জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
আজ (১৭ মে) আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭৫ মর্মান্তিক ঘটনার পর দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের এই দিনে দেশের মাটিতে পা ফেরেন তিনি। দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনা টানা চার দশক ধরে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন এদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারি, প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল এই আওয়ামী লীগকে। সেই সঙ্গে তার যোগ্য নেতৃত্বে চার বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দলটি। সেই সঙ্গে বর্তমান মেয়াদসহ ১৭ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।
পঁচাত্তরের মর্মান্তিক ঘটনায় দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের এই দিনে স্বদেশে ফেরেন তিনি।
দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনা টানা ৪০ বছর ধরে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন এ দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে। সেইসঙ্গে তার যোগ্য নেতৃত্বে চার চার বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে দলটি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে এ দীর্ঘ সময় দলের প্রধানের দায়িত্বে থেকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। কারাবরণ, জীবনের ঝুঁকি, এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া ছাড়াও অনেক চড়াই-উৎরাই, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। তার সফল নেতৃত্বের কারণেই আওয়ামী লীগ চার বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছে এবং বর্তমানেও ক্ষমতাসীন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এ সময়ের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্র সূচিত হয়েছে। তার শাসনামলেই চলতি বছর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নিত হয়েছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনার হাত দিয়েই বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে পরিণত হয়েছে এবং উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু ও দেশি-বিদেশি ঘাতকচক্র সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তখন দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে ভারত থেকে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তার দল আওয়ামী লীগ। জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হন দলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলও প্রকট আকার ধারণ করে। দ্বিধাবিভক্ত ও ব্র্যাকেটবন্দি হয়ে পড়ে দল। এ পেক্ষাপটে নির্বাসিত জীবনে ভারতে অবস্থানকালে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ওই বছরের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সর্বসন্মতিক্রমে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ওই বছর ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। শুরু হয় শেখ হাসিনার আরেক সংগ্রামী জীবন।
দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং নানা মুখি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে বহু বার তার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের ২৩ জন নেতাকর্মী শহীদ হন।
এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দল ও সরকারের নেতৃত্বে থেকে বাংলাদেশের জন্য বড় বড় অর্জনও বয়ে এনেছেন শেখ হাসিনা। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ তার নেতৃত্বেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা তিনিই দিয়েছেন। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তার কর্মসূচিগুলো জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, বৈশ্বিক নানা সংকট নিয়ে কথা বলা এবং মতামত দেওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও শেখ হাসিনার পরিচিত বাড়ছে।
দেশে ফিরে এলে ঢাকায় লাখ লাখ জনতা তাকে স্বাগত জানায়। এ সময় শেরেবাংলা নগরে আয়োজিত সমাবেশে লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মধ্যে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ নিতে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। ’
বাবা-মা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মধ্যেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।
এর পর থেকেই শুরু হয় শেখ হাসিনার নতুন পথ চলা। তার নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। তার নেতৃত্বে চার বার রাষ্ট্র ক্ষমতার মধ্যে বর্তমানে টানা তৃতীয় বার ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। আর চার চার বার তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি তিন বার বিরোধী দলের নেতাও ছিলেন।
নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে পিতার মতোই অবিচল, দৃঢ় ও সাহসী শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। ‘রূপকল্প ২০২১’ এর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ‘রূপকল্প ২০৪১’ এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধু-কন্যা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দেশের উন্নয়নে এরইমধ্যে ঘোষণা করেছেন শতবর্ষব্যাপী কর্মসূচি ডেল্টা প্লান-২১০০।
চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটের এই ক্রান্তিকালেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো যেখানে করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে সেখানে শেখ হাসিনার পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ ভালো আছে।
জনগণের জীবন-জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছেন। যা জিডিপির ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
করোনা সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপ জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘দ্য ইকোনমিস্ট’, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ফোর্বসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। সম্প্রতি কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বিশ্বের জন্য গভীর অনুপ্রেরণাদায়ী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
স্বদেশ প্রবর্তন দিবসের কর্মসূচি
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশব্যাপী প্রতিবছর বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করলেও এবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দিবস পালন করবে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে ‘শেখ হাসিনার চার দশক: বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি। দুইদিনব্যাপী এই প্রদর্শনী ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বত্রিশ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে আজ (১৭ মে) সকালে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং বিকেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে। সহযোগী সংগঠনও নানা কর্মসূচি পালন করবে।
Discussion about this post