মাহফুজ শুভ
২০০০ সাল পর্যন্ত বার্সার লং টার্ম প্রেসিডেন্ট থাকা ক্ষমতাধর অনেকটা এন্টি ক্রুইফ আদর্শের এবং করাপ্টেড প্রেসিডেন্ট জোসেফ লুইজ নুনেজের বিরুদ্ধে প্রথম ১৯৯৭ সালে বড়সড় প্রতিরোধ করে তুলে তরুন সোসীদের সংগঠন Elefant Blau বা ব্লু এলিফেন্ট। সাবাস্টিয়ান রোকার সাথে ওই আন্দোলনের কো-লিডার, বলতে গেলে সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিল হুয়ান লাপোর্তা। যাইহোক, তাৎক্ষনিক না হলেও ২০০০ সালে মূলত এদের প্রেশারেই নুনেজকে পদত্যাগ করতে হয়, তার জায়গায় প্রেসিডেন্ট হয় নুনেজেরই ভাইস প্রেসিডেন্ট গাস্পার্ট। নুনেজর আদর্শ এবং সততা না থাকলেও তার ক্ষমতা এবং লিডারশীপ ছিল নতুনটার তাও ছিলনা, তাই ক্লাবের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে থাকে।
ব্লু এলিফেন্টের ক্যাম্পেইন তাই গাস্পার্টের বিরুদ্ধেও চলে, এই সময়ে লাপোর্তে- রোকাদের সাথে পরবর্তিতে ক্লাবের ইনফ্লুয়েন্সিয়াল পজিশনে আসা ফেরান সোরিয়ানো, জর্দি মইক্স,,সান্দো রোসেল, মাত্রারাদের সাথে “ভিক্টর ফন্ট” নামে তরুন ফাইনেন্স এক্সপার্টও যুক্ত হয়।
১৯৫০ থেকে ২০০৩, বার্সার প্রতিটা প্রেসিডেন্ট ছিল ব্যাবসায়ী, বেশ বয়স্ক, ট্রেডিশনাল টাইপ লোকজন। হুয়ান লাপোর্তা ২০০৩ সালে যখন প্রেসিডেন্সী নির্বাচনের ঘোষনা দেয় ওনি ছিল ইয়ং, বেশ সাক্সেয়াফুল ল’য়ার৷ লাপোর্তের অন্যরকম একটা ক্যারিজমা, পার্সনালিটি, কথা দিয়ে মন জয় করার ক্ষমতা, কিছুটা বেপরোয়া ভাব তখনও ছিল, বরং এখনের তুলনায় বেশিই ছিল, এজন্য কাতালুনিয়ায় অনেকে বার্সেলোনার জন এফ কেনেডিও ডাকত তাকে।
তারপরেও ২০০৩ সালের নির্বাচনে ফেবারিট ছিল লুইস বেসার্ট, ওনি নুনেজের গ্যাং এরও ছিলনা আবার ব্লু এলিফেন্ট থেকেও ছিলনা কিন্তু পেপে গার্দিওলা সহ ক্লাবের অনেক বড় নামের সাপোর্ট ছিল তার সাথে। পেপ গার্দিওলা ইভেন বেসার্টের বোর্ডের স্পোর্টিং ডিরেক্টর হতেও রাজি ছিল। পরে বেসার্ট হেরে গেলে পেপ গার্দিওলা কাতারে চলে যায় নিজের কোচ-প্লেয়ার জার্নি চালু রাখতে।
কিছুটা আউটসাইডার, ছ্যামড়া পোলাপান টাইপ হাইপ নিয়ে শুরু করলেও দূর্দান্ত মডেলে ক্লাবের আগা থেকে গোড়াকে ফাইনেন্সিয়াল, সোসাইল এবং স্পোর্টিং তিনটা সেক্টর করে ক্লাবের স্টাকচারই রিবিল্ড করার প্রস্তাব দিয়ে বসে লাপোর্তের ক্যাম্পেইন৷ বাজির মাতটা করে জোহান ক্লুইফকে নিজেদের ক্যাম্পেইনে প্রায় সরাসরি যুক্ত করে৷ জোহান ক্রুইফ যেখানে আগের অনেকদিন বোর্ডের থেকেতো বটেই ক্লাব থেকেই দূরে চলে গিয়েছিলেন, নুনেজ, গ্যাম্বার্টদের সাথে আইডিওলজির ক্ল্যাশ লেগে ছিল সেই ক্রুইফকে করে দেয়া হলো লাপোর্তের ক্যাম্পেইনের স্পেশাল এডভাইজর পরে নির্বাচনে জেতার পর প্রেসিডেন্ট লাপোর্তার স্পেশাল আডভাইজর যার কিনা প্রতিটা স্পোর্টিং ডিসিশনেই বলার অধিকার ছিল যদিও স্পোর্টিং ডিপার্টমেন্টের মূল দায়িত্ব ছিল পরবর্তিতে বার্সা প্রেসিডেন্ট হওয়া সান্দ্রো রোসেলের উপর।
নির্বাচনে জিতেই নতুন কোচ হিসেবে রোসেল চাচ্ছিল ২০০২ বিশ্বকাপ জিতা ব্রাজিলিয়ান কোচ ফিলিপ স্কোলারিকে । জোহান ক্রুইফ ভেটো দিলেন, ওনি প্রস্তাব করলেন ফ্র্যাংক রাইকার্ডের নাম, শেষে লাপোর্তা ক্রুইফের সিদ্ধান্তই মেনে নিলেন।
নির্বাচনে জেতার আগে অবশ্য একটা আকাম করে বসেছিল লাপোর্তা, একটা মৌখিক আলোচনার ভিত্তিতে ডেভিড ব্যাকহামকে বার্সা সাইন করাবে ঘোষনা দিয়ে দেন, ডেভিড ব্যাকহাম তখন ওয়াল্ডের সবচেয়ে মার্কেটেবল প্লেয়ার। এদিকে ম্যাঞ্চেস্টারে লংকা কান্ড, স্যার এলেক্স ফার্গুসনের সাথে ব্যাকহামের ঝামেলা; ইভেন শুনা যায় ফার্গুসনের ব্যাকহামকে ছুড়ে মারা বুট ওর চোঁখের উপরে সামান্য কেটেও ফেলে। এই ঘটনার সুবিধা পেতে অলরেডি মার্কেটিং মনস্টার গ্যালাকটিকোসের মধ্যে ব্যাকহামকে যুক্ত করতে উঠে পড়ে লাগে মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট পেরেজ এবং তার রাইট হ্যান্ড ম্যান সাঞ্চেজ, লাপোর্তেকে কথা দিলেও গ্যালাকটিকোসে খেলা আর বিশাল বেতনের সাথে মাদ্রিদ + ব্যাকহাম দুইটা ইমেজ ইউজ করে মাদ্রিদ যতটা ফাইনেন্সিয়ালি স্টং প্রজেক্ট দিতে পারতো তা বার্সা পারেনি। তাই ইউনাইটেড লাপোর্তের প্রস্তাবে রাজি হলেও ব্যাকহাম মাদ্রিদের সাদা জার্সি পড়েন।
এই ধাক্কা সামলে সান্দ্রো রাসেলের নেতৃত্বে নাইকির সাহায্য নিয়ে সদ্য বিশ্বকাপ জেতানো রোনালদিনহোকে সাইন করায়৷ অন্যান্য সাইনিং লাইক রাফা মার্কেস, জিভিয়ান্নিকে সাইন করা, জাভি ইনিয়েস্তা পুয়ল ভালদেসকে ফাস্ট টিমে আনা এসব সিদ্ধান্ত নেয় লাপোর্তের প্রথম স্পোর্টিং ডিরেক্টর টিক্সি বার্গেস্টাইন।
লাপোর্তের ফাস্ট সিজনে বার্সেলোনা ট্রফিলেস ছিল কিন্তু দূর্দান্ত গতিতে পজেটিভ ডিরেকশনের দিকে যাওয়াটা কারও নজর এড়ায়নি। সেকেন্ড সিজনেই তাই সাফল্যের দেখা পায় বার্সেলোনা, ৬ বছর পর লা লীগা ঘরে তোলে রাইকার্ড ও রোনালদিনহোর হাত ধরে।
Discussion about this post