ফুটবল কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা আর নেই। আজ (বুধবার) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে প্রায় একাই বিশ্বকাপ জেতানো এই কিংবদন্তি।
আর্জেন্টিনা ক্রীড়া দৈনিক ওলে দুঃসংবাদটি জানিয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়েছিল তার। হাসপাতাল ছেড়ে ফিরেছিলেন নিজ বাড়িতে। কে জানতো, পৃথিবীতে তার জন্য অপেক্ষা করছিল আর কয়েকটা দিন। মাত্র ৬০ বছর বয়সে কোটি ফুটবলভক্তকে কাঁদিয়ে অন্যপারের বাসিন্দা হলেন বাঁ পায়ে অসংখ্য মুহূর্তের জন্ম দেওয়া ফুটবল ঈশ্বর।
শেষ পর্যন্ত গত ১২ নভেম্বর অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল ছাড়েন ম্যারাডোনা। তবে আজ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে থেমে গেল তার জীবনযাত্রা। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) এক টুইট বার্তার খবরটি নিশ্চিত করেছে, ‘আমরা ভীষণ শোকার্ত আমাদের কিংবদন্তির মৃত্যুতে। আপনি সবসময় থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।’
আর্জেন্টিনার জেতা সবশেষ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোর আসরে বলতে গেলে প্রায় একাই চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন লাতিন আমেরিকার দেশটিকে। ওই বিশ্বকাপেই ফুটবল বিশ্ব দেখেছিলেন তার ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলটি। ক্লাব ফুটবলে নাপোলিকে দিয়েছিলেন লিগ শিরোপার স্বাদ। ইতালিয়ান এই ক্লাবে যাওয়ার আগে খেলে গিয়েছিলেন বার্সেলোনার জার্সিতে। আর ক্যারিয়ারের শেষটা করেছিলেন বোকা জুনিয়র্সে।
ম্যারাডোনার নেতৃত্বে ১৯৯০ সালের ইতালি বিশ্বকাপেও ফাইনালে খেলে আর্জেন্টিনা। তবে সেবার তারা হেরে যায় পশ্চিম জার্মানির কাছে। পরে ১৯৯৪ সালের যু্ক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় তাকে নিষিদ্ধ করা হয়। এফেড্রিন নামক ড্রাগ নিয়ে ম্যারাডোনা খেলতে নেমেছিলেন, এমন দাবি করা হয়।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়ার্ধে, তিনি কোকেইন আসক্তির সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন এবং ১৯৯১ সালে ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় ১৫ মাস নিষিদ্ধ হন। ম্যারাডোনা পেশাদারি ফুটবল থেকে অবসর নেন ১৯৯৭ সালে, তার ৩৭তম জন্মদিনে। আর্জেন্টাইন জায়ান্ট বোকা জুনিয়র্সে নিজের দ্বিতীয় স্পেলে থাকার সময় বুটজোড়াকে চিরতরে অবসর পাঠান তিনি।
এরপর কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন ম্যারাডোনা। খেলোয়াড়ি জীবনের সময়ও সংক্ষিপ্ত সময়য়ের জন্য নিজ দেশের দু’টি ক্লাবের কোচ ছিলেন তিনি। ছিয়াশির মহানায়ক আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পান ২০০৮ সালে। তার অধীনে ২০১০ সালে বিশ্বকাপ খেলে আলবিসেলেস্তেরা। তবে সেবার আর্জেন্টিনা ঘরে ফেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে, জার্মানির বিপক্ষে হেরে।
নিজ দেশ ছাড়াও ম্যারাডোনা কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মেক্সিকোর দু’টি ফুটবল ক্লাবের। মৃত্যুর আগে তিনি নিযু্ক্ত ছিলেন আর্জেন্টিনার শীর্ষ ফুটবল লিগের ক্লাব জিমনেসিয়া ওয়াই এগগ্রিমার কোচ হিসেবে।
১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনার বুইয়েন্স আইরিসে জন্ম নেওয়া এই ফুটবল কিংবদন্তি আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৯১ ম্যাচে করেছেন ৩৪ গোল।
দারুণ ফুটবলে যেমন নন্দিত ছিলেন, তেমনটি নিন্দিতও ছিলেন বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে। বিশেষ করে, কোকেন সেবন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার ফুটবল ক্যারিয়ারে। যে কারণে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে খেলাই হয়নি এই কিংবদন্তির। ১৯৯১ সালে ড্রাগ পজিটিভ হয়ে ১৫ মাস নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি।
তবে ম্যারাডোনাকে বিশ্ব মনে রাখবে তার অসম্ভব সুন্দর ফুটবল কারুকার্যের জন্য। মাঠের সবুজ গালিচায় তার পায়ের তুলিতে আঁকা অসংখ্য মুহূর্ত ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতির পাতায় সাজানো থাকবে চিরকাল।
Discussion about this post