মো. জিয়াউল হক
১৪ই ফেব্রুয়ারি যত এগিয়ে আসতে থাকে, শুভর হৃদয়ের ধকধক যেন ততোই বাড়তে থাকে। ধকপকানির আওয়াজ বেড়ে রীতিমত ড্রামের আওয়াজের মতন হয়ে যায়!
যেহেতু শুভ অদ্রিতার প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, তাই ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সে অদ্রিতাকে সারপ্রাইজ দিতে চায়; তারজন্য এমন কিছু করতে চায় যা আগে কেউ হয়তো কখনও করেনি।
তাই শুভ অদ্রিতাকে কয়েকবার ফোন দেয়; অদ্রিতা ফোন না ধরার কারণে সে বুঝে যায় যে সে নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। বারোটা দুই বাজে; শুভর ইচ্ছে ছিল ‘হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন’স ডে’ বলে তার নির্দিষ্ট সারপ্রাইজের কথা জানাবে কিন্তু অদ্রিতা যে এভাবে ঘুমিয়ে যাবে সে তা বুঝতেই পারেনি। যাইহোক, সেই নির্দিষ্ট সারপ্রাইজটি আর যেহেতু দেয়া যাচ্ছেনা তাই তার মাথায় একটি নতুন সারপ্রাইজের আইডিয়া আসে! শুভ রাত সাড়ে বারোটার দিকে চুপিসারে অদ্রিতার ঘরে প্রবেশ করে। সে যখন অদ্রিতার কক্ষে যায়, তখন সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শুভ তাকে না জাগিয়ে সারারাত অদ্রিতার নিখুঁত মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকে যেন জীবনানন্দ দাশ চুম্বকের মতন আকর্ষিত হয়ে বনলতার সৌন্দর্য দেখছেন!
যদিও অন্ধকারের চাদরে কক্ষের প্রতিটি কোণা ঢাকা, তবুও শুভ যেন ঠিকই তার পরীর মত ভালোবাসার মানুষটিকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে। যখন ভোরে সূর্য হেসে উঠে তখন অদ্রিতা আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠতেই শুভকে বিছানার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা অবস্থায় দেখতে পায়।
অকস্মাৎ শুভকে এভাবে তার কক্ষে দেখে অদ্রিতা তার মনের অজান্তেই চিৎকার দিতে গেলে শুভ এসে তার মুখ চেপে ধরে বলে ‘হ্যাপিভ্যালেন্টাইন’স ডে’! তারপর তার হাতে থাকা একশত একটি লালগোলাপ ফুল অদ্রিতার হাতে দিয়ে বোকার মত হাসতে থাকে!
এমতাবস্থায় অদ্রিতা যে ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। সে বলে,
-তুমি কি পাগল নাকি?
– কেন?কি হয়েছে?
– তুমি আমার রুমে এইসময়, এভাবে?
– সমস্যা কি?
– সমস্যা কি মানে?এখন এই সাতসকালে তুমি ঘর থেকে বের হবার সময় যদি কেউ দেখে ফেলে?তখন কি মানইজ্জত কিছু থাকবে?
– দূর! এসব নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা! তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে ইচ্ছে হয়েছে তাই চলে এসেছি!
– চলে এসেছি মানে?কখন এসেছো?
– রাত একটার দিকে!
– আমাকে ফোন দিলেইতো পারতে!
– দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি ফোন ধরোনি।
– তুমি আসলেই একটা পাগল! এমনকি কেউ করে?
– তুমিতো জানো আমি এমনই! যখন যা ইচ্ছে হয় তাই করি!
– তুমি নিজেও মরবে আর আমাকেও মারবে!
শুভ কোনও রকমে লোকচক্ষুর আড়ালে বের হয়ে বাসায় ফিরে যায়। ঐদিন সে অনেকবার অদ্রিতাকে ফোন করে কিন্তু অদ্রিতা শুভর এমন বাড়াবাড়িতে বেশ বিরক্তবোধ করে বলে ফোন ধরেনি। তবে কয়েক ঘণ্টা পর অদ্রিতার রাগ কমে আসে, অগ্নিগিরির উত্তপ্ত লাভা যেমন সমতল ভূমিতে গড়িয়ে পড়ার পর ধীরে ধীরে শীতল হয়ে আসে ঠিক তেমনি। তার রাগ গাছ হতে পড়া পাতার মতই ঝরে পড়ে যেন। এখন শুভর পাগলামি অদ্রিতার কাছে আর পাগলামি মনে হয়না। তার প্রতি অদ্রিতার ভালোবাসা যেন কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যখনই ঐ অদ্ভুত সারপ্রাইজের কথা মনে পড়ে, তখনই অদ্রিতা শাপলা ফুলের মত অজান্তে হেসে উঠে! তার মনে হয় যে শুভ তাকে এতো বেশী ভালোবাসে! তার জন্য সেই ছেলে কিনা করতে পারে! যে ছেলে তাকে এতো পাগলের মত ভালোবাসে, তার প্রতি বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা যায়না।
প্রেমের কম্পাস প্রেমিক ও প্রেমিকার দুটি মনকে একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে নিয়ে যেতে থাকলে তাকে সফল প্রেম বলে। শুভ এবং অদ্রিতার মধ্যে যে নিখুঁত বোঝাপড়া, যে গভীর ভালোবাসা তাতে এ কথা বলাই যায় যে এই প্রেম এখন পর্যন্ত সার্থক কারণ তাদের সুন্দর ভালোবাসার বন্ধনের মাঝখানে নেই কোনও স্বার্থপরতা এবং অবিশ্বাসের ব্ল্যাকহোল!
– মো. জিয়াউল হক [কবি, লেখক, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম]
Discussion about this post