ক্রিকেট থেকে পাকাপাকি অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন সাবেক তারকা ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফিস আর স্পিন সুপারস্টার আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশ-উইন্ডিজ টেস্ট চলাকালীন আজ শনিবার দুপুরে বিসিবির মিডিয়া হাউস প্রাঙ্গনে তাদের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুই তারকা ক্রিকেটারের বিদায় বেলায় তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনসহ বোর্ড কর্মকর্তারা। নাফিস আর রাজ্জাক জানান তাদের বিদায়বেলার অনুভূতি।
বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে রাজ্জাক বলেন, ‘কী বলব আজ, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমি ধন্যবাদ দিতে চাই আমার ছোটবেলার কোচ ফাহিম স্যার এবং ইমরান স্যারকে। তাঁরাই আমাকে রাজ্জাক হিসেবে তৈরি করেছেন। ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। আমি যখন বিকেএসপি ছেড়েছি, তখন ক্রিকেট বোর্ডের আন্ডারে চলে এসেছি। বোর্ডই তখন থেকে আমার অভিভাবক। এর চেয়ে খুব বেশি কিছু বলা আসলে আমার জন্য আজ কঠিন। দোয়া করবেন আমার জন্য।’
শাহরিয়ার নাফিস বলেন, ‘সবার আগে আমি গর্ব করে বলতে পারি যে, আমি বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলেছি। বাংলাদেশের জন্য ক্রিকেট খেলেছি। সর্বপ্রথম আমি আমার পরিবারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, তারা আমাকে সবসময় হেল্প করেছেন। ১০ বছর বয়স থেকে আমার আপস অ্যান্ড ডাউন সবসময় পাশে ছিল। আমি বিসিবি, গ্রাউন্ডসম্যান, ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ধন্যবাদ জানাতে চাই সিলেকশন টিমের সবাইকে, আপনাদের সাহায্য ছাড়া এতদূর আসা সম্ভব ছিল না। ধন্যবাদ সাংবাদিক ভাইদের আমার সমালোচনা করার জন্য। আপনাদের সমালোচনায় আমি আরও ভালো খেলেছি।’
নাফীস আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের আপামর জনগন- যারা আমাকে ভালোবেসেছেন, আমাকে গালি দিয়েছেন, দোয়া করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি রান করেছি, আরও রান হয়ত করতে পারতাম- তবে মানুষের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি সেটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। বিসিবি এবং কোয়াবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এমন আয়োজন করে আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য। স্পেশাল ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার শৈশবের কোচ ওয়াহিদুল গনি স্যারকে। উনি আমাকে খুব ভালোভাবে তৈরি করেছেন এবং ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন।’
আবদুর রাজ্জাকের যত কীর্তি
• বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট।
• ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্রুততম ফিফটি (২১ বল)। ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। রেকর্ডটি মোহাম্মদ আশরাফুলের (বিপক্ষ ইংল্যান্ড, ২০০৫) সঙ্গে ভাগাভাগি করছেন রাজ্জাক।
• বাংলাদেশের একমাত্র বোলার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬০০ উইকেট।
• লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের সেরা বোলিং (৭/১৭)।
• তিন সংস্করণ মিলিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে ১০০০ উইকেট নেওয়া একমাত্র বাংলাদেশি।
শাহরিয়ার নাফীসের যত কীর্তি
- ওয়ানডেতে এক পঞ্জিকাবর্ষে হাজার রান করা একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান (২০০৬ সালে ১০৩৩)।
- আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক।
- ওয়ানডেতে একাধিক সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান। তাঁর ৪ সেঞ্চুরির রেকর্ড টিকে ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত।
- বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম এক হাজার রান (২৯ ম্যাচ)।
- বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম দুই হাজার রান (৬৫ ম্যাচ)।
- প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ম্যাচের দুই ইনিংসেই ১৫০ ছাড়ানো একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান।
- টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান।
- টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান।
- প্রথম শ্রেণিতে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান (৩৪২)।
- এক মৌসুমে প্রথম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ রান (১৭২০ রান, ২০১৫)।
Discussion about this post