শিক্ষার আলো ডেস্ক
আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। জনজীবনে বসন্ত বরণের ছোঁয়া আর ভালোবাসার রঙ এবার একাকার।
বারো মাসে তেরো পার্বণের বাঙালি জীবনে দুই আনন্দ একই দিনে—১৪ ফেব্রুয়ারি। ফাল্গুনের বাসন্তী আবহ আর ভালোবাসা দিবসের লাল মিলেমিশে যোগ করেছে এবারের বসন্ত বরণ। এক কথায় ভালোবাসায় মাথামাখি এক বসন্ত। বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর গত দুই বছর ধরে একই দিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।
আর এই বাংলায় বসন্ত মানেই পূর্ণতা। ‘দোলে প্রেমের দোলন চাঁপা হৃদয় আকাশে’ যখন তখন এই বসন্ত মানেই প্রাণ চঞ্চলতা। কচিপাতায় আলোর নাচন।
বসন্তের আগমন বার্তা ১৯৫২ সালের সেই ফাল্গুন মনে করিয়ে দেয় যেদিন ‘পিচঢালা রাজপথে লাল ফুল হয়ে’ ভাষা শহীদেরা নিহত হয়েছিলেন শাসকের গুলিতে। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পথে নেমেছিল। বসন্ত মনে করিয়ে আশির দশকের স্বৈরাচার প্রতিরোধ আন্দোলনে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের রক্তের কথা।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলা সনের ১লা ফাল্গুন বা বসন্ত ঋতুর ১ম দিন। শীতের রুক্ষতাকে পেছনে ফেলে প্রকৃতিকে আবার নতুন রূপে সাজিয়ে তোলার আগমনী বার্তা নিয়ে বসন্তের আগমন।
আগে প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব পালিত হত। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে জড়িত ঐতিহাসিক দিবসগুলোকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে সমন্বয় করার জন্য বাংলা ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করা হয় দু’বছর আগে। আর তাতেই বদলে যায় বসন্ত উৎসবের তারিখ। ১৪২৬ বঙ্গাব্দ থেকে বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম দিনটি চলে যায় ১৪ ফেব্রুয়ারিতে।
ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে পরিচিত সারা বিশ্বে। বাংলাদেশেও দিবসটি ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তরুণ প্রজন্মের।
বসন্ত বা ফাল্গুন আসা মানেই মনে করিয়ে দেওয়া- আমার আপনহারা প্রাণ, আমার বাঁধন-ছেড়া প্রাণ! বসন্ত মানেই- পায়ে পায়েল রুমঝুম; ফাল্গুনে শুরু হয় গুনগুনানী, ভোমরাটা গায় ঘুম ভাঙানি, এক ঝাঁক পাখি এসে ঐকতানে, গান গায় একসাথে ভোর বিহানে। আর জীবনানন্দের সবিতার সঙ্গে মানুষ্য জন্ম নিয়ে আঁধার পথে ভালোবাসার গুঞ্জন।
নতুন কুঁড়ির সঙ্গে বসন্ত শুধু প্রকৃতিতেই নয় মানুষের মনেও জাগায় প্রাণের ছোঁয়া। তাই বসন্তের প্রথম দিনটিকে উদযাপন করতে সবাই মেতে ওঠে উৎসবে। নিজেকে সাজিয়ে তোলে বসন্তের রঙে। সেই রঙে আজ সাজবে পুরো বাঙালি। কেননা আজ ভালোবাসার দিন, নতুন প্রাণে জেগে ওঠার দিন। আজ ফাল্গুন।
যারা এই বসন্তে তাদের মনের মানুষ থেকে দূরে আছেন তাদের জন্যে লেখা গান- ‘কেউ বলে ফাল্গুন, কেউ বলে পলাশের মাস, আমি বলি আমার সর্বনাশ, কেউ বলে দখিনা কেউ বলে মাতাল বাতাস, আমি বলি আমার দীর্ঘশ্বাস। ’ এ থেকেই বোঝা যায় যে, বাঙালি বসন্তকে জড়িয়ে রাখে হৃদয়ের একেবারে কাছে। তারা বসন্তে মাতে নানা আনন্দ-উৎসবে। আর এসব বসন্তের উৎসবে আলো ছড়ায় বসন্তের গান ও কবিতা। ‘সুখে আছে যারা, সুখে থাক তারা, সুখের বসন্ত, সুখে হোক সারা’। কবিগুরুর এই পঙক্তিমালা আমাদের ছুঁয়ে যাক বার বার। সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা।
Discussion about this post