নিজস্ব প্রতিবেদক
মহাসমারোহে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও বর্ণিল আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মহান স্বাধীনতা দিবস ২০২২ উদযাপিত হয়েছে। ২৬ মার্চ ২০২২ সকাল ১০:০০ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে চবি স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অতঃপর চবি বিভিন্ন পর্ষদের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সকাল ১০:৩০ টায় চবি মাননীয় উপাচার্যের নেতৃত্বে চবি স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভ চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়ে চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতে মহাকালের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একইসাথে ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনের শহীদ, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশলক্ষ শহীদ এবং দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সকল শহীদদের তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোয় তিনি মাননীয় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশলক্ষ শহীদ, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানমালায় তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তিনি মাননীয় উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতির পিতা যে আদর্শ রেখে গেছেন তা সঠিকভাবে ধারণ, লালন ও চর্চা করতে হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু সনদ অর্জনের জন্য নয়; বরং নিজেদের সৎ, যোগ্য ও বহুমাত্রিক দক্ষতা সম্পন্ন আলোকিত মানবসম্পদে রূপান্তরিত হওয়ার অন্যতম উর্বর ক্ষেত্র। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শেষে শুধু চাকুরীর পেছনে না ঘুরে নিজেরা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ ও সম্প্রীতির বন্ধনে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল ধরণের নেতিবাচক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সম্মানিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, যে দর্শনের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত সেটিকে ধারণ, লালন ও চর্চা অব্যাহত রাখাই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার।
মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার তাঁর বক্তব্যে মহাকালের মহানায়ক স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশলক্ষ বীর বাঙালি, শহীদ জাতীয় চারনেতা ও ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বর্বর হায়েনাদের হাতে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবৃন্দকে বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন। এ ছাড়া তিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মাননীয় উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান স্বাধীনতা দিবসের বর্ণাঢ্য আয়োজনে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী অনলাইনে অংশগ্রহণ করায় তাঁদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। মাননীয় উপাচার্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার পটভূমি আলোকপাত করে বলেন, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণ বিশ্ব ইতিহাসের এক কলংকজনক ঘটনা। এ হায়েনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মূল মন্ত্র এবং সম্মোহনী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির পিতার এই যাদুকরী নেতৃত্বের জন্য বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালি জাতির জন্য নয় পুরো বিশ্ববাসীর কাছে অবিসংবাদিত নেতা।
মহান স্বাধীনতা দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষে গঠিত চবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য-সচিব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ রাশেদ-উন-নবী, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. সেলিনা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. সজীব কুমার ঘোষ, সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. এ কে এম মাঈনুল হক মিয়াজী, জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. এ কে এম রেজাউর রহমান, রসায়ন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. দেবাশিস পালিত, অফিসার সমিতির সভাপতি জনাব রশিদুল হায়দার জাবেদ, কর্মচারী সমিতির সভাপতি জনাব সুমন এবং কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জনাব মোহাম্মদ আলী হোসেন।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সূচিত অনুষ্ঠানে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়। এ ছাড়াও কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৬ মার্চ রাত ১২:০১ মিনিটে (২৫ মার্চ দিবাগত রাতে) বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভ বেদীতে বিএনসিসি কর্তৃক বিউগল বাজিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবসকে স্বাগত জানানো হয় এবং প্রত্যুষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে জাতীয় শিশু দিবস ২০২২ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার পুরস্কার এবং আইকিউএসি আয়োজিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অপ্রকাশিত গবেষণার পোস্টার প্রদর্শনীর পুরস্কার বিতরণ করা হয়। মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিকেল ৪:০০ টা থেকে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্বাধীনতা কনসার্ট। কনসার্টে বিখ্যাত ব্যান্ড দল ‘শিরোনামহীন’ ও ‘তীরন্দাজ’ এবং ব্যান্ড দল ‘মাইলস’ এর ভোকাল শাফিন আহমেদ সংগীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানসমূহে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, কলেজ পরিদর্শক, প্রভোস্টবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির সদস্যবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, অফিসার সমিতি, কর্মচারি সমিতি, কর্মচারি ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দসহ সুধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post