শিক্ষার আলো ডেস্ক
মাত্র ৫ বছরের গবেষণায় রোগ প্রতিরোধী এবং উচ্চ ফলনশীল সরিষার পাঁচটি জাত উদ্ভাবনের সফলতা পেয়েছেন ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। এতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, উদ্ভাবিত জাতের সরিষা আবাদের ফলে চাষীরা দ্বিগুণ ফলন পাবেন। এদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষক পর্যায়ে উদ্ভাবিত জাত ছড়িয়ে দেওয়া গেলে দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিনের নেতৃত্বে একদল নবীন গবেষক ২০১৭ সালে রোগ প্রতিরোধী এবং উচ্চ ফলনশীল সরিষার জাত উদ্ভাবনে গবেষণা কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাউরেস ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে মাত্র ৫ বছরের গবেষণায় নতুন পাঁচটি সরিষার জাত উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন। জাতগুলো হচ্ছে বাউ সরিষা- ৪, ৫, ৬, ৭ এবং ৮। এই পাঁচটি জাতই ব্রাসিকা জুন্সিয়া প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। জাতগুলো উচ্চ ফলনশীল এবং গড় ফলন প্রতি হেক্টরে আড়াই টন। এসব জাত প্রচলিত অন্যান্য জাতের তুলনায় ৫০ থেকে ৮০ ভাগ বেশি ফলন দিতে সক্ষম।
প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. আরিফ হাসান খান রবিন জানান, দীর্ঘ পাঁচ বছরের নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে তার গবেষণার দল এ জাতগুলো উদ্ভাবন করেছেন। আগাম ও স্বল্প জীবনকালের আমন ধান চাষের পর উক্ত সরিষা জাতগুলো চাষ করলে কৃষকরা বুড়ো ফসল করতে পারবেন এ কারণে এ জাতগুলো সারাদেশে চাষের উপযোগী।
তিনি আরো বলেন, ‘সরিষা আমাদের নিজস্ব তেল-বীজ ফসল। বাংলাদেশ কৃষি ঐতিহ্যের সঙ্গে সরিষা সম্পর্ক নিবিড়। শীতকালে সরিষা ফুলের অসাধারণ গন্ধ এবং মৌমাছির নাচনে সারাদেশ আনন্দে দোলিত হয়। অলটারনারিয়া ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী সরিষা দেশের ভোজ্য তেলের সংকট অনেকাংশেই কমে যাবে।’
উদ্ভাবিত জাতগুলো উচ্চ ফলনশীল এবং গড় ফলন প্রতি হেক্টরে আড়াই টন এবং প্রচলিত জাতগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ ফলন দিতে সক্ষম হবে বলে বলছেন গবেষকরা। কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রভাষক নাইমা সুলতানা জানান, উদ্ভাবিত বাউ সরিষা-৪ থেকে ৮ পর্যন্ত নতুন জাত রোগ প্রতিরোধী এবং দ্বিগুণ ফলন হওয়ায় কৃষি ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বর্তমানে প্রায় ০ দশমিক ৩ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়। দেশে সরিষার উৎপাদন বছরভেদে মোট দেশীয় চাহিদার মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পূরণ করতে পারে। এ কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশকে প্রায় ২১০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বিদেশ থেকে ভোজ্যতেল এবং তেল বীজ আমদানি করতে হয়। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে দেশীয় উন্নত জাতের সরিষা উৎপাদন বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই।
এই বিষয়ে ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মতিউরুজ্জামান জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উদ্ভাবিত নতুন সরিষার পাঁচটি জাত আবাদে দ্বিগুণ ফলন হওয়ায় দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে। এই উন্নত জাতসমূহ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
কৃষি বিভাগ ও বিএডিসির মাধ্যমে আগামী অক্টোবরে সরিষা আবাদের মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন তারা জানান সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
Discussion about this post