খেলাধুলা ডেস্ক
ওয়ানডেতে আটে নেমে সর্বোচ্চ ইনিংসের বিশ্ব রেকর্ড ছোঁয়ার তৃপ্তিটাই তাই শুধু প্রাপ্তি কারেনের। কারেনের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের পরও ৭ রানে হেরে গেল ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ কোহলিরা জিতলেন ২-১ ব্যবধানে।
অবশ্য ম্যাচের একটা পর্যায়ে ভাবাই যায়নি শেষ ওভার পর্যন্ত সমীকরণ মেলানোর অবস্থায় থাকবে ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টির শীর্ষ ব্যাটসম্যান ডেভিড ম্যালান ওয়ানডেতে প্রথম ফিফটি পেলেন ২৬তম ওভারে। সেই ওভারেই ঠিক ৫০ রান করে ফিরে গেলেন। ইংলিশদের জয় তখন ১৬২ রান দূরে। ২৪ ওভারে এ রান নেওয়া খুব কঠিন নয়। কিন্তু ইংল্যান্ডের জন্য দুশ্চিন্তার ব্যাপার ছিল, ম্যালানের আউটের আগেই বড় সর্বনাশ হয়ে গিয়েছিল। ব্যাটিং লাইনআপের অর্ধেক ২৩.৫ ওভারেই বিদায় নিয়েছে। মালান ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরলেন ড্রেসিংরুমে।
স্যাম কারেনের মাঠে নামা তখন। ইংল্যান্ডের জয় নিয়ে তখন বাজি ধরার মতো কেউ থাকার কথা নয় তখন আর। ওয়ানডেতে কারেনের আগের সর্বোচ্চ ১৫ রান। লিস্ট এ ক্রিকেটেই মাত্র পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস আছে দুটি। অন্য প্রান্তে মঈন আলী ছিলেন বটে, তবে এই অলরাউন্ডারের ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে এখন আর খুব একটা আশা রাখে না ইংল্যান্ড। সে ধারণা সত্যি প্রমাণ করে ৩২ রানের জুটি গড়েই বিদায় নিয়েছেন মঈন। শেষ ৩ ব্যাটসম্যান নিয়ে ১৩০ রান তোলার পাহাড়সম চাপ চেপে বসল কারেনের কাঁধে। একটাই ইতিবাচক দিক, তখনো ১১৭ বল বাকি ছিল।
কারেন তাই হাল ছাড়েননি। আদিল রশিদের সঙ্গে প্রথমে ৫৩ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়লেন। মার্ক উডের সঙ্গে শেষ ওভারে থামা জুটিতে জোগাড় করেছেন আরও ৬০ রান। ভুবনেশ্বরের সুইং, শার্দূল ঠাকুর ও নটরাজনদের স্লোয়ার সামলে দলকে একাই প্রায় অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিচ্ছিলেন। কিন্তু এভাবে স্ট্রাইক নিজের কাছে রাখতে গিয়ে ৪৬তম ওভারে এল মাত্র ৭ রান। ৩০ বলে ৪৮ রানের সমীকরণ ২৪ বলে ৪১ রানে ঠেকে।
সে সমীকরণ শেষ ওভারে ১৪ রানে থামল। কিন্তু টি নটরাজন দিনের সেরা বোলিং শেষ ওভারের জন্যই যেন জমিয়ে রেখেছিলেন। টানা ছয়টি বল একদম জায়গামতো ইয়র্কার লেংথে ফেলেছেন। প্রথম বলে মার্ক উড আউটও হয়ে গেলেন। শেষ ৪ বলে ১২ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। ২৩ ওভার ধরে লড়ে যাওয়া কারেন ইনিংসে প্রথমবারের মতো হতাশ করলেন। নটরাজনের ইয়র্কার লেংথের বলগুলো সীমানাছাড়া করার চেষ্টায় ব্যর্থ হলেন। ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ—দুটি বলে কোনো রান হয়নি। পঞ্চম বলে চার মারায় নিশ্চিত হয়ে যায়, নটরাজন ওয়াইড বা নো বল না করলে এ ম্যাচ ভারতই জিতছে। শেষ বলেও কোনো রান নেননি কারেন।
৯৫ রানের অপরাজিত রয়ে গেলেন। কারেনের দল আটকে রইল ৩২২ রানে।
এর আগে ভুবনেশ্বরের প্রথম স্পেল ইংল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিল প্রায়। প্রথম ওভারে ১৪ রান দিয়ে ওই ওভারেই প্রতিশোধ নিয়েছিলেন এই পেসার। দুর্দান্ত এক ইন সুইঙ্গারে জেসন রয়ের স্টাম্প উপড়ে দিয়েছেন। পরের ওভারে এলবিডব্লু করেছেন আগের দুই ম্যাচে ঝড় তোলা জনি বেয়ারস্টোকে।
এর আগে ভারত আজ সিরিজের আগের দুই ম্যাচের ইংল্যান্ডের পথে এগিয়েছে। শুরু থেকেই আগ্রাসী ক্রিকেট খেলা ভারত ১৫ ওভারেই এক শ পেরিয়েছে। ১০৩ রানের উদ্বোধনী জুটির পর রোহিত শর্মা ফিরে যেতেই ঘোর কাটে ইংল্যান্ডের। একটু পর রোহিতের সঙ্গী শিখর ধাওয়ানকেও ফেরান আদিল রশিদ। কোহলি আরও একবার স্পিনের শিকার হয়ে ফিরে গেলে ১২১ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত।
কিন্তু রান তোলার গতি কমেনি। ঋষভ পন্ত ও হার্দিক পান্ডিয়ারা আক্রমণ চালিয়ে গেছেন। ৩৫ ওভারেই আড়াই শ পার হওয়া ভারত চার শর স্বপ্ন দেখছিল। ৬২ বলে ৭৮ রান তোলা পন্ত ফেরার পরও চালিয়ে গেছেন হার্দিক। কিন্তু ৩৯তম ওভারে পান্ডিয়াও ফিরে গেলে রানের গতি কমে ভারতের। ৪৪ বলে ৬৪ রান করেন হার্দিক।
২১ বলে ৩০ রান করে শার্দূল চেষ্টা করেছিলেন শেষে ঝড় তোলার। কিন্তু ৩৪ বলে ২৫ রান করা ক্রুনাল পারেননি তাঁর সঙ্গে তাল মেলাতে। ৮ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ৩২৯ রানে অলআউট হয় ভারত।
Discussion about this post