অনুষ্ঠানে আলোচকেরা সরাসরি এবং কারও আগে ধারণ করা বক্তব্য সম্প্রচার করা হয়। তাঁরা জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে স্মৃতিচারণা, জ্ঞানচর্চা, বইটির বিষয়বস্তু এবং তাঁর বক্তব্যের সমকালীনতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
লেখক, গবেষক ও বাম রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর ধারণ করা বক্তব্যে বলেন, তিনি ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময় এই গবেষণার পাণ্ডুলিপিটি পড়েছিলেন। এতে কোনো রাজনৈতিক দলের ধারাবাহিক ইতিহাসের বর্ণনা নেই। আবদুর রাজ্জাক এখানে ভারতে আর্থসামাজিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করেছেন। ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের স্বাধীনতার সময় কী ঘটেছিল, সেই ইতিহাসের জন্য এই গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এখনো প্রাসঙ্গিক।
সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান তাঁর ধারণ করা বক্তব্যে অধ্যাপক রাজ্জাকের সঙ্গে তাঁর স্মৃতিচারণা করে বলেন, তিনি ছিলেন মূলত পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র। আবদুর রাজ্জাকের প্রেরণা ও সহায়তায় তিনি অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। জ্ঞানতাপস তাঁর কর্মজীবনটিই বদলে দিয়েছিলেন। তিনি এই বইয়ের ভারতের রাজনীতিতে অর্থনীতির ভূমিকার অংশটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের বক্তব্যও ছিল ধারণ করা। তিনি বলেন, এটি একটি অনন্য গবেষণাকর্ম। এখানে গণতান্ত্রিক রাজনীতি, রাজনৈতিক দলের বৈশিষ্ট্য জানা যাবে। একই সঙ্গে বর্তমানের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তার তুলনা করে পাঠকেরা এখনকার রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
সমাজকর্মী ও গবেষক হামিদা হোসেন ধারণ করা বক্তব্যে বলেন, বইটি বাংলায় অনুবাদ হলে তা আরও অনেক পাঠকের কাছে যেতে পারবে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হকের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা ছিল আবদুর রাজ্জাকের। তিনি বলেন, ৭২ বছর পর এই বইটির প্রকাশনা দেশের বিদ্বৎসমাজের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান দীর্ঘ আলোচনায় বলেন, অধ্যাপক রাজ্জাক প্রচলিত ধারার চিন্তা করতেন না। তিনি প্রচলিত মতকে প্রশ্ন করতেন। নিজের মত উপস্থাপন করতেন। এই বইতে তাঁর সেই চিন্তার প্রকাশ আছে।
দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘আবদুর রাজ্জাক আমাদের পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা দিয়েছেন। এখন মতপার্থক্য করা, ভিন্নমত পোষণ একটা অপরাধ বলেই গণ্য হচ্ছে।’
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বইটির গণমাধ্যম অংশের প্রতি তাঁর আলোচনা নিবদ্ধ রাখেন। ব্রিটিশ ভারতে সংবাদপত্রের ইতিহাস, পরবর্তীকালে পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রতি শাসক মহলের নিবর্তন, নানা রকমের চাপ এখনো অব্যাহত রয়েছে। আবদুর রাজ্জাকের জ্ঞানচর্চার মূল ভিত্তি ছিল একটি সহনশীল মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা। আমাদের যার যার যে কাজ, তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করে একটি মুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
সব শেষে বইটির সম্পাদক আহরার আহমদ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বইটি পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারা তাঁর জন্য আনন্দ ও উৎসাহের। নতুন প্রজন্ম জ্ঞানতাপসের চিন্তার মূল্যায়ন করবে, এটাই তাঁদের প্রত্যাশা।
Discussion about this post