এম, সারওয়ার
ড. অনুপম সেন আমাদের এই জনপদের অগ্রগণ্য অনন্যসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। দেশের প্রথম সারির একজন বুদ্ধিীজীবী। কি পান্ডিত্য, কি গবেষণা, কি শিক্ষা, কি দর্শন, কি রাজনীতি, কি সংস্কৃতি, কি সাহিত্য- প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক।
তিনি আমাদের চট্টগ্রাম শহরের শিক্ষা সংস্কৃতির অভিভাবক, এ নগরের বটবৃক্ষ ড. অনুপম সেন। আমাদের মনন-চেতনার প্রতীকপুরুষ। আমাদের মুগ্ধতার আরেক নাম, যাঁকে আমরা ‘অনুপম স্যার’ নামেই চিনি। মানব জীবনের সবকটি গুণাবলীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল ব্যক্তিত্ব ও মানবতা। মানবিকগুণে গুণান্বিত ব্যক্তিই মানবতার ধারক ও বাহক। অনুপম স্যার আজীবন মানুষের শুভ, কল্যাণ ও মানবিক চেতনায় আস্থাশীল।
মুক্তবুদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও উদার মানবিকতাবোধই তাঁর জীবনদর্শন। এই মানবাধিকারের সুরক্ষায় অনুপম সেন জাত-পাত-বর্ণ-সম্প্রদায় দেশ-বিদেশের ভৌগোলিক কোনো বিভাজন মান্য করেন না। সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই- এটাই তাঁর জীবনের দর্শন। আজীবন শব্দযোদ্ধা, অসামান্য জীবনশিল্পী, অনুপম স্যারের কর্ম ও কৃতির সীমানা কতটা বিস্তৃত, তিনি বিশ্বসাহিত্য, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতিকে কতটা উপলব্ধি করেন, তাঁর মৌলিক রচনা ও গবেষণালব্ধ ফসল পাঠ না করলে জানা যাবে না। তাঁর সমাজতত্ত্ব, সাহিত্য ও গভীর জীবনানুধ্যান আমাদের কতটা পথ দেখায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একারণেই তিনি হয়ে উঠেছেন রেনেসাঁস পুরুষ। এমন একজন রেনেসাঁস মানুষ রাষ্ট্র ও জাতির জন্য খুব বেশি অপরিহার্য। একাত্তরের বিরোধী শক্তির পাশাপাশি চিরকালের ধর্মান্ধ, প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের চেতনাকে শাণিত করে যাঁরা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে আসছেন, তাঁদের মধ্যে তিনির অন্যতম।
তাঁর মেধা ও পরিশ্রমের সঙ্গে এক অসাধারণ যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে তাঁর কর্মক্ষেত্রে, যে যোগসূত্র দিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্রোতধারাকেও তিনি বেগবান করে চলেছেন। তিনি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মতাদর্শে প্রগতিশীল। একাধারে তিনি সমাজতাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, সাহিত্য সমালোচক, সাহিত্য ও রাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষক। শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী এই মানুষটির চেহারা চরিত্র যেন নিখুঁত এক জীবন্ত সংস্কৃতি। জ্ঞানার্জন আর মনুষ্যত্বের বিবেচনায় তিনি আমাদের কাছে অনুপ্রেরণার এক মহৎ মানুষে পরিণত হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জটিল সুবিধাবাদী চক্রের কূট পরিস্থিতির সাথে কখনো আঁতাত কিংবা সমঝোতার জন্য কখনো স্বীয় রাজনৈতিক ভাবনা, আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি আজীবন পড়াশোনায় মগ্ন থেকে শিল্প-সাহিত্য ও সমাজের সকল অঙ্গনে বিচরণ করেছেন। তাঁর অধ্যয়নে বিরাম নেই। তাঁকে দেখে কেউ বুঝতে পারবেন না যে তিনি কেবল সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক, তাঁর ইতিহাসজ্ঞান, ভাষাজ্ঞান ও পাণ্ডিত্য মুগ্ধ করার মতো। একজন নিষ্ঠ ও পরিশ্রমী গবেষক হিসেবে সুস্থ-সুন্দর জীবনের অপরাজেয় যোদ্ধা হিসেবে, বহুমাত্রিক বুদ্ধিবৃত্তির সাধক হিসেবে, সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার নির্মাণের কারিগর হিসেবে যথার্থ গুণী মানুষ তিনি। মার্জিত রুচি, মনে-প্রাণে রাবীন্দ্রিক, আমাদের শিল্প-সাহিত্য ও গবেষণায় নীলকণ্ঠ পাখি। একদিকে তিনি একজন মূলধারার অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, শিল্পকলাসহ জ্ঞানের সকল শাখায় জ্ঞানদীপ্ত সাধক, অন্যদিকে চলনে বলনে খাঁটি বাঙালি, খাঁটি মাতৃভাষা চর্চাকারী।
শিক্ষা ও কর্মজীবন :
ড. অনুপম সেনের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে। বাবা বীরেন্দ্রলাল সেন, মা স্নেহলতা সেন। তাঁদের দু’জনের কেউই আজ আর বেঁচে নেই। বাবা পেশায় ছিলেন আইনজীবী, সেই ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। স্ত্রী উমা সেনগুপ্তা। একমাত্র মেয়ে ইন্দ্রানী সেন গুহ।বীরেন্দ্র লাল সেন ও স্নেহলতা সেনের পুত্র অনুপমের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ধলঘাট ইংলিশ হাই স্কুলে (বর্তমান ধলঘাট হাই স্কুল)। এরপর তিনি কলকাতার সেন্ট ক্যাথিড্রাল মিশনারি স্কুলেও পড়েন।
১৯৫৬ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন এবং ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজতত্ত্বের সম্মান কোর্সে ভর্তি হন।
ঢাবি থেকে ১৯৬৩ সালে এমএ পাশ করার পর ১৯৬৫ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতায় যুক্ত হন।
১৯৬৬ সালে উমা সেনগুপ্তার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ড. অনুপম সেন। তাঁদের একমাত্র মেয়ের নাম ইন্দ্রানী সেন গুহ।
পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক এবং ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেয়ার পর পালন করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বছরে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে চট্টগ্রামের সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের একজন প্রত্যক্ষ সংগঠক ও অংশগ্রহণকারী ছিলেন অধ্যাপক অনুপম সেন।
এছাড়া যুদ্ধের সময়ে তিনি প্রবাসী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্ত্রের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নেন। স্বাধীন বাংলা বুদ্ধিজীবী সমিতিতেও সম্পৃক্ত ছিলেন।
১৯৭৩ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় এমএ এবং পিএইচডি করেন। তার অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল: ‘দি স্টেট ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড ক্লাশ ফরমেশন ইন ইন্ডিয়া’।
এ সময়ের মধ্যে তিনি বিভাগীয় প্রধান হওয়া ছাড়াও চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, দুই দফা সভাপতি এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
গবেষক ড. অনুপম সেন –
অধ্যাপক সেন দুটো জায়গায় অত্যন্ত উজ্জ্বল। প্রথমত, তাঁর একাডেমিক ক্ষেত্রে, যেখানে তাঁর পরিচিতি বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতেও বিস্তৃত হয়েছে। বিশেষভাবে তাঁর আলোচিত গ্রন্থ ‘দি স্টেট, ইনডাস্ট্রিলাইজেশন এন্ড ক্লাস ফরমেশনস ইন ইন্ডিয়া’ ইংল্যান্ডের খ্যাতনামা প্রকাশক রাউটলেজ ও কেগানপল থেকে প্রকাশের পর ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে তাঁর পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে ড. সেনের এই বইটি রেফারেন্স বই হিসেবে ব্যবহৃত হয়।ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান, উন্নয়ন অর্থনীতি (ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স) ও রাষ্ট্র্রবিজ্ঞানের পাঠ্যতালিকায় গ্রন্থটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষকতা ও লেখালেখির পাশাপাশি গবেষণাক্ষেত্রে তাঁর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তাঁর তত্ত্বাবধানে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী উচ্চতর পড়াশোনা করেছে, এম.ফিল. ডিগ্রি অর্জন করেছে। তিনি বহিঃস্থ (এক্সটার্নাল) সদস্য হিসেবে বিভিন্ন পিএইচ.ডি. গবেষকের থিসিস যেমন মূল্যায়ন করেছেন তেমনি গবেষণা তত্ত্বাবধান করেছেন অনেকের।প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবনে অনেককে পড়িয়েছেন। তার অনেক ছাত্র দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত।
প্রকাশিত গ্রন্থ :
প্রফেসর ড. অনুপম সেন পিএইচডি বিষয়ক গ্রন্থ ‘দি স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড ক্লাশ ফরমেশন ইন ইন্ডিয়া’ ছাড়াও অনেকগুলো গ্রন্থের রচয়িতা। এরমধ্যে দি পলিটিক্যাল এলিটস অফ পাকিস্তান অ্যান্ড আদার স্যোশিওলজিক্যাল এসেস (১৯৮২, অমর প্রকাশন, দিল্লি), বাংলাদেশ: রাষ্ট্র ও সমাজ, সামাজিক অর্থনীতির স্বরূপ (১৯৮৮), বাংলাদেশ ও বাঙালি রেনেসাঁস: স্বাধীনতা চিন্তা ও আত্মানুসন্ধান (২০০২), বিলসিত শব্দগুচ্ছ (২০০২), ব্যক্তি ও রাষ্ট্র: সমাজ-বিন্যাস ও সমাজ-দর্শনের আলোকে (২০০৭), কবি শশাঙ্কমোহন সেন (২০০৭), সমাজ, সংস্কৃতি, সাহিত্য: নানা কথা, নানা ভাবনা, নানা অর্ঘ্য (২০০৭), সুন্দরের বিচার সভাতে (২০০৮), আদি-অন্ত বাঙালি, বাঙালি সত্তার ভূত-ভবিষ্যত (২০১১), বাংলাদেশ: ভাবাদর্শগত ভিত্তি ও মুক্তির স্বপ্ন (২০১১), জীবনের পথে প্রান্তরে (২০১১), বাঙালি-মনন, বাঙালি সংস্কৃতি, সাতটি বক্তৃতা (২০১৪), ইতিহাসে অবিনশ্বর (২০১৬) ও বিচিত্র ভাবনা (২০১৭) প্রভৃতি গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।
সম্মাননা –
রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবদান রাখায় বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ড. অনুপম সেন। শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৪ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন পদক ২০০৭, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন সম্মাননা ২০০৬, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সংবর্ধনা ১৯৯৫, চট্টগ্রাম পরিষদ-কলকাতার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী সম্মাননা, ধ্রুব পরিষদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সম্মাননা, একুশে মেলা পরিষদ-চট্টগ্রাম’র একুশে সম্মাননা-২০০৭সহ নানা পদক ও সম্মাননা পেলেও অত্যন্ত অমায়িক মানুষ তিনি।
অনুপম একজন মানুষ –
ড. অনুপম সেন একজন নির্লোভ, নিঃস্বার্থ মানুষ, জ্ঞানী মানুষ, এরকম মানুষ সমাজে বিরল। সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করেও তিনি পায়ে দলে গেছেন সব রকমের লোভ-লালসার ভিত্তি, উপেক্ষা করেছেন যাবতীয় হাতছানি। স্বার্থ আর কোনো পদের জন্য তিনি তাঁর শ্রম ও সময় দেননি, সময় দিয়েছেন নিজেকে পবিত্র ও নির্মল রাখতে।
ড. অনুপম সেন সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিত্ব। আওয়ামী রাজনীতি ও রাজনৈতিক দর্শনের অধিকারী ও শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়েও তিনি পরমতসহিষ্ণু এক বটবৃক্ষ। আপাদমস্তক তিনি অসাম্প্রদায়িক। সব শ্রেণীর, সব ধর্মের মানুষের প্রতি তাঁর রয়েছে মমত্ববোধ। উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ বলতে যা বোঝায় – ড. অনুপম সেন তা’ই। তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা, পরমতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং জ্ঞান ও পান্ডিত্য তাঁকে মহীরূহ করে তুলেছে, করে তুলেছে সর্বজন শ্রদ্ধেয়।
দেশের নানা উত্থান-পতন, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে তিনি পালন করেছেন অগ্রণী ভূমিকা। তিনি আমাদের প্রগতিশীল ধারার বিবেকী কণ্ঠস্বর।
ড.অনুপম সেন বেশ আড্ডাপ্রিয় মানুষ। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ক্রীড়া, সাংবাদিকতাসহ নানা পেশা ও কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সঙ্গে তাঁর বেশ খাতির। আড্ডায় বসলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক চালিয়ে যেতে পারেন। এছাড়া অবসর কাটান বই পড়ে, টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখে। ক্রিকেট খেলাটা ড. সেনের বেশ প্রিয়। শৈশব থেকে ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পৃক্ততা। কিশোর বয়সে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল-কলেজ টিমের সদস্য হিসেবে ক্রিকেট খেলেছেন। ব্যাটিং ওপেন করতেন তিনি। ক্রিকেট খেলায় নানা নৈপুণ্যের জন্য তিনি বহু প্রশংসা লাভ করেছেন এবং পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন।
ড. অনুপম সেন আমাদের এই জনপদের অগ্রগণ্য অনন্যসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি বিষয়ে তিনি সমান ওয়াকিবহাল। সব বিষয়ে যথেষ্ট পড়াশোনা আর দক্ষতা আছে বলেই যে কোনো সভা-সমাবেশে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
জীবন সায়াহ্নে দার্শনিক এই অধ্যাপক এখনও স্বপ্ন দেখেন, একটা সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের , যেখানে প্রতিটি মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, বিনোদন, অবসর ও সংস্কৃতির অধিকার পাবে। যেখানে স্টেশন-বস্তিতে জন্ম নেয়া শিশু বঞ্চনা নিয়ে বড় হবে না। যেখানে সে এগুলোকে রাষ্ট্র প্রদত্ত মৌলিক অধিকার হিসেবে পাবে।তাঁর ভাষায় ‘‘আমি সেই বাংলাদেশ চাই না যেখানে কিছু লোক বিত্ত শক্তির দম্ভে অন্যদের প্রতি ভৃত্যতুল্য আচরণ করবে, অন্যদের মানবতাকে অপমান করবে। দেশের প্রতিটি মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিতে হবে। কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে।’’
Discussion about this post