রাবি প্রতিনিধি
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ১৬ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে শিক্ষার্থীদের যেন সেশনজটে পড়তে না হয় সেজন্য অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার কথা জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ও প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকায় এটি সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী সংখ্যা অধিক হওয়ায় অনলাইন ক্লাস পরিচালনা না করার অন্যতম কারণ। কেননা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ কোনটিই নেই। আর সেজন্য অনলাইনে ক্লাস চাইছেন না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
তবে ব্যক্তি উদ্যোগে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে বেশ কিছু ক্লাস নিয়েছেন রাবির আইন অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক ড. এম. আহসান কবির, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু প্রমুখ।
অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক আহসান কবীর বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার মতো যথাযথ আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নেই। তাছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরও এতো বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীদের মাঝে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর মতো যথেষ্ট প্রযুক্তিও নেই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা কম থাকায় এবং শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট আর্থিক সচ্ছলতা থাকায় সেখানে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার বিষয়টি সম্ভবপর হচ্ছে যেটি আমরা পারছি না। “
তিনি আরো বলেন, আমরা ক্লাসগুলো সব শিক্ষার্থীদের উপকারের কথা ভেবেই নিই। এ অবস্থায় অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু হলে অনেক শিক্ষার্থীই ক্লাস থেকে বঞ্চিত হবে। ব্যক্তি উদ্যোগে আমার স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিশ্চিত করে বেশ কয়েকটি ক্লাস নিয়েছিলাম। তবে সেটি সম্ভব হয়েছিল স্নাতকোত্তরে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকার জন্য। তবে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য অনলাইনে ক্লাস নেয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক ড. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, “অনলাইনে ক্লাস নেয়ার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ অপরিহার্য। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গতকালই (বৃহস্পতিবার) আটবার লোডশেডিং হয়েছে। বিদ্যুতের এ অবস্থায় অনলাইনে ক্লাস নেয়া সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি। ”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন বলেন, কিছু ল্যাবে অনলাইনে ক্লাস তৈরি ও পাঠদানের সুযোগ সুবিধা আছে। তবে বড় সমস্যা হলো মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সুবিধা আছে। আর মোবাইল ফোনে করে এই ক্লাস স্ট্রিমিং ধরতে পারবেন না শিক্ষার্থীরা। ইউটিউবে দিয়ে রাখলে হয়তো শিক্ষার্থীরা দেখে নিতে পারবেন। কিন্তু সেই সুবিধা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই।
অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ইউজিসি অনলাইন ক্লাসের নির্দেশনা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি । তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে অনলাইন ক্লাস সম্ভবপর নয় বলে মত দেন তিনি।
এর আগে গত ৩০ই এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে ইউজিসির অনলাইন বৈঠকে করোনার কারণে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজসমূহে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
বৈঠকে আরো সিদ্ধান্ত হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটি তাদের পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল বিষয় ঠিক করবে। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা কীভাবে নেবে, সে বিষয়ে করণীয় ঠিক করে দেবে কমিশন।
Discussion about this post