খেলাধূলা ডেস্ক
১১ বছর পর এশিয়া কাপে প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে জিতলো টাইগাররা! এর আগে ২০১২ সালে শেষবার ভারতকে হারায় তারা।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে যথারীতি বাংলাদেশের টপ-অর্ডাররা ব্যর্থ হন। এদিন অবশ্য নতুন উদ্বোধনী জুটি তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ।
তামিম শুরুটা করেছিলেন বেশ ভালো। প্রথম ওভারে মোহাম্মদ শামিকে একটি বাউন্ডারি হাঁকান, পরে শার্দুল ঠাকুরকে দুটি। কিন্তু তৃতীয় ওভারে এসেই প্রথম উইকেট পেয়ে যায় ভারত। শামীর ইনসুইং বুঝতেই পারেননি লিটন, তিনি হয়ে যান বোল্ড। দুই বল খেলে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন লিটন। শুরুতে ভালো কিছুর আশা দেখানো তানজিদ তামিম আউট হন ঠিক পরের ওভারে।
১২ বলে ১৩ রান করে শার্দুলের স্লোয়ার বাউন্সার পুল করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ছয় মাসে নানা নাটকীয়তার পর সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয়ও নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। মুখোমুখি হওয়া প্রথম ৮ বলই ডট দেন তিনি। এরপর একটি বাউন্ডারি হাঁকান। মাঝে একটি ডট দিয়ে পরে শামীকে পুল করতে যান; কিন্তু বলে যথেষ্ট বাউন্স ছিল না। বল ব্যাটে লেগে উপরে উঠলে ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলই।
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর পাঁচে পাঠানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। কিন্তু কখনোই তাকে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য লাগছিল না, মাঝে তিলক ভার্মা ক্যাচও ছাড়েন। তারপর ২৮ বলে ১৩ রান করে অক্ষর প্যাটেলের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন মিরাজ। ৫৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলা দলের হাল ধরেন তাওহীদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসান।
সাকিব এতক্ষণ একাই লড়াই করছিলেন, পরে সঙ্গী হিসেবে পান হৃদয়কে। শুরুতে কিছুটা ধীরস্থির খেললেও পরে হাত খোলেন তাওহীদ। সাকিব হাফ সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। দীর্ঘদিন ধরে তিন অঙ্কের দেখা না পাওয়া এই ব্যাটার স্বাচ্ছন্দ্যেই চার-ছক্কা হাঁকাচ্ছিলেন।
কিন্তু পানি পানের বিরতির পরই শার্দুল ঠাকুরের ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় স্টাম্পে। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৫ বলে ৮০ রান করে আউট হন সাকিব। হৃদয়ের সঙ্গে তার ১০১ রানের ম্যাচে ফেরানো জুটিটিও ভেঙে যায়। এরপর টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তাওহীদ হৃদয়।
এই ব্যাটারকে ভালো সঙ্গ দিচ্ছিলেন নাসুম আহমেদ। কিন্তু হৃদয়ই আগে সাজঘরে ফেরত যান। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৮১ বলে ৫৪ রান করে শামীকে তুলে মারতে গিয়ে তিলক ভার্মার হাতে ক্যাচ দেন। তার বিদায়ের পরও দলের রান বেশ ভালোই হয়েছে। শেষের দিকের ব্যাটাররা রান করতে পারেন না, দলের এমন আফসোস দূর করেন নাসুম।
এই ব্যাটার দুর্দান্ত ব্যাট করেন। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৫ বলে ৪৪ রান করে আউট হন। তার বিদায়ের পরও দলের রান এগিয়ে যায়। মাহেদী হাসান ও অভিষিক্ত তানজিম সাকিব জুটিতে যোগ করেন ২৭ রান। ২৩ বলে ২৯ রান করে মাহেদী ও ৮ বলে ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন তানজিম সাকিব। বাংলাদেশ পায় ভালোভাবে লড়াই করতে পারার মতো সংগ্রহ।
অন্যদিকে ভারতের ইনিংসে প্রথম ওভারের দ্বিতীয় রোহিত শর্মা (০) ড্রাইভ খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন কভার পয়েন্টে। এরপর তানজিম সাকিব নিজের পরের ওভারে বোল্ড করেন তিলককে (৫)। যে বলটি বেরিয়ে যাবে ভেবে ছেড়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটার, কিন্তু সাকিবের সুইংয়ে ভেঙে যায় স্টাম্প। ১৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত।
সেখান থেকে জুটি গড়েন লোকেশ রাহুল আর শুভমান গিল। গিল বেশ স্বচ্ছন্দ্যে ব্যাট করলেও রাহুলকে হাত খুলে খেলতে দেননি বাংলাদেশি বোলাররা। অবশেষে ধীরগতির রাহুলকে ফেরান শেখ মেহেদি। ৩৯ বলে ১৯ রান করে মিডউইকেটে শামীম হোসেন পাটোয়ারীর হাতে ধরা পড়েন রাহুল।
ইশান কিশানও বেশিদূর এগোতে পারেননি। ৫ রান করা এই ব্যাটারকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এরপর থিতু হওয়ার চেষ্টা করা সূর্যকুমারকে (৩৪ বলে ২৬) বোল্ড করেন সাকিব। মোস্তাফিজ বোল্ড করেন জাদেজাকে (৭)।
শুবমান গিলকে ১২৩ রানে বিদায় করার পর ভারত চাপ কাটিয়ে ওঠে অক্ষর প্যাটেলের ব্যাটে। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ভারত আবারও বাংলাদেশকে হতাশায় ভাসাতে বসেছিল। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান তার শেষ ওভারে জোড়া আঘাত হেনে দারুণ অবস্থানে নেন বাংলাদেশকে।
শেষ ওভারে ১২ রান দরকার ছিল ভারতের। বাংলাদেশের লাগতো এক উইকেট। পুরো ম্যাচে দারুণ বোলিং করা তানজিম হাসান সাকিব শেষ ওভারে চমৎকার বোলিংয়ে সেই রান ডিফেন্ড করেন। প্রথম তিন বলে ডট দেন। চতুর্থ বলে চার মেরে মোহাম্মদ শামি উত্তেজনা ছড়ান। পঞ্চম বলে দুটি রান নিতে গিয়ে তানজিদ হাসান তামিমের থ্রোতে লিটন দাস স্টাম্প ভেঙে দিলে তিনি রান আউট হন। ২৫৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। বাংলাদেশ জেতে ৬ রানে।
প্রথম দুই ওভারে দুটি উইকেট নেওয়া তানজিম সাকিব ৭.৫ ওভার বল করে ৩২ রান দেন। সবচেয়ে বেশি তিন উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুটি পান মেহেদী হাসান।
ভারত ৪৯.৫ ওভারে ২৫৯/১০ (প্রসিদ্ধ ০*, শামি ৬, অক্ষর ৪২, শার্দুল ১১, গিল ১২১, জাদেজা ৭, সূর্যকুমার ২৬, ইশান ৫, রাহুল ১৯, তিলক ৫, রোহিত ০)
বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২৬৫/৮ (তানজিম সাকিব ১৪*, মেহেদী ২৯*, নাসুম ৪৪, হৃদয় ৫৪, লিটন দাস ০, তানজিদ ১৩, এনামুল ৪, মিরাজ ১৩, সাকিব ৮০, শামীম ১)
ম্যাচসেরা: সাকিব ৮০ (৮৫) ও ১/৪৩।
ফল: ৬ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
Discussion about this post