শিক্ষার আলো ডেস্ক
প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেয় সৌদি আরব। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও এই সুযোগ পেয়ে থাকেন।
সৌদি আরবে উচ্চশিক্ষার প্রাথমিক শর্ত
সৌদি আরবে পড়াশোনার জন্য প্রথমে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে হয়। ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটে সন্তোষজনক ফল অর্জিত হলে স্নাতক কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়।
সৌদি আরবের শিক্ষাব্যবস্থা
সৌদি আরবের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত: কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক। দেশটিতে সব ধরনের শিক্ষা অবৈতনিক। সব শিক্ষা উপকরণ বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়। মক্কা নগর থেকে কিছুদূরে উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। এখানে ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়ও পড়ানো হয়। আধুনিক ক্লাসরুম, সুপরিসর ক্যাম্পাস, অত্যাধুনিক লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরি, উন্নত হোস্টেল ব্যবস্থাপনা এবং গবেষণা উপযোগী সুন্দর পরিবেশের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ পছন্দের।
বৃত্তির সুযোগ ও সুবিধা
মাসিক ছাত্রবৃত্তি প্রায় ৮৪০ সৌদি রিয়াল। কোনো টিউশন ফি নেই। বিনা মূল্যে থাকা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহিত শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্যামিলি ভিসা ও কোয়ার্টারের ব্যবস্থা আছে। বছরে তিন থেকে চার মাস গ্রীষ্মকালীন ছুটি, দেশে আসা-যাওয়ার টিকিট (বছরে একবার) ও প্রস্তুতি ভাতা।
সৌদি আরবের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের শুরুতে ডিপ্লোমা ইন অ্যারাবিকে আবেদন করতে হয়। এই ডিপ্লোমা শেষে স্নাতক কোর্স শুরু করতে হয়। সৌদি আরবের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়, তার সবগুলোতেই আরবি ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট রয়েছে। যাঁদের মাতৃভাষা আরবি নয়, তাঁদের এই ইনস্টিটিউটে অত্যন্ত যত্ন সহকারে শুদ্ধ আরবি শেখানো হয়।
কোর্সের মেয়াদ
সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ও ইসলামী বিষয়ে (শরিয়াহ, দাওয়া ও ইসলামিক স্টাডিজ) স্নাতক পুরোপুরি আরবি মাধ্যমে পড়ানো হয়। তাই ডিপ্লোমা-ইন-অ্যারাবিক ছাড়া আরবি বিষয়ে ভালো করা খুবই কঠিন। যদিও অন্য সব বিষয়ে স্নাতক কোর্স ইংরেজিতে পড়ানো হয়। বিজ্ঞান বা বাণিজ্য যে বিষয়েই পড়াশোনা করেন না কেন, সবাইকে আরবি ও ইসলাম শিক্ষার বেসিক বিষয় পড়তে হবেই।
চার লেভেলের ডিপ্লোমা-ইন-অ্যারাবিক শেষ করতে মোট দুই বছর সময় লাগে। যাদের আরবি দক্ষতা ভালো, তারা সরাসরি দুই বা তিন লেভেল থেকে শুরু করতে পারবেন। এতে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ডিপ্লোমা শেষ করে স্নাতক কোর্স শুরু করা যায়। মূলত এ কারণেই সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সরাসরি স্নাতকে আবেদনের সুযোগ নেই।
আবেদনের শর্ত
আবেদনকারীর বয়স ১৭ থেকে ২৩ (কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ বছর) বছরের মধ্যে হতে হবে। এইচএসসি/আলিমে ন্যূনতম জিপিএ ৪। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজাল্টের বিষয় স্পষ্ট করে বলা থাকে না। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ ৪.০০-এর কম হলেও আবেদন করা যায়।
আবেদন করবেন যেভাবে
আবেদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা। আবেদন পিডিএফ ফরম্যাটে সর্বোচ্চ ২০০ কেবি সাইজের হতে হবে, পাসপোর্ট (কমপক্ষে দুই বছর মেয়াদ), পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে টুপি ও চশমা ছাড়া), মেডিকেল ফিটনেসের সনদ (সিভিল সার্জন অথবা যেকোনো মেডিকেল সেন্টার থেকে), এইচএসসি/আলিম পরীক্ষার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট অনুমোদিত অনুবাদ কেন্দ্র থেকে আরবি অনুবাদ করে নোটারি ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সত্যায়ন করাতে হবে। এরপর কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট বোর্ড, শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়ন এবং সর্বশেষ বাংলাদেশের সৌদি দূতাবাস থেকে সত্যায়ন করতে হবে। চারিত্রিক প্রশংসাপত্র (আবেদনকারীর নিজ দেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশন অথবা দুজন বিশিষ্ট আলেম অথবা কলেজের শিক্ষকের কাছ থেকে নিতে হবে), হাফেজ হলে হিফজ সার্টিফিকেটও আরবি অনুবাদ ও নোটারি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে আরও কিছু কাগজপত্র লাগতে পারে। যেমন নাগরিকত্ব সনদ ও জন্মনিবন্ধন সনদের আরবি অনুবাদ ও নোটারি।
ছাত্রীদের আবেদনের ক্ষেত্রে মাহরাম অভিভাবকের ইকামার কপি লাগবে। সৌদি আরবের ইসলামী সংবিধান অনুযায়ী মাহরাম ছাড়া মেয়েদের উচ্চশিক্ষার কোনো অনুমতি নেই।
মদিনা ইসলামী ইউনিভার্সিটি, মদিনা
কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি, জেদ্দা
উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটি, মক্কা
তাইবাহ ইউনিভার্সিটি, মদিনা
Discussion about this post