অনলাইন ডেস্ক
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়েই সারা দেশের বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব! কেবলমাত্র এই একটি কেন্দ্রেই ২৩ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তির টারবাইন উদ্ভাবনের পর এমন এক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম আমিন টেক্সটাইলস লিমিটেডের কারিগরি বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন টানা প্রায় দুই বছরের গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নতুন এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন।
তিনি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, একই পানির স্রোত ব্যবহার করে অসংখ্য টারবাইন স্থাপন করার মাধ্যমে মূলতঃ হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় কোনো পানিই অপচয় হয় না। প্রতি কণা পানি একাধিকবার ব্যবহৃত হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
সংবাদমাধ্যমের সাথে আলাপকালে নিজের গবেষণার বেশ কিছু ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করেন বিল্লাল হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে জলবায়ুর মারাত্মক ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার খুবই নগণ্য।
আর এই নগণ্য অংশের সিংহভাগ দখল করে আছে পানি বিদ্যুৎ। পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচলিত পদ্ধতিতে পানির স্থিতিশক্তির (পোটেনশিয়াল এনার্জি) বেশিরভাগই অপচয় হয়ে যায়। অর্থাৎ বর্তমান পদ্ধতিতে ব্যবহৃত পানি শুধুমাত্র একবার ব্যবহার হয়। পরে তা মিশে যায় নদীতে। বিল্লাল হোসেন এমন একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন যাতে ওই পানি বারবার ব্যবহার করা যায়।
তিনি নতুন প্রযুক্তির ইম্পালস টারবাইন মডেল উদ্ভাবন করেছেন যাতে পানির আনুভূমিক স্রোতশক্তিকে সরাসরি ব্যবহারের মাধ্যমে লম্বভাবে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। এতে কোনো পানি অপচয় হবে না। একই পানি বারবার প্রতিটি টারবাইনে ব্যবহৃত হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্তমানের পাঁচটি টারবাইনের পরিবর্তে শুধুমাত্র একটি ব্যবহার করে অনেকগুলো টারবাইনের সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
নতুন এই প্রযুক্তিতে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে একশগুণেরও বেশি। তিনি দাবি করেন, এই প্রযুক্তিতে কেবল কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২৩ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব যা সারাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।
নিজের জন্ম কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে বলে উল্লেখ করে মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, কাপ্তাই লেক অনেক বড় একটি সম্পদ। এই পানির খুব সামান্য অংশ ব্যবহার করে সারাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
বর্ষাকাল কিংবা শুষ্ক মৌসুম কখনো এই কেন্দ্রে পানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, আমার উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে একই পানি বারবার ব্যবহৃত হবে, শুধু টারবাইন স্থাপনে একটি বিশেষ সূত্র অনুসরণ করতে হবে। তিনি সেই সূত্রটি নিয়ে গত দুই বছর ধরে কাজ করে এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বলেও জানান। নতুন উদ্ভাবিত মডেলের টারবাইন পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম বলে উল্লেখ করে নিজের প্রযুক্তি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বালতিতে পানি নিয়ে একটি স্রোতধারা তৈরি করে পরপর তিনটি টারবাইন স্থাপন করে তিনটি পৃথক পয়েন্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তিনটি বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালানোর মাধ্যমে তার গবেষণার বিষয়টি উপস্থাপন করেন।
Discussion about this post