বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
মেধাবী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তামান্না ও তার পরিবারের পাশে ফের দাঁড়িয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জিএস গোলাম রাব্বানী। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবের পর এবং করোনা সংকটের মধ্যে শুক্রবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাকঁড়া ইউনিয়য়ের আলীপুর তাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে খোঁজখবর নেন। এসময় খাদ্য-সামগ্রী ও অর্থসহায়তা প্রদান করেন রাব্বানী।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড আইডিতে ডাকসু জিএস বলেন, অদম্য মেধাবী, বিষ্ময় বালিকা তামান্না নূরা; জন্ম থেকেই দু’টি হাত আর একটি পা নেই, এক পা দিয়ে লিখে পিইসি, জেএসসি এবং এসএসসিতেও বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-ফাইভ পেয়েছে।
রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় তামান্না, লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ আর দারুণ মেধা দেখে টিউশনি করে বহু কষ্টে সংসার চালালেও মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে দেন বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষক বাবা।
মেয়েও বাবা-মাকে নিরাশ করছে নাহ একদম, সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রেখেই এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার। ওহ, সুন্দর লেখার পাশাপাশি দারুণ ছবিও আঁকে আমাদের তামান্না।
আজ তামান্নাকে দেখতে ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। করোনার প্রাদুর্ভাব আর ওই এলাকায় আম্পান ছোবলে, এই দুর্যোগকালীন সময়ে ভালো নেই ওরা। দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভালোবাসার উপহার হিসেবে তামান্নার পরিবারের জন্য প্রায় তিন মাসের খাদ্যসামগ্রী, নগদ ৫ হাজার টাকা, দুটো করে শাড়ী-লুঙ্গি আর ছোট ভাইবোনের জন্য পোশাক দিয়ে এসেছি।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে আমার একান্ত অনুরোধে ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু ভাই এবং উপজেলা চেয়ারম্যান মনির ভাই তামান্নার বাড়ি থেকে স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার্থে ঝোপঝাড় কেটে মূল রাস্তা থেকে বাড়ি পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তা করে দিয়েছেন।
ইতিপূর্বে টি, আর-কাবিটা কর্মসূচীর আওতায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দুর্যোগ সহনীয় একটি ঘরও পেয়েছে তামান্না। ইনশাআল্লাহ, অনাগত আগামীতেও তামান্নার পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থাকবো। মানুষ মানুষের জন্য; জীবন জীবনের জন্য।
এছাড়া যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নে রঘুনাথনগর গ্রামে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘বাবর আলী সরদার বিশেষ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ে’ যান রাব্বানী। বিদ্যালয়টিতে উপজেলার নিম্নবিত্ত ও খেটেখাওয়া শ্রমজীবী পরিবারের ৪৯২ জন (ছাত্র- ২১৯, ছাত্রী-২৭৩) শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। তারা এখানে সম্পূর্ণ বিনাখরচে লেখাপড়া করছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি ‘এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিজ’ এ বিশেষ পারদর্শী হিসেবে প্রতিবন্ধীদের জন্য আয়োজিত বিশেষ অলিম্পিকে অংশ নিয়েও সাফল্যের নজির রেখেছে।
রাব্বানী বলেন, “বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজ খরচে শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন এবং বিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা সেই ২০১৪ সাল থেকে একদম বিনাবেতনে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই অসহায় শিশুদের পাঠদান করাচ্ছেন।
আর মূল সড়ক হতে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার ২ কিলোমিটার কাচাঁ সড়ক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চলাচলের অযোগ্য প্রায়। বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে এই দুর্যোগকালীন সময়ে অসহায় অবস্থায় থাকা মহৎপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকদের জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ১ মাসের খাদ্যসামগ্রী ও নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি।
জেলা প্রশাসক শফিকুল আরিফ ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি, তিনি রাস্তাটি দ্রুত পাকা করে দেয়ার কথা বলেছেন। আর দ্রুততম সময়ে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত করতে আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে।”
লিতুনের পাশেও রাব্বানী
জন্ম থেকেই দুই হাত নেই লিতুন জিরার। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে হাতের বাহু দিয়ে চোয়ালের সঙ্গে কলম চেপে লিখে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায় লিতুন। এবার অদম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জিএস গোলাম রাব্বানী।
আজ শনিবার (৬ জুন) যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে তাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে লিতুন ও তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেন ডাকসু জিএস রাব্বানী। এসময় তাদের খাদ্য-সামগ্রী ও অর্থসহায়তা প্রদান করেন তিনি।
লিতুন জিরা উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। লিতুনের বাবা হাবিবুর রহমান উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ আর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। মা জাহানারা বেগম গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে ছোট লিতুন। উপজেলার খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে লিতুন গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এ বিষয়ে ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড আইডিতে ডাকসু জিএস রাব্বানী বলেন, যশোর মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের অদম্য মেধাবী লিতুন জিরা, বর্তমান গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যায়নরত জিরার জন্ম থেকেই দুই হাত নেই, মুখ আর কনুইয়ের সাহায্যে লিখেই সে পিএসসি সমাপনী পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে।
লিতুন জিরাকে দেখতে ওর বাসায় গিয়েছিলাম, দেশরত্ন শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ভালোবাসার উপহার হিসেবে এক মাসের খাদ্যসামগ্রী ও নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে ছোট্ট লিতুন এগিয়ে যাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে, এই প্রত্যাশা। অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা।
Discussion about this post