পাঠ ও জিয়ারতে বাধা দেয়া হবে না বলে জানান প্রয়াত বিজ্ঞানীর ভাতিজা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ড. এম এ ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন পীরগঞ্জের চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়াদত হোসেন বকুল।
বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে ১৯৪২ সালের ১৬ ফ্রেরুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুল কাদের মিয়া এবং মাতা ময়জুন নেছা বিবি। তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন সুধা মিয়া নামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৬১ সালে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান এবং ১৯৬২ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
ওয়াজেদ মিয়া ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবছরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ এবং ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি পশ্চিম জার্মানিতে পরমাণু শক্তি বিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ইটালিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৫-৮২ সালে তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি পুনরায় পরমাণু শক্তি কমিশনে যোগ দেন এবং ১৯৯৯ সালে এর চেয়ারম্যান হিসেবে অবসর নেন। তার গবেষণামূলক ও বিজ্ঞান বিষয়ক বহু প্রবন্ধ দেশি-বিদেশী সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা Fundamentals of Electromagnetics (1982), Fundamentals of Thermodynamics (1988), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ, বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র। বিজ্ঞানে অবদানের জন্য বিক্রমপুর স্যার জগদীশচন্দ্র বসু সোসাইটি তাকে ‘স্যার জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদক-৯৭’ দেয়।
ড. ওয়াজেদ বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে নীরবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন। ষাটের দশকে তিনি ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হন এবং কিছু দিন জেল খাটেন।
১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের পাশে থেকে তাদের সাহস ও শক্তি যুগিয়েছিলেন।
মৃত্যুর পর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
Discussion about this post