কুমিল্লা থেকে শুরু করা ‘লাল সবুজ উন্নয়ন সংঘ’ নামের সংগঠনটির কার্যক্রমে বিশিষ্টজনও মুগ্ধ। এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সভাপতি কাওসার আলম সোহেল সমকালের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জানিয়েছেন তাঁর স্বপ্নযাত্রার আলেখ্য।
তিনি জানান, তাঁর বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে কাওসারের শৈশব কেটেছে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে। বাবার অবসর গ্রহণের পর পুরো পরিবার চলে আসে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিটেশ্বর ইউনিয়নের নোয়াদ্দা গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই স্কুলে ভর্তি হন কাওসার। প্রতিদিন স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে দেখতেন দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের দুর্বিষহ জীবন। অভাবের কারণে তারা পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে না। আর অনেক পরিবারই বোঝা মনে করে ছোট ছোট মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছে। এমন নানা ঘটনা দেখে কাওসারের মন ভারাক্রান্ত হতো। ভাবতেন, তাদের জন্য কিছু করবেন।
কাওসার ও তাঁর ছোট বোন ফারজানা আক্তার সুমি সেনা কল্যাণ সংস্থা থেকে বৃত্তি পেতেন। এক দিন সিদ্ধান্ত নিলেন, বৃত্তির টাকা দিয়েই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জামা-কাপড়, বই ও খাতা-কলম কিনে দেবেন তারা। এরই পাশাপাশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও শিশুশ্রম বন্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করবেন।
২০১১ সালের মে মাসে দুই ভাইবোন মিলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি গড়ে তোলেন। এতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সদস্য হন এবং তাদের প্রতি মাসের এক দিনের টিফিনের ১০ টাকা দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করতে শুরু করেন।
কাওসার বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিশুশ্রম বন্ধ, শিশুদের পাঠদান, তাদের মাঝে খাবার ও পোশাক বিতরণ করে আসছে। এ ছাড়া মাদক, বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং, ধর্ষণ ও দুর্নীতিবিরোধী সভা-সেমিনারের মাধ্যমে সচেতন করা, সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে লালকার্ড প্রদর্শন ও শপথ করানোর কাজও করছেন তারা। প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও সদস্যদের টিফিনের টাকায় প্রতিবছর এক লাখ গাছের চারা বিতরণ ও রোপণ করে সংগঠনটি।
ইতোমধ্যে সাড়ে ৫ লাখ গাছের চারা রোপণ করেছে সংগঠনটি। দেশের প্রতিটি জেলায় কাজ করছেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা। তাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার।
কাওসার জানান, গত ১১ বছরে সংগঠনটি দেশের ১৩৬৮টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত হয়েছে। তাদের সংগঠনের সবচেয়ে বড় কাজ হলো শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করা।
কাওসার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় অফিস ঢাকায়। সদস্যদের চাঁদায় অফিসটি পরিচালিত হয়। তিনি বলেন, এই সংগঠনটি কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান নেয় না। তাঁরা নিজেদের টাকায় সংগঠন পরিচালনা করে আসছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এ সংগঠনের কার্যক্রম তাকে মুগ্ধ করেছে। শুধু সচেতনতা সৃষ্টি নয়, এ সংগঠন ঈদ, পূজা ও বিশেষ দিবসে অসহায় মানুষের পাশে সহায়তা নিয়ে ছুটে যায়। সরকারের উচিত এ সংগঠনের আরও সম্প্রসারণের জন্য সহায়তা করা।
এ সংগঠন কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে একুশে পদকজয়ী ভাষাসংগ্রামী ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. জসিম উদ্দীন আহমেদ বলেন, তাদের তৎপরতা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এ সংগঠন থেকে বিনামূল্যে লাখ লাখ গাছ উপহার দেওয়া হয়েছে, যা সম্পদে রূপ নিচ্ছে। তিনি বলেন, এ সংগঠনের অনেক অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি তরুণ প্রজন্মের মাঝে বেশ উৎসাহ দেখেছেন।
Discussion about this post