শফিকুল ইসলাম
স্বাধীনতার ৫০ বছরে ৫০টি জাতীয় পতাকা সংবলিত সুবর্ণজয়ন্তীর র্যালি দেশের ৬৪টি জেলা প্রদক্ষিণ করবে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ জেলা প্রদক্ষিণ শেষে কেন্দ্রীয়ভাবে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশ। এর আগে দেশের ২১টি স্থানে হবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আঞ্চলিক সমাবেশ। যা শুরু হচ্ছে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) থেকে। আজ শুক্রবার দিনাজপুরে উপ-আঞ্চলিক মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে এ বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার একযোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। যা বন্ধুপ্রতিম এই দুই দেশের মধ্যে আগে কখনও হয়নি। এবারের বিজয়ের মাসকে স্মরণীয় করে রাখতে ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে জাতির জনক ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মারক বক্তৃতা’ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানাকে।
পাশাপাশি আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে অংশগ্রহণ করবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ। তিনি ৩ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন বলেও দিনক্ষণ ঠিক হয়ে আছে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ভারতের কোনও রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার-প্রধান অংশ নেননি। সেই বিবেচনায় ভারতের রাষ্ট্রপতির এই বাংলাদেশ সফর হবে নজিরবিহীন। শুধু তাই নয়, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ২০১৩ সালের মার্চে ঢাকায় এসেছিলেন। এর প্রায় ৯ বছর পর ভারতের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফর করছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন আবহে ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসবের পটভূমিতে। একই সময়ে বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ঢাকায় আসছেন ভুটানের সাবেক রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুক।
বাংলা ট্রিবিউনের দিল্লি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর যুদ্ধের সময়ই স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল ভারত। তারিখটি স্মরণীয় করে রাখতে ওই দিন ‘মৈত্রী দিবস’ পালন করা হবে। ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে ঘোষণা করেছিল। ফলে সব ঠিক থাকলে এবারের প্রথম মৈত্রী দিবসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা দেবেন শেখ রেহানা। দিল্লিতে আইসিডব্লিউএ’র সাপ্রু হাউজ মিলনায়তনে সেই বক্তৃতার সময় উপস্থিত থাকবেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান তথা ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুও।
অপরদিকে বাংলাদেশের ৭টি অঞ্চলে আঞ্চলিক ও ১৪টি স্থানে ঘুরে ঘুরে উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদর্শন করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। এসব মহাসমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- বিজয়ের গল্পগুলো পুনরায় বলা, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে পুনরায় জানা এবং সম্মান প্রদর্শন করা, যুদ্ধের অসাধারণ গল্পগুলো উপভোগ করা, তরুণদের যুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, সবাইকে এই বিজয় দিবসের বিশালতা উপলব্ধি করানো, মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দেশব্যাপী উদযাপন করা। আঞ্চলিক মহাসমাবেশ হবে পঞ্চগড়ে ২ ডিসেম্বর। যশোরে ৬ ডিসেম্বর। গোপালগঞ্জে ৭ ডিসেম্বর। কুমিল্লা ৮ ডিসেম্বর। জামালপুরে ১১ ডিসেম্বর। কক্সবাজারে ১২ ডিসেম্বর। সিলেটে ১৫ ডিসেম্বর। এ ছাড়াও উপ আঞ্চলিক মহাসমাবেশ হবে দিনাজপুরে ২৬ নভেম্বর। ঠাকুরগাঁওয়ে ২৮ নভেম্বর। ঝিনাইদহে ২৮ নভেম্বর। মাগুরায় ৩০ নভেম্বর। ফরিদপুরে ১ ডিসেম্বর। মাদারীপুরে ৩ ডিসেম্বর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪ ডিসেম্বর। ফেনী ৬ ডিসেম্বর। ময়মনসিংহে ৬ ডিসেম্বর। শেরপুরে ৮ ডিসেম্বর। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৯ ডিসেম্বর। পটিয়ায় ১১ ডিসেম্বর। মৌলভীবাজারে ১১ ডিসেম্বর। সুনামগঞ্জে ১৩ ডিসেম্বর।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বছরের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাঁকজমকপূর্ণ কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লের আয়োজন করা হয়েছে। এতে খ্যাতিমান রাষ্ট্রনায়ক, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিকদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে এবারের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক সংগীত, নৃত্য, ব্যাপক সাজসজ্জা ও আতশবাজি ফোটানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মন্ত্রণালয় বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে পালন করবে। জানা গেছে এসব অনুষ্ঠানে ব্যয় হতে পারে ২৫০ থেকে ২৬০ কোটি টাকার কমবেশি।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে ৫০টি কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত শুভেচ্ছা বাণী পাঠানো। ৫০টি জাতীয় পতাকা সংবলিত সুবর্ণজয়ন্তীর র্যালি দেশের ৬৪ জেলা প্রদক্ষিণ করবে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মহাসমাবেশ। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো। সংসদেও বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে, সেখানে বিদেশি রাষ্ট্রনায়করা ভাষণ দেবেন। জাতীয় সংসদ, হাতিরঝিল ও অন্যান্য স্থানে নির্ধারিত দিনে ‘লাইট অ্যান্ড লেজার শো’র আয়োজন করা। গণহত্যা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ব্যক্তিবর্গদের সমন্বয়ে সেমিনার ও আলোচনা সভা করা। স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘বীরাঙ্গনা’দের অবদান নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। সুবর্ণজয়ন্তী মেলা, শিক্ষার্থীদের নিয়ে মুক্তির উৎসব, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক ‘গ্লোবাল বিজনেস সামিট’, আন্তর্জাতিক ফুটবল ও ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করা হতে পারে। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, মুক্তিযোদ্ধা পদক চালু, দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার বীরনিবাস নির্মাণ, তাদের ডিজিটাল পরিচিতিমূলক সনদপত্র ও স্মার্টকার্ড প্রদান করা। ভারতের ত্রিপুরায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধিস্থলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ। মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরের হেডকোয়ার্টারে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ। মুজিবনগর থেকে নদীয়া পর্যন্ত প্রস্তাবিত স্বাধীনতা সড়কের নির্মাণকাজ শুরুসহ বিশেষ স্মরণিকা প্রকাশ। মোবাইলে বিশেষ গেম, টিভিসি ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করা।
এ প্রসঙ্গে উদযাপন কমিটির প্রধান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বছর ২০২১ সাল। এই মাহেন্দ্রক্ষণ আমাদের প্রত্যেকেরই উদযাপন করা উচিত। তাই এই আনন্দক্ষণ উদযাপন করতে আমাদের গৌরবময় ইতিহাসে তুলে ধরতে চেয়েছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরিচয়। সৌজন্যে- বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post