শিক্ষার আলো ডেস্ক
হঠাৎ গত ২৯ জানুয়ারি দুপুরে বাসা থেকে উধাও হয়ে যায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া তিন কিশোরী। নিখোঁজের ১০ দিন পর বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে খিলগাঁও থানা পুলিশ তাদের খোঁজ পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ব্যান্ড বিটিএসের গায়কদের বিয়ে করার স্বপ্ন ছিল পলাতক ওই তিন কিশোরীর।
গাজীপুর জেলার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে ওই তিন কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাতে উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. মামুন।
তিনি বলেন, ওই তিন কিশোরী খুবই দুরন্ত প্রকৃতির। ঘটনার দিন তারা ঢাকা থেকে গাজীপুরে চলে যায়। একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানেই বসবাস শুরু করে। শুধু তাই নয় কোরিয়ানদের মতো ফিটনেস অর্জনের উদ্দেশ্যে জিমেও ভর্তি হয়। ইন্টারনেট দেখে কোরিয়ানরা কীভাবে খায়, কি খায়—দেশটিতে যাওয়া প্রস্তুতি হিসেবে এসব শেখার চেষ্টা করছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল গার্মেন্টসে চাকরি করে যে টাকা পাবে তা দিয়ে কোরিয়ার বিটিএস ব্যান্ড দলের সদস্যদের কাছে চলে যাবে।
রুবিনা ও বর্ষা মেরাদিয়ায় আলাদা দুটি মাদ্রাসায় পড়তো, আর রিজুয়ানা পড়তো বনশ্রীর একটি স্কুলে। তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতো। সেখান থেকে ফিরে তিন বান্ধবী একে অপরের বাসায় একসঙ্গে সময় কাটাতো। স্মার্ট ফোন ছিলো তাদের নিত্যসঙ্গী । বাসা ছেড়ে যাওয়ার আগে রিজুয়ানা রিজু তার মাকে চিঠি লিখে যায়। চিঠিটিতে সে লেখে, ‘মা, আমাকে মাফ করে দাও। আমি বিটিএস-এর কাছে যাচ্ছি। সাউথ কোরিয়া যাবো। আর আমি গেলে তোমাদের তো খুব ভালো হবে— তাই না! আমাকে খোঁজার চেষ্টা করবে না। আমি বিটিএস-এর একজন মেম্বারকে বিয়ে করবো। আমি একা না আমার সাথে আরও তিন জন আছে। তোমরা আমার কোনও শখ পূরণ করো না। ভালো লাগে না, এজন্য আমি ঘর ছেড়ে গেলাম।’
কয়েক বছর ধরে কোরিয়ান পপ ব্যান্ড বিটিএসের নাম তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে।বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিটিএস নিয়ে রয়েছে অনেক উন্মাদনা, বিস্তর চর্চা, প্রচুর ভক্ত। ২০২০ সালের বিটিএসের ইংরেজি গান ‘ডায়নামাইট’ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, গানটি বিলবোর্ড টপে ছিল টানা ১০ সপ্তাহ। মাঝে করোনাভাইরাসের মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় দিতে থাকেন। সেই সময় টিকটকে ভাইরাল হয় বিটিএসের গান ‘বাটার’, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যান্ডটির গান ছড়িয়ে পড়ে।এর ফলোয়াররা ‘ফ্যানডম আর্মি’ নামে পরিচিত। নিজেদের মধ্যে এই ফলোয়ারদের অনেক অনলাইন গ্রুপ ও প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।
আরওে পড়ুন: ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে চবি শিক্ষকের সাময়িক অব্যাহতি
মনোবিজ্ঞানীদের মতে অধিকাংশ শিশু-কিশোর ইন্টারনেটের মাধ্যমে নতুন নতুন পেইজের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। যে বয়সে তাদের হাতে থাকার কথা খাতা-কলম-বই, সে বয়সে তাদের হাতে থাকে মোবাইল-ল্যাপটপের মতো অনলাইন জগতে বিচরণের উপকরণ। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম ইন্টারনেটের মাধ্যমে অবাধ তথ্যভান্ডারে বিচরণের মধ্য দিয়ে নিজেদের চিন্তা, জ্ঞানের পরিধি ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে পারছে ঠিকই। তবে এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন না থাকায় নানা ধরনের বিপদেও হাবুডুবু খাচ্ছে। এই অনলাইন জগতে আসক্ত হয়ে কখন যে অনিশ্চয়তার জগতে পা বাড়াচ্ছে টেরও পাচ্ছে না।
আসক্তদের অনেকে অনলাইনের ওইসব চরিত্রের মতো জীবনযাপন করতে চায়। তাদেরকে জীবনের হিরো ভাবতে শুরু করে।তাদের সাথে মেশার আশায় কোনও একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। তবে এটা যে ঠিক পথ নয় বা স্বাভাবিক জীবন নয়— সেটা তারা বুঝতে পারে না। এমনকি তাদের অভিভাবকরা অনেক ক্ষেত্রে এসব বিষয় ধরতেও পারেন না। বিভিন্ন প্রলোভনে ঘর থেকে বের হয়ে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, কিংবা অনেক সময় মৃতূ ঝুঁকিতে পড়ছে!
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা.রাইসুল ইসলামের মতে, অনলাইন আসক্তি কমাতে অভিভাবকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানকে বকুনি দিয়ে কিংবা স্মার্টফোন, ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে এ অভ্যাস ঠেকানো যাবে না; বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। তাদের মতে, শুধু অনলাইন গেম খেলতে কিংবা অনলাইনে থাকতে নিষেধ করলেই হবে না, বিকল্প কোনো খেলাধুলার ব্যবস্থা করার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া সন্তানের সামনে অভিভাবকদের স্মার্টফোনে মগ্ন থাকা, খাবার টেবিলে স্মার্টফোন দেখার অভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে।
Discussion about this post