অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী
জ্ঞান
আহরণ
ও
বিতরণের যে
প্রক্রিয়া মানুষকে আলোকিত
করতে
সাহায্য করে
তাকেই
শিক্ষা
বলে।
কোন
বিষয়
চর্চা
বা
অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ
যে
ধারণা
ও
জ্ঞান
অর্জন
করে
এবং
ঐ
জ্ঞানের জ্যোতির দ্বারা
নিজে
আলোকিত
ও
সমাজকে
জ্যোর্তিময় করতে
সহায়তা
করে
শিক্ষা
তাকেই
বলে।
যে
প্রক্রিয়ায় মানুষের মন-মনন, মানসিক উৎকর্ষ
সাধন
করে,
মানুষের আচার
আচরণ,
মন
ও
আত্মার
ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন
ঘটায়,
মেজাজ
ও
দৃষ্টিভঙ্গির উপর
সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের প্রভাব
ফেলে
এমন
কর্ম
প্রক্রিয়াকে শিক্ষা
বলে।
আর
শিক্ষক
হচ্ছেন
উল্লিখিত শিক্ষা
প্রক্রিয়াকে উস্কে
দেয়া,
উৎসাহিত করা
অনুপ্রেরণা-দানকারী ব্যক্তি। তিনি
সভ্যতার অভিভাবক, সমাজের
অভিভাবক, সমাজের
প্রতিনিধি। কার্যত
শিক্ষক
বলতে
একজন
আলোকিত,
জ্ঞানী,
গুণী
ও
বুদ্ধিদীপ্ত পন্ডিত
ব্যক্তিকে বুঝায়,
যিনি
বিবর্তনের অনুঘটকের দায়িত্ব পালন
করেন।
তিনি
শিক্ষা
প্র্রিয়ার নিবেদিতপ্রাণ সেবক,
ব্যবসায়ী নন।
তিনি
তাঁর
আচার-আচরণ, মন ও
মননে
নিজেই
বটবৃক্ষের ছায়া।
তাঁর
সাফল্যের ভিত্তি
হল
পেশাগত
জ্ঞান
ও
দক্ষতা,
নির্মল
চারিত্রিক গুণাবলী, জ্ঞান
সঞ্চারণে আন্তরিক সদিচ্ছা ও
প্রচেষ্টা। তাই
শিক্ষক
বলতে
এমন
এক
অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ববান জ্ঞানী,
গুণী
ও
পন্ডিত
ব্যক্তিকে বুঝায়,
যিনি
শিক্ষার্থীকে শিখন
প্রক্রিয়ায়, জ্ঞান
অন্বেষণ ও
আহরণে,
মেধা
বিকাশ
ও
উন্নয়নে, শিক্ষার্থীর চরিত্র
গঠনে,
নৈতিক
ও
মানসিক
গুণাবলী বিকাশে
এবং
সমাজ
বিবর্তনে অনুঘটক
ও
সুশীল
সমাজ
তৈরির
সহায়তা
দানে
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের প্রধান
হচ্ছেন
অন্য
শিক্ষকদের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাই
প্রধানের দায়িত্বও বেশি।
শিক্ষকদের নিকট
সমাজের
প্রত্যাশা অনেক।
শিক্ষকগণ সমাজের
প্রত্যাশা শতকরা
যত
ভাগ
পূরণ
করতে
পারবেন
সমাজও
ন্যূনতম তত
ভাগ
সম্মান
শিক্ষকদের দেবেন।
অবশ্যই
স্বীকার করতে
হবে
যে,
এখন
গিভ
এন্ড
টেকের
সময়
যাচ্ছে। সমাজের
প্রত্যাশা মোতাবেক একজন
শিক্ষক
হবেন
জ্ঞান
তাপস,
মেধাবী,
বুদ্ধিদীপ্ত, ব্যক্তিত্ববান, চৌকস,
শ্রেণী
কক্ষে
আন্তরিক পাঠদানকারী ও
জ্ঞান
বিতরণে
আগ্রহী। তিনি
সুবিচারক, সুপরীক্ষক, শিক্ষার মান
নিয়ন্ত্রক, যুক্তিবাদী, গবেষক
এবং
উদ্ভাবকও। তিনি
সঠিক
পথের
দিশারী,
পথ
পরিদর্শক। অবশ্যই
সৎ
ও
ধার্মিক। শিক্ষক
সহজ
হবেন,
সরল
হবেন,
নির্মল
হবেন,
হবেন
অকুতোভয় সত্যবাদী। সপ্রতিভ ব্যক্তিত্ববান, সমাজ
হিতৈষী,
পরোপকারী এবং
আধুনিকতামনস্ক সমাজ
সংস্কারক। শিক্ষক
হবেন
চারিত্রিক দৃঢ়তাসম্পন্ন, পরিশ্রমী, নিরপেক্ষ, হাস্যোজ্জ্বল, সুপরামর্শক ও
প্রাণবন্ত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সেকারণে ইংরেজী
TEACHER শব্দের
অর্থ
করা
হয়েছে
বিভিন্ন ভাবে
বিভিন্ন আঙ্গিকে।
T- Trainer, Tutor, Tolerant, Trustworthy, Transparent.
E- Efficient, Energizer, Excellence, Enlightened.
A- Amiability, Assertive, administer, Assist, Advisor, Accountability.
C- Commitment, Civil, Civilized, Courtesy, Courteous, Charisma, Charming, Cooperation, Controlling Ability
H- Honest, Humanity, Harmless, Heart.
E- Essence, Eagerness, Earnestness, Empower
R- Research, Reliable, Resourceful, Respectful.
উল্লিখিত বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় যে, শিক্ষক হবে স্নেহশীল, বিশ্বাসযোগ্য, চরিত্রবান, ধৈর্যশীল, প্রশিক্ষিত প্রশিক্ষক। তাঁর থাকবে স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্গীকার। তিনি হবেন উত্তম, দক্ষ ও সুশীল ব্যক্তি। শিক্ষার্থীদের জ্ঞান সাধনায় হবেন সহযোগিতা প্রদানের ক্ষেত্রে হৃদয়স্পর্শী ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রত্যয়ী। সাহসী, সেবাদনকারী দৃঢ়, প্রত্যয়ী, নির্মল, সৎ, মানবতাবাদী, ধার্মিক ও সমাজহিতৈষী পন্ডিত ব্যক্তি।
সমাজ যেহেতু একজন শিক্ষককে আলোকিত মানুষ হিসেবে দেখতে চায় সেকারণে একজন জ্ঞানী শিক্ষক সমাজের সুশীল মানুষের অন্যতম হিসেবে সংকীর্ণ মনের হবেন না, মোসাহেবি, দলালি বা চামচামি করবেন না, ধুমপানসহ নেশাদ্রব্য ধরবেন না, অসৌজন্যমূলক আচরণ করা থেকে বিরত থাকবেন, দলাদলি পরিহার করবেন, কপটতা থেকে দূরে থাকবেন, অসৎ সঙ্গ পরিহার করবেন, সক্রিয় দলীয় নোংরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন, হালাল খাবার খাবেন। তিনি কখনো পক্ষপাতিত্ব আচরণ করবেন না। যেহেতু চাকরিবিধির পরিপন্থী সেকারণে শুধুমাত্র অর্থলোলুপতার জন্য অনৈতিক কোচিং ব্যবসার সাথে জড়িত হবেন না। নষ্ট মওলানাদের মতো পাঠদান করিয়ে ‘হারাম’ অর্থ নেবেন না, অর্থাৎ প্রাইভেট পড়াবেন না। তিনি কখনোই দেশের কল্যাণ ভাবনা থেকে পিছিয়ে পড়বেন না। মেধা বিকাশে, অজ্ঞতা দূরীকরণে, মূল্যবোধ বৃদ্ধিতে, নৈতিকতার উন্নয়নে, উদ্ভাবনী কাজে, গবেষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে তৎপর থাকবেন। মনে রাখতে হবে একজন শিক্ষক শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষক নন, তিনি সমাজের শিক্ষক-দেশের শিক্ষক।
বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের জন্য একটি দিকনির্দেশনামূলক বিধি দিয়েছে। দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে লিখিত বিধি-বিধান চালু করেছে। বিধিগুলি সংক্ষিপ্ত। ভাবসম্প্রসারণ করলে তা হতে পারে একটি পরিপুষ্ট দলিল। বুদ্ধিমানেরা অল্পে বোঝেন। বিধায়, বুদ্ধিমানদের জন্য চাকরির শত্যাবলী বা চাকরিবিধি নামে প্রকাশিত অফিস আদেশগুলি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা উচিত। দায়িত্ব ও কর্তব্যও বটে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়াটা লজ্জার ও অপমানের। তবুও আমরা শিক্ষকগণ অনেকেই সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করি না, কর্তব্যের প্রতি নেই আমাদের একাগ্রতা। তাই শিক্ষকতা আজ ব্রত থেকে, এবাদতের অংশ থেকে ছিটকে এসে বেতনভুক্ত কর্মচারী/কর্মকর্তাদের কাতারে দাঁড়িয়েছে, যা লজ্জাজনক।
Discussion about this post