খেলাধূলা ডেস্ক
মাদেইরার রাজধানী ফানচালে ১৯৮৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এক ফুটফুটে শিশু, নাম তার ’ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ডস সান্তোস অ্যাভেইরো।’ পুরো বিশ্ব যাকে রোনালদো নামেই চিনে। অথচ যাকে সংসারের অভাব অনটন, তিন সন্তান, নেশাগ্রস্ত পিতার কথা ভেবে পর্তুগিজ সুপারস্টারকে পৃথিবীতেই আনতে চায়নি তার মা। মা ছিলেন একজন রাধুনী, বাবা করতেন মালির কাজ ; তার পাশাপাশি স্থানীয় ক্লাব অন্দোরিনহার কিট ম্যানও ছিলেন তাঁর বাবা। সে সুবাদেই রোনালদো মাত্র ৭ বছর বয়সে আন্দোরিনহায় যোগ দেন।
১২ বছর বয়সে স্পোর্টিং সিপির ৩ দিনের এক ট্রায়াল রোনালদোর জীবনের গল্পটাই যেন নিমিষেই বদলে দিয়েছিল। মাদেইরা ছেড়ে লিসবনে স্পোর্টিংয়ের ইয়ুথ একাডেমিতে যোগ দেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই ফরোয়ার্ড। শুরুটা যেহেতু লিসবনে তাই রোনালদোর মা চান তাঁর সন্তান ক্যারিয়ারের ইতিটা লিসবনেই টানুক। রোনালদো না পারলেও ক্রিশ্চিয়ানিনিও রোনালদো জুনিয়র খেলবেন লিসবনে, এমনটাই বলেছেন রোনালদোর মা ডলোরেস অ্যাভেইরো।
“রোনালদোকে লিসবনে ফিরতেই হবে। ওকে আমি বলেছি,আমি মারা যাওয়ার আগে হলেও দেখতে চাই তুমি আবার লিসবন স্পোর্টিংয়ের হয়ে খেলছ। ও যদি নাও খেলতে পারে, ক্রিশ্চিয়ানিনিও খেলবে”-
পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোই সময়ের সেরা ফুটবলার কি না তা নিয়ে আছে বিতর্ক। কিন্তু সকল তর্ক-বিতর্ককে ছাপিয়ে রোনালদোর মা মারিয়া ডলোরেস অ্যাভেইরো জানালেন রোনালদোই সেরা নন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকার চেয়েও সেরা একজনকে চেনেন তিনি। সে আর কেউ নয়, রোনালদোরই ১১ বছর বয়সী সন্তান ক্রিশ্চিয়ানিনিও রোনালদো জুনিয়র।
“১১ বছর বয়সে রোনালদো যত ভাল খেলতো, তারচেয়ে অনেক বেশি ভাল খেলে ক্রিশ্চিয়ানিনিও। রোনালদোর কোচ ছিল না, ক্রিশ্চিয়ানিনিওর জন্য ওর বাবা আছে”- বলছিলেন ডলোরেস অ্যাভেইরো
ম্যানচেস্টাই ইউনাইটেডে আসার আগে গুঞ্জন ছিল রোনালদো যাচ্ছেন ম্যানচেস্টার সিটিতে। স্বাভাবিকভাবেই এমন তথ্য বিচলিত করেছিল ডলোরেস অ্যাভেইরোকেও। কিন্তু, তিনি জানতেন রোনালদো যে সিটিতে যাচ্ছেননা।
“টেলিভিশনে দেখেছিলাম রোনালদো সিটির হয়ে খেলবে। আমি ওকে এইব্যাপারে বলেছিলাম, তখন ও আমাকে বলেছিল,’চিন্তা করিওনা। আমি ইউনাইটেডের হয়েই খেলবো।‘ ওর এই কথাটা আমায় শান্তি দিয়েছিল।
ক্রিশ্চিয়ানো ফিরেছেন ইউনাইটেডেই; ইতোমধ্যে খেলে ফেলেছেন তিনটি ম্যাচ, করেছেন ৪ টি গোলও। ১৫ বছর বয়সেই হৃৎপিন্ড জটিলতায় গেছেন ছুড়ির নীচে, ক্যারিয়ার শুরুর আগেই হতে চলেছিল শেষ। সেই যে সমস্যাকে কাঁটিয়ে একবার উঠে দাড়ালেন, পথচলা শুরু করলেন, তারপর থেকে শুধু এগিয়েই চলেছেন। পিছু ফিরে তাঁকাতে হয়নি আর কখনোই। কোথায় গিয়ে থামবেন তা জানা না থাকলেও, ফুটবল ইতিহাসে যে রোনালদোর নামটা লিখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায় সকলের কাছে।
Discussion about this post