শিক্ষার আলো ডেস্ক
মায়ের কোলে চরেই স্কুল জীবন শুরু। বৃষ্টি, ঝড় বা বন্যা কোনো বাঁধাই তাঁকে স্কুলে যাওয়া থেকে থামাতে পারেনি। চার হাত-পা থাকলেও অকেজো সবগুলো। তবে হাতের তালুতে ভর করে মাস্টার্স পাসের দিন গুনছেন তিনি। বলছিলাম নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপা ইউনিয়নের শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবক ইসমাইল রহমান (২৬)-এর কথা।
জন্মের ১৩ মাস বয়সে তাঁর বাবা-মা জানতে পারেন তাঁদের আদরের ইসমাইল অন্য সব বাচ্চাদের মতো স্বাভাবিক নয়। হাত-পা থাকলেও সেগুলো সব অচল। হাত-পা অচল হলেও মেধা দিয়ে তিনি প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন। কোনো বাঁধাই তাঁর অদম্য ইচ্ছের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
২০১২ সালে নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৪ সালে সরকারি দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন এবং একই কলেজ থেকে ২০২০ সালে অনার্স শেষ করেন ইসমাইল। বর্তমানে তিনি মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।
মেধাবী ইসমাইল ইউনিয়নের পশ্চিম সমসাবাদ গ্রামের বাবুল হোসেন ভুলুর তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। ১৯৯৬ সালে ইসমাইলের জন্ম। এক সময় ইসমাইলের জন্য পরিবার দুশ্চিন্তা করলেও বর্তমানে তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন বাবা-মা। তাঁদের স্বপ্ন তাঁদের সন্তানের পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করা হবে। ইসমাইলও চায় কারও বোঝা হয়ে না থেকে আত্মনির্ভরশীল হয়ে বাবা মায়ের পাশে দাঁড়াতে।
ইসমাইল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে অবজ্ঞা অবহেলা আর শত বঞ্চনার মাঝেই বেড়ে উঠেছি। তবুও হাল ছাড়িনি। আমি করো করুণার পাত্র হতে চাই না। আমি চাই আমার যোগ্যতা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী কোটায় একটি সরকারি চাকরি হোক। তাহলেই আমি আমার বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। তাই আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মাস্টার্সের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিসিএসর প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
বাবা বাবুল হোসেন ভুলু বলেন, ‘আমার ছেলেকে নিয়ে আমি গর্বিত। একের পর এক সার্টিফিকেট সে আমাকে উপহার দিয়েছে। একজন বাবার আর কী চাওয়া হতে পারে? শুনেছি সরকার প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরি দিচ্ছে। আমার ছেলে তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী একটা চাকরি পেলে আমরা অত্যন্ত খুশি হতাম।’
ইসমাইলের মা ইয়াসমিন বাবুল বলেন, ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে অনেক কষ্ট করে নিজেই ক্লাসে নিয়ে গিয়েছি। বৃষ্টির মৌসুমে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। সে ভালো মতো কলম ধরতে পারে না। সে তাঁর ইচ্ছে শক্তি দিয়ে হাতের তালু দিয়ে কলম ধরে লেখা আয়ত্তে এনেছে। হাতের তালুতে ভর করে অনার্স পাস করেছে। মাস্টার্স ও বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছেলের ইচ্ছা সরকারি চাকরি করার, তাই সরকারের প্রতি আকুল আবেদন যেন ছেলেকে একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইসমাইলকে এরই মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী একটি চাকরির ব্যাপারে আমি আমার পক্ষ থেকে চেষ্টা করব।’
Discussion about this post