বিশেষ প্রতিবেদক
২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে সেরা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের নিয়ম থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের কারণে এখন সেই নিয়ম বা সুযোগ কোনটাই আর নেই। তাই বিগত বেশ কয়বছরের ধারাবাহিকতায় এবছরও কোনো প্রতিষ্ঠানকেই সেরা প্রতিষ্ঠান বলা যাবে না। অবশ্য সেরা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন না করলেও ৫টি মানদণ্ডের মধ্যে কেবল একটি মানদণ্ডের (জিপিএ-৫) ভিত্তিতে এগিয়ে থাকা বেশ কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষাবোর্ড। তবে এই তালিকাকে কোনোভাবেই সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকা বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা।
শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন- প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীর সংখ্যার মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর শতকরা হার, মোট পরীক্ষার্থীর শতকরা পাসের হার, জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা, জিপিএ’র গড় এবং প্রতিষ্ঠানের মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, অতীতে এই পাঁচ মানদণ্ডের ভিত্তিতে সেরা প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু এখন আমরা কেবল একটি মানদণ্ড (জিপিএ-৫) বিচারে কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করি মাত্র। তাও তুলনার সুবিধার্থে। এটিকে কোনোভাবেই সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকা বলা যাবে না। কারণ, একটি মানদণ্ড দিয়ে কোনোভাবেই সেরা প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করা যাবে না। এছাড়া তালিকায় জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বিচারেই প্রতিষ্ঠানগুলো স্থান করে নিয়েছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও স্বাভাবিক ভাবে বেশি হবে। তাই এই একটি মাত্র মানদণ্ডের বিচারে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই শীর্ষ বা সেরা প্রতিষ্ঠান বলা যাবে না।
জিপিএ-৫ এর ভিত্তিতে বোর্ডের তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কলেজিয়েট স্কুল। অবশ্য, জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গত চার বছরও ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে ছিল।
এবার প্রতিষ্ঠানটির ৪৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৪৬৯ জন। পাশের হার ৯৯.৭৯ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৩৮ জন।
গতবার ৪৫৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করে ৪৫৬ জন। আর জিপিএ-৫ পায় ৪১১ জন।
এই সাফল্যের পেছনে স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাশ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে পড়া লেখা করে বলেই স্কুলের এ অর্জন। তবে, এই অর্জনে শিক্ষক ও অভিভাকদের ভূমিকাও রয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তালিকায় কলেজিয়েট স্কুলের পরই রয়েছে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়। গত তিন বছরও একই অবস্থানে ছিল স্কুলটি। স্কুলটির এবার ৪৪২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ পাসসহ ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গতবার ৩৯২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ পাসসহ ৩১২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়।
এরপরই রয়েছে নাসিরাবাদ সরকারি (বালক) উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলটির এবার ৪৬৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ পাসসহ জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০৩ জন। গতবছর স্কুলটির ৪৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করে ৪৫৯ জন। আর জিপিএ-৫ পায় ২৯৪ জন।
এরপরই অবস্থান ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। স্কুলটির এবার ৩৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ পাসসহ জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮৫ জন। গতবার স্কুলটির ৩২৫ জন ছাত্রীর মধ্যে পাস করে ৩২৪ জন। জিপিএ-৫ পায় ২৭১ জন।
তালিকায় এরপর রয়েছে বাওয়া স্কুল (বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ)। প্রতিষ্ঠানটির এবার মোট ৪৬২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮৪ জন। গতবার স্কুলটির মোট ৪৬৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করে ৪৬৫ জন। আর জিপিএ-৫ পায় ২৬৪ জন।
ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হক হেনরী ও নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলম হোসাইনী। প্রতিক্রিয়ায় এই দুই প্রধান শিক্ষক বলেন, ফলাফল ভালো হয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা থাকবে বলেও জানান তাঁরা।
আর ফলাফল নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ডা.খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিদা আক্তার। তিনি বলেন, ফলাফলে আমরা খুশি। ফল ভাল করার পেছনে পাঠদানে শিক্ষকদের আন্তরিকতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কঠোর পরিশ্রম রয়েছে। মোট কথা এ ফল শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন এই প্রধান শিক্ষক।
তালিকায় এরপরই অবস্থান করে নিয়েছে নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এবার প্রতিষ্ঠানটির ৫১৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৫১৭ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৫২ জন। এরপরই চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এবার প্রতিষ্ঠানটির ২৮৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৮৪ জন পাস করেছে। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০৪ জন। গতবার স্কুলটির ৩৩৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৩৫ জন পাস করে। আর জিপিএ-৫ পায় ২১৮ জন।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বিচারে তালিকায় স্থান করে নেওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে- চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চিটাগাং ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সিলভার বেলস গার্লস হাই স্কুল, হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, কক্সবাজার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, অপর্ণাচরণ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ ও ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
Discussion about this post