খেলাধূলা ডেস্ক
টি-টোয়েন্টিতে টানা ৮ ম্যাচে কোনো জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও দাপুটে শুরু সেই বাংলাদেশ দলের। কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে পরিসংখ্যান বা শক্তিমত্তা, দুই দিক থেকেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের থেকে এগিয়ে আফগানিস্তান। সবকিছু ওলোটপালোট নাসুম আহমেদের ঘূর্ণিতে! তার সঙ্গে যোগ দিলেন আরেক বাঁহাতি সাকিব আল হাসান। দুই স্পিনারের স্পিন জাদুতে ৬১ রানের বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। জবাবে ৯৪ রান তুলতেই সব উইকেট হারান নবি-রশিদরা।
টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। বিশেষ করে রশিদ খানের ঘূর্ণিতে যেন জমের মত ভয় পেতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ভারতের দেরাদুনে সেই তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে আসার পর ঘরের মাঠে আফগানদের কাছে একমাত্র টেস্ট পরাজয় ছিল সেই আফগান জুজুর কারণেই।
শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে আফগান জুজু কাটাতে পারলো বাংলাদেশ। ২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে দাপটের সঙ্গেই জয় পেয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
১৫৬ রানের লক্ষ্য। টি-টোয়েন্টিতে আফগানদের কাছে কিছুটা সহজ লক্ষ্যই বটে। তারওপর দলটির হাতে রয়েছেন রহমানুল্লাহ গুরবাজের মত ভয়ঙ্কর ওপেনার। যার ব্যাটে অসাধারণ সেঞ্চুরিতে শেষ ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়েছে আফগানিস্তান।
সেই রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে দিলেন স্পিনার নাসুম আহমেদ এবং ফিল্ডার ইয়াসির আলি রাব্বি।
প্রথম ওভারটি করার জন্য অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বল তুলে দেন নাসুম আহমেদের হাতে। ওভারের দ্বিতীয় বলেই ব্যাটের কানায় লাগিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন হযরতউল্লাহ জাজাই। কিন্তু বলটা গিয়ে পড়ে অনেকটা দুরে। ফিল্ডার সেই ক্যাচটি ধরতে পারলেন না।
ওভারের চতুর্থ বলেই রহমানুল্লাহ গুরবাজ ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন পয়েন্টে। কোনো রান করার আগেই আউট হয়ে গেলেন রহমানুল্লাহ।
পরের ওভারে মাহেদী হাসানের বলে ক্যাচ তুলেছিলেন হজরতউল্লাহ জাজাই। কিন্তু সেই ক্যাচ ফেলে দেন মুনিম শাহরিয়ার। খুবই সহজ একটি ক্যাচ ছিল ওটা। কিন্তু নাসুম পরের ওভার বল করতে এসে আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন। তার দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে হযরতউল্লাহ জাজাই ক্যাচ তুলে দেন লং অনে। সেটি তালুবন্দী করেন মোহাম্মদ নাইম।
ওভারের তৃতীয় বলেই তার বলে বোল্ড হয়ে গেলেন দরবিশ রাসুলি। ৬ বল মোকাবেলা করে মাত্র ২ রান করেছিলেন তিনি। ৮ রানে পড়লো ৩ উইকেট। আফগানদের চতুর্থ উইকেট হিসেবে করিম নাজাতকে তুলে নেন নাসুম আহমেদ। ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে রীতিমত ধুঁকতে শুরু করে আফগানরা।
তবে এ সময় তাদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসেন মোহাম্মদ নবি এবং নজিবুল্লাহ জাদরান। এ দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ৩৭ রানের জুটি। এই জুটি যখন বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে, তখনই সেটা ভাঙার দায়িত্ব নিলেন সাকিব আল হাসান।
শুধু জুটি ভাঙাই নয়, পরপর দুই উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় ধরে রাখলেন সাকিব। রিভিউ নিয়ে একবার বেঁচে যাওয়া মোহাম্মদ নবিকে এবার আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন সাকিব। ১৯ বলে ১৬ রান করে ফিরে যানে আফগান অধিনায়ক।
পরের ওভারেই আবার আঘাত হানলেন সাকিব। এবারও উইকেটে প্রায় সেট হয়ে যাওয়া নজিবুল্লাহ জাদরানকে ফেরালেন তিনি। ২৬ বলে ২৭ রান করে সাকিবের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে মুনিম শাহরিয়ারের হাতে ধরা পড়েন নজিবুল্লাহ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। এই ম্যাচ দিয়ে টাইগারদের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে মুনিম শাহরিয়ারের। সেই সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় ইয়াসির আলী রাব্বিরও।
দলীয় ৮০ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে লিটন অটল থেকে ছুটতে থাকেন ফিফটির দিকে। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দারুণ ফর্ম টি-টোয়েন্টিতেও টেনে আনেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম ও আফগানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নিতে ৩৪ বল খেলেন তিনি; চার হাঁকান ৩টি, ছক্কা ২টি। ১৭তম ওভারে ফারুকির স্লোয়ারে শর্ট ফাইন লেগে ওমরজাইয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দিলে লিটনের ইনিংস থামে ব্যক্তিগত ৬০ রানে। ৪৪ বল স্থায়ী ইনিংসে তিনি হাঁকান আরও এক বাউন্ডারি।
লিটনের সঙ্গে ৩৮ বলে ৪৬ রানের জুটি গড়েছিলেন আফিফ হোসেন।
শেষ বল খেলতে আসা শরীফুল বাউন্ডারি হাঁকালে আফগানদের সামনে ১৫৬ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ।
বল হাতে আফগানিস্তানের ফারুকি ও ওমরাজাই ২টি করে এবং রশিদ ও কায়েস ১টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন নাসুম আহমেদ আর ম্যান অব দ্যা ম্যাচ লিটন দাস ।
Discussion about this post