নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি)। দীর্ঘদিনের এ বন্ধে সেশনজটের আশঙ্কায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরীক্ষামূলক অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
অনানুষ্ঠানিক এ কার্যক্রমে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই নিজেদের সমস্যার কারণে যুক্ত হতে পারেননি। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৪ মে) উপাচার্যের সঙ্গে বিভাগীয় প্রধানদের বৈঠক শেষে ঘোষণা দেওয়া হয় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে। উপাচার্য ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের পক্ষ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা আসার পর থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানা যায়, বেশক’টি বিভাগ গত ক’দিনে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি। সবার ধারণা ছিরো উপস্থিতির করুণ দশার যৌক্তিক কারণগুলো বিবেচনা করে বৃহস্পতিবারের বৈঠক শেষে এ কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা আসবে। কিন্তু সেদিন তেমন কোনো ঘোষণা না দিয়ে সবক’টি বিভাগে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়। যে কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে শারীরিক দূরত্ব মেনে অনলাইনেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান সমৃদ্ধ প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হওয়া শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
অনলাইনে প্রতিবাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের আলিসা মুনতাজ জানান, শহরের বাইরের এলাকাগুলোতে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে বসবাস করেন। যেখানে পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সুবিধা পাচ্ছেন না অধিকাংশ মানুষ, সেখানে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা-কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের ওপর একরকম চাপিয়ে দেওয়ার সামিল।
তিনি আরও জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের এসব দুর্দশার কথা চিন্তা করে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে আমরা প্রতিবাদের ঘোষণা দিচ্ছি। আগামী ১৮ মে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা একযোগে লিখিতভাবে নিজেদের দাবি সম্মিলিত ছবি নিজ নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের বিপক্ষে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা অমানবিকতার চিত্র সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরবো। এ জন্য আমরা সাংবাদিকদের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।
অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাকিব মাহামুদ জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও ওইরকম আধুনিকায়ন করা হয়নি, যে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আর যদিও করাও হয় সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কতোটা ভালো নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা সম্ভব হবে সেটাও চিন্তার বিষয়।
তিনি বলেন, এখনও অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে সব মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, আবার পাওয়া গেলেও তা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন নয়। সেসব প্রতন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা কিভাবে অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হবে। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলের। আবার মোবাইল কোম্পানিগুলো যে দামে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে তাতে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পক্ষে এভাবে পড়াশোনা চালানোটাও কঠিন। আর যে মাধ্যমে অধিকাংশরাই যুক্ত হতে পারবেন না সেখানে সেটি চালু করার পক্ষে আমরা নই।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম জানান, একটি এক ঘণ্টার অনলাইন ক্লাস করতে একজন শিক্ষার্থীর যে টাকা খরচ হচ্ছে সেটা দিয়ে নিম্নবিত্ত একটি পরিবারের একদিনের বাজার হয়। করোনাকালীন সময়ে কাজকর্ম না করতে পারায় দেশের সব মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এমন সময়ে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত জোরালোভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো।
এদিকে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম চলমান রাখার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বারবার তুলে ধরা হচ্ছে সেশনজট কমানোর যুক্তি, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে দ্রুতই সেশনজন কমানো যাবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা
Discussion about this post