খেলাধুলা ডেস্ক
টেন্ডুলকার ৯০–এর ঘরে ঢোকার পর থেকেই তাঁর প্রতিটি রান হাততালিতে বরণ করে নিচ্ছিলেন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দর্শক। ইতিহাসের সাক্ষী হতে উদগ্রীব বাংলাদেশের সমর্থকেরা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন টেন্ডুলকারের একেকটি রান ভারতের স্কোরবোর্ডে যোগ হচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য বোঝা হিসেবে। আসলে ইতিহাসের ডাকেই সেসব ভুলে গিয়েছিল তাঁরা! টেন্ডুলকার যখন ৯৯ রানে, তাঁকে বোলিং করছিলেন আবদুর রাজ্জাক। তাঁর দুটি বলে মুখোমুখি হয়েও রান পাননি টেন্ডুলকার।
পরের ওভারটি করেছেন সাকিব আল হাসান। ওভারের চতুর্থ বলটিতে মুখোমুখি হন টেন্ডুলকার। স্কয়ার লেগে বল ঠেলে দিয়েই একটি রান নিয়ে ইতিহাস হয়ে যান টেন্ডুলকার। দিবারাত্রির ম্যাচটিতে তখন ফ্লাডলাইটের কৃত্রিম আলো ম্লান করে দিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে টেন্ডুলকারের আভা! শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তখন অন্য রকম এক দৃশ্য। পুরো গ্যালারি আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে টেন্ডুলকারকে। সবার চোখেমুখে তখন ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারার আনন্দ–আভা!
ক্যারিয়ারে নড়বড়ে নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়েছেন বহুবার। সে রোগটা ভর করেছিল শততম শতক পাওয়ার আগেও। অবশেষে ৯ বছর আগের এই দিনে সে খরাটা ঘুচিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। তবে তার সে রূপকথা রচনার স্বাদটা বেশিক্ষণ টেকেনি। সে সেঞ্চুরি ঘণ্টা চারেক পরই ম্লান হয়েছিল সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমের কাছে। এরপর যে হারের বিষাদ গ্রাস করেছিল শচীনকে!
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯৯তম সেঞ্চুরিটা করেছিলেন ঘরের মাঠে, বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে। এরপর একে একে কেটে গেছে ৩৩টি ম্যাচ। বিশ্বকাপ তো গিয়েছেই, ইংল্যান্ড সফর গেল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এসে ভারত ঘুরে গেল, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতও ঘুরে এল অস্ট্রেলিয়া। এ সময়ে দারুণ কিছু ইনিংস খেলেছেন বটে, কিন্তু সেঞ্চুরিটা যেন ধরা দিচ্ছিল না কিছুতেই।
সে খরাটা মিটল তাদের বিপক্ষে, আগের ৪৮টি ওয়ানডে সেঞ্চুরির একটিও নেই যাদের বিপক্ষে! সে মাহেন্দ্রক্ষণটা এল ইনিংসের ৪৩তম ওভারে। সাকিব আল হাসানের গুডলেন্থে করা বলটা স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে একটা রান নিতেই গড়ে ফেলেন অকল্পনীয় সে রেকর্ডটা। ১০০ টা ১০০! ব্যাট আর বলের খেলাটা খেলে গেছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, ভিভ রিচার্ডসের মতো ব্যাটসম্যানরা। তাদের কারো যে রেকর্ড নেই সেই কীর্তিটাই গড়ে বসেন শচীন।
শুরুটা হয়েছিল আরেক ‘অনন্য’ শৃঙ্ঘে চড়ে। ইনিংসের পঞ্চম বলে শফিউল ইসলামের হাফ ভলিটাকে সীমানাছাড়া করেই পেয়ে গিয়েছিলেন ২০০০তম চারের দেখা। তবে শেষটা ভাল হয়নি আদৌ।
ইনিংসের শুরু থেকেই তামিম ইকবাল, জহুরুল ইসলামের অর্ধশতক সত্বেও চাপটা যেন সরছিলই না বাংলাদেশের ওপর থেকে। রান রেটটা যে ছিল আস্কিং রেটের নিচে! এরপর ভারতকে প্রতি আক্রমণের দায়িত্বটা কাঁধে তুলে নেন সাকিব। ৫ চার আর দুই ছক্কায় ৩১ বলে তার ৪৯ রান মহামূল্য মোমেন্টামটা ফেরায় বাংলাদেশের পক্ষে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে এরপর সাকিব ফিরলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে স্ট্যাম্পড হয়ে। তবে এরপর শুরু মুশফিক ঝড়ের। যার কবলে পড়ে ভারতের সব সম্ভাবনা ধুয়ে যায় বুড়িগঙ্গার জলে। ২৫ বলে তার অপরাজিত ৪৬ অবিস্মরণীয় এক জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয় বাংলাদেশকে।
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটার আগে ৭৯টা ওয়ানডে আর ৭টা টেস্ট খেলে ফেলেছিলেন শচীন। সে সেঞ্চুরি নাকি ৩৩ ম্যাচের অপেক্ষা শেষে শততম? কোন শতকটা বেশি কঠিন ছিল? ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল প্রশ্ন। শচীন উত্তরে বলেছিলেন, ‘নিঃসন্দেহে ১০০তম টা।’ প্রত্যাশার চাপও যে বুড়ো হয়ে আসা কাঁধটা আর সামলাতে পারছিল না!
সে চাপ উপরে ফেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ঠিকঠাক ফেলতেই পারেননি। সাকিব-মুশফিকরা যে সে সুযোগটা কেড়ে নিয়েছিলেন শচীনের!
Discussion about this post