নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা মহামারীতে গোটা বিশ্ব যেন আজ স্তব্ধ।তার মধ্যে একরকম হাঁপিয়ে উঠেছেন বিসিএস পরীক্ষায় বসা প্রার্থীরা। মনে হচ্ছে অপেক্ষার প্রহর কিছুতেই শেষ হতে চাইছে না।৩৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় সেই ২০১৭ সালের ২০ জুন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর। দুই মাস পর প্রাথমিক ফল ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। একই বছরের আগস্টে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রায় ১১ মাস পর ২০১৯ সালের জুলাইয়ে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয় এ বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার চার মাস এবং কার্যক্রম শুরু হওয়ার তিন বছর হতে চললেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল।
দ্রুত ফল প্রকাশের জন্য জোর প্রস্তুতি শুরু হলেও করোনা সংক্রমণ, করোনার সময়ে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে প্রায় সাত হাজার চিকিৎসক নিয়োগসহ বেশ কয়েকটি কারণে সেই ফল এখনো প্রকাশ করতে পারেনি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। এদিকে তিন বছরেও ফল প্রকাশিত না হওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েছেন অনেকে। এদিকে আগামী ২০ জুন তিন বছর পূর্ণ হবে ৩৮তম বিসিএসের। তাই ৩৮তম বিসিএসের ফল দ্রুত প্রকাশের জন্য পিএসসির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বেশ কিছু কারণে ৩৮তম বিসিএসের ফল দিতে দেরি হচ্ছে। এর মধ্যে বিসিএসে দুজন (ক্ষেত্রবিশেষে তিন) পরীক্ষকের খাতা মূল্যায়ন, ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের কার্যক্রম সম্পন্ন, অধিক স্বচ্ছতার জন্য ১২ পরীক্ষার্থী নিয়ে ভাইভা বোর্ড গঠনের কারণে বিসিএসের ফল প্রকাশে দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছে পিএসসি। পিএসসির ওই সূত্রের খবর, মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৩৮তম বিসিএসের ফল প্রকাশে জোর প্রস্তুতি শুরু হলেও করোনা সংক্রমণসহ বেশ কয়েকটি কারণে পরে সে কার্যক্রম শ্লথ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে এই বিসিএস থেকে বিভিন্ন ক্যাডারে প্রায় ৩০০ পদ বাড়াতে চিঠি দেয় জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়। ফলে ফের নতুন করে কাজ শুরু করতে হয় পিএসসিকে। এ ছাড়া পরে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে সাত হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করতে হয়েছে পিএসসিকে। এদিকে ৩৮তম বিসিএসের ফল প্রকাশের জন্য গঠিত সাবকমিটির বেশির ভাগ সদস্য ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব হওয়ায় সাবধানতা অবলম্বন করে কাজ করতে হচ্ছে কমিটিকে। করোনার সময়ে সাবকমিটি ফল প্রকাশের জন্য পিএসসির কাছ থেকে আরো কিছুদিন সময় চেয়েছে বলে পিএসসির সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনেক দিন ধরে একটি আশা নিয়ে অপেক্ষা করছি। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও এখনো চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হলো না। আমরা প্রায় ১০ হাজার ফলপ্রত্যাশী এ নিয়ে হতাশার মধ্যে সময় কাটাচ্ছি, যা আমাদের ব্যক্তিগত ও মানসিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যে অবস্থা দেখছি তাতে ফল প্রকাশের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। আবার ফল প্রকাশের পর গেজেট ও পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে চলে যাবে আরো ছয় মাসের বেশি। ফলের এই দীর্ঘসূত্রতা অন্যান্য চাকরির নিয়োগের প্রস্তুতিতেও বাধা সৃষ্টি করছে।’
এ ব্যাপারে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘সব কিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় সপ্তাহেই আমরা ফল প্রকাশ করতে পারতাম। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পিছিয়ে যেতে হয়েছে। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ফল প্রকাশ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের ১৩ হাজার জনের মৌখিক পরীক্ষা নিতে হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাত হাজার জনকে নিয়োগ দিতে হয়েছে। এর বাইরেও আমাদের অনেক কাজ করতে হচ্ছে। সব কিছু মিলে এই মহামারিতেও আমরা বসে নেই।’
ফলপ্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। দেশ ও জাতি একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে। এই মহামারিতে ইচ্ছা থাকার পরও আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো সব কিছু শেষ করা সম্ভব নয়। বিসিএসের ফল প্রকাশের জন্য একটি সাবকমিটি করা হয়েছে। তাদের একটু সময় দিতে হবে। এই ক্রান্তিকালে সবাইকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’
Discussion about this post