খেলাধুলা ডেস্ক
বাংলাদেশের ক্রিকেটে কত কত শোকগাথা। তবুও মানজারুল ইসলাম রানা যেন আলাদা একেবারেই। আকস্মিক এক সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল প্রাণ।
প্রায় ১৪ বছর পরও যেন সেই আকস্মিক শোক কাটিয়ে ওঠা যায়নি। অন্তত তার মা জামিলা খাতুন যে কাটাতে পারেননি, এটুকু তো নিশ্চিত। তিনি বসে আছেন খুলনায়, সেখান থেকে প্রায় ১৩৭ মাইল দূরে থেকেও স্পষ্ট বোঝা গেল পাথর চাপা দিয়ে কেমনভাবে বেঁচে আছেন তিনি।
মুঠোফোনের অন্য প্রান্ত থেকে ভেসে আসা ভারি হয়ে আসে আওয়াজ। তাতে কল্পনা করা যায় তার ছলছল করা চোখ। নির্মোহ মুখ, আক্ষেপ, যন্ত্রণা আর ভালো থাকার তীব্র লড়াই। এখনো কি খুঁজে ফেরেন মানজারুল রানার স্মৃতি?
প্রশ্নটা ভেসে যেতেই থমকে থাকেন কিছুক্ষণ, অনেক্ষণ পর আস্তে করে বলে ওঠেন, ‘হ্যাঁ, স্মৃতি তো থাকবেই। স্মৃতি কি আর ভোলা যায়?’ আর যেন কিছু বলতে পারেন না, আবার চুপ করে যান। চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ে কি না, সেটা বোঝাও যায় না যদিও।
ক্রিকেট এখন দেয় দুই হাত ভরে। অর্থ, যশ-খ্যাতি, আছে সবই। রানাও হয়তো হতেন এসবের ভাগীদার। স্মৃতি হয়ে রানা এখনো বেঁচে আছেন মায়ের কাছে। কিন্তু কষ্টও কি লাগে যখন তার সতীর্থদের খেলতে দেখেন, যখন গায়ে জড়াতে দেখেন লাল-সবুজের জার্সি?
রানার মা বলছিলেন, ‘সে তো লাগেই, এটা তো আছেই, সবসময় থাকে। খারাপ লাগার অনুভূতি তো সবসময় আছে। আমার ছেলে থাকলেও হয়তো ওই জায়গায় থাকত, ওই কষ্টটা তো আছেই।’
রানার প্যাড, গ্লাভস, হেলমেট, ব্যাট অথবা বল। ক্রিকেটীয় সরঞ্জাম ছিল অনেক। সেসব এখনো যত্ন করে তুলে রেখেছেন মা। আঁচল দিয়ে মুছে রাখেন কি না, সেটা জানা যায়নি অবশ্য। তবে রানার মা বললেন যত্নেই আছে সেসব, ‘ক্রিকেটের স্মৃতি তো আছেই, যত্ন করেই রাখা ওসব। ওগুলো দেখলে খারাপ লাগে। কিন্তু খারাপ লাগা নিয়েই তো বেঁচে থাকতে হবে।’
শেষে বললেন আক্ষেপের কথা। খেলোয়াড়, ক্রিকেটার, বন্ধু কেউই এখন আর খোঁজ রাখে না তাদের, ‘আগে তো যোগাযোগ ছিল, কিন্তু এখন আর কেউ খোঁজ রাখে না, কেউই না।’
২০০৭ সালের ১৬ মার্চ হঠাৎ যেন দমকা হাওয়ার মতো এসেছিল একটা খবর। সাজ্জাদুল হাসান সেতুর সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনায় পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। অনুশীলন শেষে বাইকে ওঠেন মানজার রানা। পেছনের সিটে বসেন জাতীয় লিগে তার সতীর্থ সাজ্জাদুল হাসান সেতু।
তাদের বাইকটি খুলনার বালিয়াখালী ব্রিজের কাছে আসতেই বিপরীত দিক থেকে আসা এক অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে মারা যান রানা। গুরুতর আহত সেতুকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনিও চলে যান চিরতরে। ওই সময় তার সতীর্থরা কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন একদম। পরে সেই শোককে শক্তিতে রূপ দিয়ে বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
প্রথমে ওয়ানডে অভিষেকের পর ২০০৪ সালের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় রানার। দেশের হয়ে ৬টি টেস্ট আর ২৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা খুলনার ছেলে রানা ও ৫০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা সেতু চলে যান এইদিনে একসঙ্গে পৃথিবী থেকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে শোকের সাগরে ডুবিয়ে। ওই শোক এখনো ভুলতে পারেননি রানার মা জামিলা, আপনি পেরেছেন?
Discussion about this post