খেলাধূলা ডেস্ক
বিভিন্ন জেলায় গিয়ে খ্যাপ খেলার সুবাদে সব ধরনের ক্রিকেটারের সঙ্গেই বিশেষ পরিচয় আছে খালেদ মাহমুদ সুজনের। অবসর নিলেও এখন বোর্ড পরিচালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তাই ক্রিকেটারদের যে কোন বিপদেই তাকে পাশে থাকতে দেখা যায়।
এই বিষয়টাও অজানা নয় যে, তার হাত ধরেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে শুরু করে জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই উঠে এসেছে। এমনকি মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের পথ চলা শুরু এই সুজনের হাত ধরেই। রবিবার রাতে তামিম ইকবালের লাইভ আড্ডায় এ দুজনের উঠে আসার গল্প বলেছেন সুজন।
কীভাবে মোস্তাফিজ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, তার বৃত্তান্ত তুলে ধরেন সুজন, ‘বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলা সব সময় দেখতাম। কোনও একটা টুর্নামেন্টের জন্য দুবাই ও শারজাহতে গিয়েছিলাম। ক্যাম্পে মোস্তাফিজকে দেখি। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অনুশীলনে দেখেছি। অনুশীলনে একজন বোলারকে যতটা বিচার করা যায়, ম্যাচে তার থেকে বেশি করা যায়। ম্যাচে দেখলাম, ও খুব জোরে বল করে। আবার স্লোয়ার ও কাটারটাও মারছে।’
কিন্তু মোস্তাফিজের ভাগ্য তখনও বদলায়নি। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে একজন বাঁহাতি পেসারের খোঁজ করাতেই তখন মোস্তাফিজের নাম বলেন সুজন। এতেই ভাগ্য খুলে যায় এই পেসারের, ‘‘ঢাকায় ফিরে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ম্যানেজার হিসেবে যুক্ত হলাম। ওই সময়ের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কোনও বাঁহাতি পেসার আছে কিনা, আমি দুজন ছেলের কথা বললাম। একজন আবু হায়দার রনি, আরেকজন মোস্তাফিজ। আমার কাছে দু’জনের বিশেষত্ব জানতে চাইল। বললাম, ‘আবু হায়দার সুইং বোলার। মুস্তাফিজ জোরে বল করে, কাটার আছে।’ ও (হাথুরুসিংহে) আমাকে আবার বলল, ‘কী রকম কাটার’, আমি বললাম, ‘খুবই কার্যকরী’। ও আমাকে বলল, ‘কালকে তাহলে ছেলেটাকে আমাকে দেখাও।’’
হাথুরুসিংহের আগ্রহ দেখেই সুজন দ্রুত মোস্তাফিজকে ফোন করে ঢাকায় আসতে বলেন, ‘‘তখন মোস্তাফিজ সাতক্ষীরায় ছিল। আমি ওকে সকালে ফোন দিয়ে বললাম, ‘তাড়াতাড়ি ঢাকায় আয়।’ মুস্তাফিজ আসল। পরদিন নেটে বোলিং করলো। চন্ডিকা আমার কাছে এসে বলে, ‘ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি খেলবে।’ আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবার জিজ্ঞেস করলাম। ও নিজেও বললো, ‘হ্যাঁ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি খেলবে।’’
এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় তার। নিজের প্রথম ম্যাচে পেয়েছিলেন- মোহাম্মদ হাফিজ ও শহীদ আফ্রিদির উইকেট।
অপর দিকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ১১ উইকেট পেয়েও আলোচনায় আসতে পারেননি পেসার তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশ ’এ’ দলের হয়ে ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে কিংবা জাতীয় লিগেও ক্যারিয়ারের শুরুতে নিজেকে চেনাতে পারেননি। সেই তাসকিনের কপাল খুলে যায় বিপিএলে নেট বোলার হিসেবে ডাক পেয়ে। বিপিএলে তাসকিন নিজের অভিষেক রাঙিয়েছিলেন ৪ উইকেট নিয়ে। প্রথম ম্যাচে পেয়েছিলেন তিলকারত্নে দিলশান, ওয়াইজ শাহ ও স্টিভেন্সের মতো উইকেট।
এই তাসকিন প্রসঙ্গে সুজন জানান, ‘‘তাসকিন আমাদের চিটাগং কিংসের (বিপিএল প্রথম আসর) নেট বোলার ছিল। নেটে দেখার পর ওকে যখন আমি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি, তখন দলের সবাই বলে, আমি কি পাগল নাকি যে তাসকিনকে খেলাতে চাই। নাসু ভাই (নাসির আহমেদ, কম্পিউটার অ্যানালিস্ট) আমাকে বলেছিল, ‘সুজন ওকে খেলানোর কারণ কী?’ আমি সবাইকে বলেছিলাম, ‘আমাকে খেলাতে দিন। একটা ছেলে তো চার ওভারই বোলিং করবে।’ এরপর তাসকিনকে খেলাই এবং ওই ম্যাচেই চার উইকেট সে পায়।’
Discussion about this post