নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্য উপবৃত্তি হিসেবে পাঠানো ১০০ কোটিরও বেশি টাকা সংশ্নিষ্ট অভিভাবকদের হিসাব নম্বরে পড়ে আছে। তারা এসব টাকা তুলছেন না। না তোলার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে জমে জমে এই পরিমাণ অর্থ ওইসব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। এতে এই অভিভাবকরা প্রকৃত সুবিধাভোগী কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন খোদ উপবৃত্তি প্রকল্পের কর্মকর্তারাই। উপবৃত্তির সুবিধাভোগী অভিভাবকদের তালিকা মাঠ পর্যায়ে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা তৈরি করে থাকেন। পড়ে থাকা এই বিপুল অর্থ আগামী ২৫ জুনের মধ্যে অভিভাবকরা না তুলে নিলে তা সরকারি কোষাগারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন `প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পে`র (তৃতীয় পর্যায়) আওতায় সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ূয়া এক কোটি ৩০ লাখ শিশুকে নিয়মিত উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এক কোটি ২১ লাখ পরিবার এই সুবিধা পাচ্ছে। প্রতি তিন মাসে এক কিস্তি হিসেবে বছরে মোট চার কিস্তিতে উপবৃত্তির অর্থ সংশ্নিষ্ট শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মুঠোফোনে রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়।
এ অবস্থায় `প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পে`র পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. ইউসুফ আলী ১৬ জুন সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে কড়া ভাষায় একটি চিঠি লিখেছেন। এতে তিনি বলেন, `স্বল্প সংখ্যক অভিভাবকের মোবাইল অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন কিস্তিতে উপবৃত্তির অর্থ পাঠানো হলেও তা অলসভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এসব অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো অর্থ তোলা হচ্ছে না। উল্লিখিত অ্যাকাউন্টগুলো প্রকৃত সুবিধাভোগী অভিভাবকদের নয় বলে প্রতীয়মান। আগামী ২৫ জুনের মধ্যে উত্তোলনের প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। উল্লিখিত
তারিখের পর অনুত্তোলিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। এরপর অভিভাবক কর্তৃক অনুত্তোলিত অর্থের আর কোনো দাবিনামা গ্রহণ করা হবে না।`
এ বিষয়ে জানতে চাইলে `প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পে`র পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. ইউসুফ আলী বুধবার বলেন, `আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি শুধু গত বছরের জুন পর্যন্ত অনুত্তোলিত অর্থ ৫৭ কোটি টাকা। এ বছরের জুন পর্যন্ত মিলিয়ে তা ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত কেউ কেউ উপবৃত্তির টাকা তোলেননি। তাই তারা আসলেই প্রাথমিকের অভিভাবক কিনা, তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।`
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, `প্রকৃত অভিভাবকরাই শুধু উপবৃত্তির টাকা পাবেন। যদি তালিকায় সুবিধাভোগীর বাইরে কেউ থেকে থাকে, তার দায় সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের নিতে হবে।`
Discussion about this post