১/ জীবন তার কাছে মাথা নত করে
জীবন আমাদের অনেক কিছু শেখায়। কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়। কিন্তু প্রতিটি পরিস্থিতিতে যে খুশি থাকতে জানে জীবন তার কাছে মাথা নত করে।
একটি কোচিং এ রাজু নামের একটা ছেলে ছিলো। সে নিজে এত বেশি খুশি থাকতো যে পুরো কোচিং তার কারণে খুশিতে থাকতো।
কিন্তু হঠাৎ করে দশ পনেরো দিন থেকে রাজু অনেক মন খারাপ করে থাকা শুরু করে। সে কারো সাথে কথা বলে না, তার বন্ধুও কম হতে থাকে। তাদের ক্লাসটিচার এটা বুঝতে পারে।
তারা রাজুকে ডেকে বলে যে কি হয়েছে তোমার?
কেনো তোমার এতো মন খারাপ?
তোমার কারনেই তো সবাই খুশিতে থাকতো।
তখন রাজু বলে সে একটি মেয়েকে ভালবাসত। আর সেই মেয়েটি তাকে ছেড়ে চলে গেছে তাই তার মনে হয় এই জীবনে আর কিছুই নেই। রাজু এখন সবসময় পুরনো কথাগুলো মনে করে কষ্ট পায়। সে পুরনো কথাগুলোকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। এটা শুনে শিক্ষক ভাবে তাকে তো বোঝাতে হবে জীবনে খুশিতে কিভাবে থাকতে হয়। তাই শিক্ষক রাজুকে বলেন তুমি আজ সন্ধ্যায় আমার বাড়ি আসবে, তোমার সাথে কিছু কথা আছে।
সন্ধের সময় রাজু টিচারের বাড়ি যায়।
তখন শিক্ষক বলেন তোমাকে কি একটু জুস দেবো?
রাজু বলে, আচ্ছা স্যার।
শিক্ষক জুস তৈরি করার সময় সেখানে চিনি কম দিয়ে লবণ একটু বেশি দিয়ে দেয়। রাজু জুস খাওয়ার সাথে সাথে বলে স্যার এটা কি করেছেন? এতে তো অনেক লবণ, এটা তো খাওয়া যাবেনা।
তখন শিক্ষক বলেন ঠিক আছে এদিকে দাও আমি ওটা ফেলে দিয়ে নতুন করে তৈরি করে দিচ্ছি। তখন রাজু বলে স্যার এটা ফেলে দেয়ার দরকার নেই একটু বেশি চিনি দিলে এটা খাওয়া যাবে।
শিক্ষক বলেন এটাই তো তোমাকে বোঝাতে চাইছিলাম। তোমার জীবনে লবণ বেশি হয়ে গেছে সেটা তো কম করতে পারবেনা কিন্তু চিনি বেশি দেওয়া যাবে।
প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন সময় অবশ্যই আসে যখন আমাদের প্রচুর খারাপ স্মৃতি হয় কিন্তু আমরা এই স্মৃতিগুলোকে তখনই ভুলতে পারবো যখন আমাদের জীবনে ভালো স্মৃতি আসবে।
তাই চেষ্টা করুন নিজের জীবনের সুন্দর মুহূর্ত নিয়ে আসার। আপনার জীবনে লবণ একটু বেশি হয়ে গেছে তাই প্রয়োজন একটু বেশি চিনি দেয়ার।
২/ কেবলমাত্র বিশ্বাস এর মধ্যেই আছে সেই ক্ষমতা যা পাথরেও ফুল ফোটাতে পারে।
রবি নামের একটা ছেলে ছিল। গ্রামের মধ্যে সবথেকে ভালো ছেলে ছিল। যার উদাহরণ প্রত্যেক মা-বাবাই তার সন্তানকে দিতো। পড়াশোনাতে রবি অনেক ভাল ছিলো তার বাবা মা তাকে উৎসাহ দিতেন। আর তারা চাইতো রবি জীবনে বড় কিছু করুক। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু রবি আস্তে আস্তে লোকের উপর রাখা শুরু করে। সে সবার কথায় রেগে যেতে থাকে। যখন জানা গেল এমনটা সে কেন করছে তখন দেখা যায় সে টেনসনে ভুগছিলো। সে নিজের ওপর অনেক চাপ অনুভব করতেছে। সে ভাবছিল জানিনা আমি ততটা সফল হতে পারবো কিনা যতটা আমি ভাবতেছি বা আমার বাবা-মা যতটা চাইছে। আর এই চাপের কারণেই সে এমন ব্যবহার করছে। রবির মা অনেক চিন্তায় ছিল রবিকে নিয়ে। কিছুদিন পর তিনি জানতে পারেন একজন মহাত্মা তাদের গ্রামে আসবেন তাই তিনি রাজুকে বলেন যে বেটা তুমি একবার মহাত্মাজীর সঙ্গে দেখা করো এবং তোমার মনের সমস্ত কথা তাকে বলো। ছেলেটি সেখানে যায় আর মহাত্মাজীকে বলে যে আমি অনেক চিন্তায় থাকি আর আমার মধ্যে অনেক কনফিউশন আছে যে আমি কতটা সফল হতে পারব যতটা আমি ভাবি। তখন মহাত্মাজী বলেন আমি তোমার কথা বুঝতে পেরেছি। এই নাও এই তাবিজটি রাখো এটি অনেক শক্তিশালী তাবিজ।এটা যদি তুমি গলায় পড়ে নাও তাহলে তোমাকে সফল হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবেনা এর ভিতরে অনেক শক্তিশালী মন্ত্র আছে। কিন্তু এই মন্ত্র তাবিজ কে সিদ্ধ করার জন্য তোমাকে এক রাত একা কবরে কাটাতে হবে রবি এটা শুনে বলে আমি এক মিনিটও সেখানে থাকতে পারবো না আর আপনি সারারাত সেখানে থাকার কথা বলছেন।
তখন মহাত্মাজী বলে ভয় পেয়ো না এই তাবিজ তোমাকে সবদিক থেকে রক্ষা করবে। রবি এমনটাই করে সে তাবিজ নিয়ে সারা রাত কবরে কাটায় সে বিশ্বাসই করতে পারে না যে সে এটা করেছে শেষে মহাত্মাজীকে বলে যে সত্যিই আপনার তাবিজ চমৎকারী আমি এর জন্য ওখানে সারারাত ছিলাম আর আমার একটুও ভয় পায়নি। মহাত্মাজী বলেন এবার এই তাবিজ তোমার গলায় পড়ে নাও তুমি অনেক সফল হবে। তুমি যা চাইবে তাই পাবে জীবনে। এরপর রবি তার কাজ করা শুরু করে এবং দেখতে দেখতে সে অনেক সফল হয়ে যায়। তিন বছর পর যখন সে জানতে পারে ওই মহাত্মা তাদের গ্রামে আবার আসছেন তখন তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য সেখানে যায়। যাবার পর রবি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলে যে এই তাবিজের কারণে সে কতটা সফল হয়েছে। এরপর মহাত্মাজী বলে তাবিজ টা একবার দেখি। রবি তাবিজটি মহাত্মাজীর হাতে দেয় রবির সামনেই মহাত্মাজী তাবিজটা খুলেন রবি তো দেখে অবাক হয়ে যায় যে তার ভিতরে তো কিছুই ছিল না সেটা তো খালি একটি তাবিজ।
রবি তাকে বলে যদি এর মধ্যে কোন তাবিজ ছিল না তাহলে এটা এতো কাজ কিভাবে করেছে কিভাবে আমাকে এতটা সফল করেছে?
তখন মহাত্মাজী বলেন এই তাবিজ নয় তোমার ভিতরে শক্তি তোমার বুদ্ধি তোমার পরিশ্রম তোমাকে সফল করেছে।
পার্থক্য শুধু এইটুকুই যে তুমি তোমার উপর বিশ্বাস করার পরিবর্তে এই তাবিজের উপরে বিশ্বাস করেছো।
রবির মতো আমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক আছে যারা হাতে অনেক আংটি, গলায় তাবিজ পরে ঘোরে আর তার মনে হয় এই সমস্ত কিছুর কারণেই সে ভালো কিছু করছে কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনি যা কিছুই করছেন সবকিছু আপনার কাজ আপনার ট্যালেন্ট আপনার পরিশ্রম এর জন্য কোনো তাবিজ ও আংটি আপনাকে সফল করতে পারবে না। নিজের উপর বিশ্বাস থাকলেই আপনি বড় কিছু করতে পারবেন তাই আজ থেকে নিজেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করুন কোনো বাইরের জিনিস কে নয় নিজের ভিতর শক্তিকে বিশ্বাস করবেন এবং জীবনে বড় কিছু করে দেখাবেন।
Discussion about this post